কৃষি প্রতিক্ষণ ডেস্কঃ কৃষকের বন্ধু হিসেবে পরিচিত পাখি ‘ দোচরা’। ক্ষতিকর পোকামাকড়, ইঁদুর ইত্যাদি খেয়ে কৃষকের উপকার করে। দেশে পরিযায়ী হয়ে আসে। আকারে বেশ বড়োসড়ো।এরা সাধারণত উপকূলীয় অঞ্চলের মিঠা পানির অগভীর জলাশয়ে কিংবা মোহনাতে বিচরণ করে। বিশেষ করে জলজ উদ্ভিদ অথবা কৃষি জমিতে একাকি, জোড়ায় কিংবা ছোটদলে ঘুরে বেড়ায়। ঘন উদ্ভিদ সমৃদ্ধ জলাশয় এড়িয়ে চলে। স্যাঁতসেঁতে তৃণভূমিতে শিকার খোঁজে। শিকার খুঁজতে গিয়ে হাঁটু জলের বেশি নামে না। বৈশ্বিক বিস্তৃৎতি বাংলাদেশ, ভারত, মিয়ানমার, মালয়েশিয়া, কম্বোডিয়া, ভিয়েতনাম, লাওস ও থাইল্যান্ড পর্যন্ত।
এদের স্ত্রী-পুরুষ পাখির চেহারায় তেমন তফাৎ নেই। মাথার উপর আঁচিল লাল প্যাঁচ। কাঁধ সাদা প্যাঁচের সঙ্গে গাঢ় বাদামি। পিঠ বাদামি। ডানা ও লেজ নীল-সবুজের সঙ্গে কালোর মিশ্রণ। লেজ খাটো। দেহতল খয়েরি-বাদামি। ঠোঁট নিচের দিকে কাস্তের মতো বাঁকানো। লম্বা পা লালচে গোলাপি। অপ্রাপ্তবয়স্কদের ক্ষেত্রে রঙে সামান্য তফাৎ রয়েছে। প্রধান খাবার জলজ পোকামাকড়, ইঁদুর, কেঁচো, ব্যাঙ, ছোট সাপ, পচা মাংস টিকটিকিসহ বিভিন্ন ধরনের সরীসৃপ এবং মাঝে মধ্যে মাছও শিকার করে। কালো দোচরার প্রজনন মৌসুম অক্টোবর। অঞ্চলভেদে সময়ের হেরফের দেখা যায়। জলাশয়ের কাছাকাছি গাছের উঁচু ডালে সরু কাঠি, নলখাগড়া বা ডালপালা দিয়ে বাসা বাঁধে।
এই পৃথিবীতে অগুনতি প্রজাতির পাখি পাওয়া যায়। তাদের কারোর বর্ণের সম্ভার চোখ জুড়িয়ে দেওয়ার মতো, কারো কণ্ঠের গান মন মাতিয়ে দেয়। কিন্তু আজ যে দুটি পাখির সম্পর্কে এখানে জানব তারা রঙের দিক থেকে নেহাতই সাদামাটা। কিন্তু এদেরও কিছু বিশেষত্ব আছে। আসলে এই পৃথিবীর প্রত্যেকটি জীবেরই কিছু নিজস্ব গুণ আছে। তারা কেউ বা অতি ছোটো আবার কেউ পরিচিত সুবিশাল আকৃতির জন্য।
প্রথমেই আসব সাদা আইবিস বা কাস্তেচেরা বা সাদা দোচরা প্রসঙ্গে। Oriental White Ibis কে Black-headed Ibis ও বলা হয়ে থাকে, বাংলা নাম কাস্তেচেরা বা সাদা দোচরা। এদের খোলা মাঠে একসাথে জোট বেঁধে খাবারের খোজ করতে দেখা যায়। এদের গায়ের রঙ ধবধবে সাদা যদিও ন্যাড়া মাথা, গলা ও পায়ের রঙ কালো। আকারে মোটামুটি ৭৫ সে.