কৃষি প্রতিক্ষণ ডেস্কঃ চর কুকরি-মুকরির , মেঘনা নদীর মোহনায় চারিদিকে জলরাশিদ্বারা বেষ্টিত প্রমত্তা মেঘনার উত্তাল ঢেউয়ে পলি জমতে জমতে চর কুকরি-মুকরির জন্ম সাগরের কোল ঘেষে জন্ম নেওয়ায় কুকরি-মুকরিকে অনেকে স্বপ্নের দ্বীপ হিসেবে আখ্যায়িত করেছেন। সাগরের উত্তাল ঢেউর গর্জন, নির্মল বাতাস, বাহারী ম্যানগ্র্যোভ বন, রাস্তার পাশে সারি সারি গাছ, নারিকেল বাগান আর বালুর ধুম নিয়ে মানব সৃষ্ট অপরুপ প্রকৃতির সাজে সাজানো এক জনপদ ভোলার চরফ্যাশনের চর কুকরী-মুকরী দ্বীপ।
পর্যটন কেন্দ্র হিসাবে গড়ে তোলার দীর্ঘ প্রতিক্ষার পর প্রাচীনতম (ভোলা জেলার ৪ শত বছর পূর্বের জেগে উঠা চর) এ জনপদটিতে নতুন করে আধুনিকতার ছোঁয়া পেয়েছে। পর্যটক ভবন, সোলার ভিত্তিক ২ মেঘাওয়াট বিদ্যুৎ প্লান্ট উৎপাদন, সাবেক বন গবেষণা কেন্দ্র সহ বিভিন্ন প্রকল্প অনুমোদন হওয়ায় পর্যটনের পথে আরেক ধাপ এগিয়ে দেশী বিদেশী পর্যটকদের সহজে আকর্ষিত করতে পারবে এ জনপদটি। প্রায় ৯ কোটি ৩৬ লাখ টাকা ব্যয়ে আধুনিক রেস্ট হাউজ কাজ শেষ পর্যায়ে। তিন তলা বিশিষ্ট রেস্টহাউজে ভিআইপি, ভিভিআইপি সহ ২০টি আবাসিক রুম রয়েছে। এছাড়াও প্রশিক্ষণসভা, সেমিনার ও ওয়ার্কসপ কক্ষ রয়েছে। থাকবে নিজস্ব জেনারেটর ও বিদ্যুৎ এবং সুপেয় পানির ব্যবস্থা। দেশী-বিদেশী পর্যটকদের সুবিধার্থে এসব কার্যক্রম এখন শেষ পর্যায়ে।
বন ও পরিবেশ মন্ত্রণালয় দুটি প্রকল্প বান্তবায়ন উদ্যোগ নিয়ে আধুনিক পর্যটক ভবন নির্মাণও বনের পাখি হরিণ সহ বিভিন্ন প্রাণী দেখার জন্য টাওয়ার নিমার্ণাধীন রয়েছে। গত ২২ জুন বন ও পরিবেশ মন্ত্রণালয়ের উপমন্ত্রী আবদুল্যাহ আল ইসলাম জ্যাকব (এমপি) জেলা আওয়ামী লীগের সাংগঠনিক সম্পাদক মাইনুল ইসলাম বিল্পব, ভোলা এলজিইডির নির্বাহী প্রকোশলী কাজের অগ্রগতি পরিদর্শন করেন। এছাড়া ২ মেঘাওয়াট মিনি পাওয়ার প্লান্ট তৈরির জন্য রহিম আফরোজ সোলার কোম্পানীর ব্যবস্থাপনা পরিচালক ও বিপনন বিভাগের প্রধান পরিদর্শণ করেন।
বিপনন বিভাগের প্রধান ইশতিয়াক আহম্মেদ বলেন, আমরা শিগগিরই সোলার ভিত্তিক ২ মেগাওয়াট বিদ্যুৎ উৎপাদন প্রক্রিয়ার কাজ শুরুকরবো। এতে দেশ-বিদেশ থেকে আসা পর্যটক সহ স্থানীয় বাসিন্দা বিদ্যুৎ সুবিধা পাবে। চর কুকরী-মুকরী রেঞ্জ কর্মকর্তা সাজেদুল আলম বলেন, চলতি বছরেই পাখি পর্যবেক্ষণ কেন্দ্র চালু হলে টাওয়ারে থেকে বনের মধ্যের অতিথি পাখি দেখা যাবে। অন্যদিকে পাখি পর্যবেক্ষণ কেন্দ্রে চারপাশে ঘুরতে আসা মানুষদের বসার স্থান হিসেবে বেঞ্চ ও ছাতার ব্যবস্থা রয়েছে।
তিনি আরো বলেন, ইতিমধ্যে এটি মানবসৃষ্ট বনে রুপান্তিত হয়েছে। বনে আরো কিছু সংখ্যক প্রাণী আনার প্রক্রিয়া চলছে। আগামী কয়েক বছরেই সুন্দরবনের মতই কুকরী-মুকরী পূণ্যতা পাবে। এছাড়াও বনের জীব বৈচিত্রকে বাঁচিয়ে রাখতে বাহারী প্রজাতির বৃক্ষ-তরুলতা রোপনের উদ্যোগ নিয়েছে বন গবেষণা কেন্দ্র।
