আবু নোমান ফারুক আহম্মেদঃ গোলাপ চাষে ক্যাপ প্রযুক্তি একটি সফল ও জনপ্রিয় প্রযুক্তি হওয়া সত্ত্বেও বাংলাদেশে এর ব্যবহার নেই বললেই চলে। যে গোলাপ ফুলটির দাম বর্তমানে মাত্র দুই টাকা, ক্যাপ প্রযুক্তি ব্যবহারের ফলে সেই ফুলটির গুনগতমান বৃদ্ধি পাওয়ায় এর দাম কমপক্ষে ১০ টাকায় উন্নিত করা সম্ভব। শুধু তাই নয়, সেটি আর্ন্তজাতিক বাজারে রপ্তানীর উপযোগি হয়। আর এই প্রযুক্তি ব্যবহারের জন্য ফুল প্রতি খরচ হয় মাত্র ৫০ পয়সা।
আর্ন্তজাতিক বাজারে চীনে’র ফুলের চাহিদ ব্যাপক। উন্নত মানের গোলাপ উৎপাদনের জন্য সেখানকার ফুলচাষিরা নিয়মিত রোজক্যাপ ব্যবহার করেন। রোজক্যাপ হলো স্থিতিস্থাপকতা গুণসম্পন্ন প্লাস্টিকের এক ধরনের ক্যাপ। গোলাপের কুঁড়ি বের হওয়ার পর ক্যাপটি ওই কুঁড়িতে পরিয়ে দিতে হয়। এতে গোলাপ কুঁড়িটি সুরক্ষিত হয় এবং কুঁড়িটি পোকা-মাকড়ের উপদ্রব ও প্রাকৃতিক সব ধরনের বিপর্যয় থেকে রক্ষা পায়। এ ক্যাপটি স্থিতিস্থাপক হওয়ায় কুঁড়িটি বড় হওয়ার সাথে সাথে ক্যাপটিও বাড়তে থাকে। এ কারণেই ক্যাপের ভেতর কুঁড়িটি একটি উন্নতমানের পূর্ণাঙ্গ গোলাপ হিসেবে প্রস্ফুটিত হয়। গোলাপের বাহিরে এ ক্যাপটি থাকায় ফুল সংগ্রহ, পরিবহন এবং বাজারজাতকরনের সময় ফুল কোনভাবেই ক্ষতিগ্রস্থ হয়না ।
বাংলাদেশে উন্নতমানের গোলাপ উৎপাদনের জন্য এখনো রোজক্যাপ নামে এই প্রযুক্তি ব্যবহারের বিষয়টি ফুলচাষিদের অজানা। এ কারণেই দেশে এই ক্যাপ তৈরি হয় না এবং আমদানিরও ব্যবস্থা নেই। সম্প্রতি কয়েকজন উদ্দ্যেক্তা চীন থেকে কিছু ক্যাপ এনে ব্যবহার করে শতভাগ সুফল পেয়েছেন। সুফল পেয়ে অনেকেই এখন প্রযুক্তি ব্যবহারে আগ্রহী হয়ে উঠেছেন।
রোজক্যাপ ব্যবহার করে গোলাপ চাষে লাভবান হচ্ছেন গদখালির সরদার নার্সারি। এই নার্সারির মালিক রুস্তম আলী সরদার জানান, আগে যে ফুল ফুটত সেগুলো প্রতিটি বিক্রি হতো দুই টাকায়। এখন সেই ফুল এত উন্নত মানের হচ্ছে যে তার দাম উঠেছে ১০ টাকায়। শুধু তা-ই নয়, এ ফুলের সবটাই রফতানি মানের। তবে এই ক্যাপ আমদানি না হওয়ায় চাহিদা অনুযায়ী পাওয়া যাচ্ছে না। ফুলচাষিদের কল্যাণে বিশেষ করে ফুল রফতানির মাধ্যমে বৈদেশিক মুদ্রা অর্জনের স্বার্থে রফতানিযোগ্য ফুল উৎপাদনের জন্য তারা রোজ ক্যাপ আমদানির ব্যবস্থা গ্রহণের দাবি জানান।
ফুল চাষের ক্ষেত্রে বাংলাদেশে সবচেয়ে বড় সমস্যা হলো ফুল চাষের বিষয়ে অভিজ্ঞতাসম্পন্ন কৃষি কর্মকর্তা না থাকায় কৃষি বিভাগের কাছ থেকে কোনো পরামর্শ পাওয়া যায় না। গত তিন দশক ধরে ফুলের যে আবাদ হচ্ছে তা অনেকটা অনুমানের ওপর নির্ভল করে। আন্দাজে কাজ করতে গিয়ে অনেক সময় ফুলচাষীরা ক্ষতির শিকার হন। দেশের গন্ডি পেরিয়ে বিদেশে বাংলাদেশের ফুলের বাজার তৈরি করার যথেষ্ট সূযোগ রয়েছে তবে এর জন্য প্রয়োজন নিত্য নতুন প্রযুক্তি ব্যবহার ও আর্ন্তজাতিক গুনগতমানসম্পন্ন ফুল উৎপাদন। এক্ষেত্রে রোজক্যাপ প্রযুক্তি নিঃসন্দেহে একটি ভালো উদ্দ্যেগ।
উৎপাদিত ফসল বা পণ্যের মূল্য সংযোজনের জন্য নতুন নতুন প্রযুক্তি গ্রহনের কোন বিকল্প নেই। মুক্তবাজার অর্থনীতির এই সময়ে দেশীয় কিংবা আর্ন্তজাতিক বাজারে টিকে থাকার জন্য নিত্য নতুন প্রযুক্তি গ্রহন অপরিহার্য। আমাদের দেশে বিভিন্ন দিবস ও অনুষ্ঠানে এখন ফুলের ব্যবহার প্রায় অপরিহার্য। আর তাই চাহিদার সাথে সাথে দেশে ফুল চাষের এলাকা প্রতি বছর বৃদ্ধি পাচ্ছে। বর্তমানে ঢাকায় বিদেশ থেকে আমদানী করা ফুলের ব্যবসাও বেশ জমজমাট। বেসরকারী উদ্দ্যোগে বিদেশ থেকে গোলাপের ক্যাপ আমদানী করে দেশে গোলাপ চাষকে উৎসাহিত করা সম্ভব। একই সাথে বিভিন্ন সরকারী নার্সারী ও উদ্যানতত্ত্ব বিভাগ এ প্রযুক্তি সম্প্রসারণে কার্যকরী পদক্ষেপ নিতে পারে।
লেখক: সহযোগী অধ্যাপক, উদ্ভিদ রোগতত্ত্ব বিভাগ, শেরেবাংলা কৃষি বিশ্ববিদ্যালয়, ঢাকা।
কৃপ্র/ এম ইসলাম