মি. মতো হয় এবং পা গুলি যথেষ্ট লম্বা ও শক্তপোক্ত হয়। এদের ঠোঁট শক্ত কালো এবং কাস্তের মতো সামনের দিকে বাঁকানো। এরা খুব দ্রুত এবং সোজা ভাবে উড়তে পারে। গলায় স্বর উৎপাদনকারী পেশীর অভাব থাকায় বেশী জোরে ডাকতে পারেনা, কেবল মাত্র প্রজনন কালে এবং সীমা নির্ধারণের জন্য মৃদু শব্দ বের করে। প্রজনন কালে ঘাড়ে ও ডানার কাছে ধূসর রঙের আভা দেখা যায় এবং গলার নিচের অংশে বাহারি পালক গজায়। এরা জল জমা ধান মাঠের মধ্যে থেকে শামুক, ছোটো মাছ, ব্যাঙ এবং ছোটো বড় পোকামাকড় ধরে সংগ্রহ করে। এরা বেশ সামাজিক পাখি, শামুক-খোলদের মতো কলোনি তৈরি করে গাছের ওপরে বাসা করে এবং প্রজনন ঋতুতে ২-৪টি ডিম পাড়ে।
কালো আইবিসেরও অনেক নাম। Indian Black Ibis বা শুধু Black Ibis ছাড়াও আরেকটি নাম হল Red-napped Ibis, এদের বিজ্ঞান সন্মত নাম Pseudibis papillosa আর বাংলা নাম কালো কাস্তেচেরা বা কালো দোচরা। বর্ধমান জেলার অন্ডালের ফাঁকা মাঠ থেকে ১০ই আগস্ট ২০১৩ তারিখে প্রথম এই পাখিটির সন্ধান পাই এবং ছবি তুলতে সক্ষম হই। আকারে ও দৈহিক গঠন সাদা আইবিসের মতোই হয় তবে দেহের রঙের পার্থক্য লক্ষণীয়, যা থেকে খুব সহজে পার্থক্য করা যায়। এদের গায়ের রঙ ঘন কালো তবে কাঁধের কাছে সাদা রঙের বড় ছোপ দেখা যায়।
কালো রঙের ন্যাড়া মাথার ঠিক ওপরে লাল রঙের ত্রিকোণাকার ছোপটি দেখে দূর থেকে এদের চেনা যায়। বাঁকানো চঞ্চুটির রঙ হলদেটে ধরণের হয় আর পায়ের রঙ পোড়া ইঁটের মতো। ধান জমির পাশের খোলা শুষ্ক জমিতে এদের একসাথে দল বেঁধে বা একা একা থাকতে দেখা যায়। অন্যান্য আইবিসদের বিপরীতে এরা জলা জায়গার পরিবর্তে শুকনো খোলা মাঠে থাকতে বেশী পছন্দ করে। এছাড়াও এরা সাদা আইবিসদের মতো অন্য জাতের পাখিদের সাথে বাসা বাঁধে না, বরং নিজেদের দু-তিনটি দল বাসা বেঁধে থাকে। গাছের ওপর বড় বাটির মতো আকারের বাসা বানায় তবে শকুন বা ঈগলের পরিত্যক্ত বাসাতেও থাকতে দেখা যায়।
প্রজনন কালে ২-৮টি ডিম পাড়ে। এরাও সচরাচর উঁচু স্বরে ডাকেনা তবে কখনো কখনো ওড়ার সময় নাকিস্বরে চিৎকার করে। সাদা আইবিসদের মতো এরাও দ্রুত এবং অনেক উঁচুতে উড়তে পারে। এদের খাদ্যাভাসে আছে শস্যদানা, ছোটো পোকা, ছোটো সাপ, গিরগিটি ধরণের জীব। যদিও এরা পশ্চিমবঙ্গে বেশ ভালো সংখ্যায় আছে তবু দিন দিন চাষের জমি ও খোলা জমির পরিমাণ কমে আসার জন্য চিন্তার কারণ দাঁড়িয়েছে। আশাকরি এদের আমরা শকুনের মতো হারিয়ে ফেলব না!
কৃপ্র/এম ইসলাম