বিভিন্ন সূত্র জানায়, বঙ্গোপসাগরের কূল ঘেষা এ জনপদ কুকরী-মুকরী ৭০ সালের ঘূর্ণিঝড় পরবর্তি সময়ে বন বিভাগ বৃক্ষ রোপন শুরু করে। ঝড় বন্যায় মানুষের সাময়িক আশ্রয় নেয়ার জন্য সেটি আজ কুকরীর এক সবুজ বিপ্লাবন হয়ে দাঁড়িয়ে সেই থেকে এ জনপদে ঝড়-জলোচ্ছাসসহ নানা প্রাকৃতিক দুর্যোগ বৃক্ষের সবুজ দেয়াল হিসাবেই রক্ষা করে আসছে। বর্তমানে ১৩ হাজার ৯ শত ৪৬ একর নিয়ে গড়ে উঠেছে প্রকৃতির সবুজ বেস্টুনী।
কুকরী মুকরী নদী পথে প্রবেশদ্বারে গেলে মন জুড়িয়ে যাবে পর্যটকদের। এখানেই রয়েছে কাকড়া,বাইন, কেওয়া ও গেওয়াসহ নানা প্রজাতির বৃক্ষরাজী। এসব গাছের সংখ্যা সরকারী হিসেবে ২ কোটি ৫০ লাখের অধিক হলেও প্রকৃত পক্ষে তা ছাড়িয়েছে অনেক আগেই। বনে রয়েছে বিভিন্ন প্রজাতির প্রায় ৫০ হাজার হরিণ, বানর, ভাল্লুক, বন মোড়কসহ বিভিন্ন ধরনের বৈচিত্রময় প্রাণী ও উদ্ভিদ। হরিণের মিঠা পানির সঙ্কট দুর করতে একটি পুকুর তৈরি করা হয়েছে, আরো বেশ কিছু পুকুর তৈরির কাজ হাতে নেয়া হয়েছে। চর কুকরী মুকরী ইউনিয়নের চেয়ারম্যান অধ্যাপক আবুল হাসেম মহাজন বলেন, বিভিন্নদাতা দেশের দাতা সহ দেশীয় অনেক এমপি ইতিমধ্যে এ পর্যটন কেন্দ্র ঘুরে গেছেন।
সরেজমিন ঘুরে দেখা গেছে, সাগরের বুক চিরে জেগে উঠেছে বড় বড় বিচ্ছিন্ন সবুজের দ্বীপ। সেখানে লাখ লাখ গাছের সমারোহ রয়েছে। শীত মৌসুমে বিভিন্ন প্রজাতির অতিথি পাখির কলতানিতে মুখরিত হয়ে উঠে এসব অঞ্চলের চারপাশ। কুকরীর বালুর ধুম ও নারিকেল বাগান মুগ্ধ করে ভ্রমণপিপাসু মানুষকে। ছোট ছোট খাল, এর দু’পাড়ে দিয়ে বৃক্ষের সমারোহ। নৌকা ঘুরে প্রাণ জুড়িয়ে যায় বিনোদন প্রিয় মানুষের। এখানে বসেই সূর্যদয় ও সূর্যাস্তর সৌন্দয্য উপভোগ করা যায়। কুকরীতে বর্তমানে বিদ্যুৎ না থাকলেও রাতে কুকরী যেন সৌর বিদ্যুতের আলোয় আলোকিত হয়ে উঠে।
কুকরী-মুকরী রেঞ্জ কর্মকর্তা সাজেদুল আলম বলেন, চর পাতিলা, পশ্চিম চর দিঘল, চর দিঘল, চর আলীম, চর জমিনসহ বেশ কিছু চর থাকলেও আরো নতুন দুটি চর জেগে উঠছে কুকরী-মুকরীতে। সেখানেও বৃক্ষ রোপনের পরিকল্পনা হাতে নেয়া হয়েছে। মানুষকে মুগ্ধ করার পাশাপাশি ২য় সুন্দর বনের পথে এগুচ্ছে কুকরী-মুকরী।
স্থানীয় শাহে আলম, সাগর ও জুয়েল বলেন, শীত মৌসুমে কুকরীতে শিক্ষা প্রতিষ্ঠানসহ অন্তত ৫০/৭০টি পিকনিক দল ঘুরতে আসে। তারা পিকনিক করে চলে যায়। এখানকার সৌন্দর্য্য দেখে অনেকেই মুদ্ধ।
কুকরী-মুকরী ইউপি চেয়ারম্যান আবুল হাসেম মহাজন বলেন, দেশের মধ্যে কুকরী-মুকরী একটি পরিচিত নাম। এখানে দেশ বিদেশ থেকে মানুষ ঘুরতে আসেন। কিন্তু আধুনিক সুবিধার অভাবে তারা প্রকৃতির পুরোপুরি তৃপ্তি গ্রহণ করতে পারছেন না। এখানে আধুনিক হোটেলসহ থাকা-খাওয়ার ব্যবস্থা শীঘ্রই হয়ে গেলে আরো বেশি পর্যটকদের ভিড় জমবে এমটাই আশা করেন তিনি।
সুত্রঃ alokitobangladesh.com / কৃপ্র/ এম ইসলাম