কৃষি প্রতিক্ষণ ডেস্কঃ উৎপাদন খরচ বেশি, তাই স্পেনে জাফরানের চাষ কমেই গিয়েছিল। কিন্তু ক্রেতাদের কাছে ভালো জাফরানের কদর আছে, কম দামি মসলার নয়। চাষিরা সেটা বুঝতে পেরে আবার আবাদ শুরু করেছেন। রাজধানী মাদ্রিদ থেকে প্রায় ২০০ কিলোমিটার দূরের গ্রাম মিনায়া। সেখানে তিনটি লম্বা টেবিল ঘিরে বসে প্রবীণ নারীরা কাজ করছিলেন: জাফরানের বেগুনি ফুল থেকে উজ্জ্বল লাল রঙের গর্ভমুণ্ড বাছাই। পরে সেগুলো শুকিয়ে বিক্রি করবেন।
সুগন্ধি পাপড়ি ছিঁড়ে সেই লাল গর্ভমুণ্ড বের করে আনতে হয়। প্রতিদিন ঘণ্টার পর ঘণ্টা এই কাজ করতে করতে হাতের আঙুল কালচে হয়ে গেছে ৭৮ বছর বয়সী সেগুন্দা গাসকনের। একা নন, এই দলে তাঁর সঙ্গী প্রায় ৫০ জন। তাঁদের অনেকেই অবসরপ্রাপ্ত। তবু কাজে হাত লাগান বছরের এই সময়টায়, কাস্তিয়া-লা মানচা অঞ্চলের ছোট্ট গ্রামটিতে। ৮৩ বছর বয়সী দোলোরেস নাভারো তো কাজ করতে করতে লোকগীতিও ধরেন। সুরে সুরে বলেন সেই লোকটির কাহিনি, যিনি ১৯৬০-এর দশকে চড়া দামে জাফরান কিনতে মিনায়া গ্রামে গিয়েছিলেন।
তারপর কৃষিতে আধুনিকায়ন হলো। আর তাতে অনেক ফসলের দাম গেল পড়ে। জাফরান চাষে যন্ত্র নয়, কায়িক শ্রমই ভরসা। স্পেনে এ রকম শ্রমিকের অভাব। তাই এই মসলার চাষ চালু রাখাটা কঠিন। ২০ শতকের শুরুর দিকে বছরে অন্তত ১০০ টন জাফরান উৎপাদন হতো। কিন্তু দেশটিতে গত কয়েক দশকে এর পরিমাণ অনেক কমে আসে। সরকারি হিসাবে ২০১৪ সালে উৎপাদন হয়েছে প্রায় দুই টন মাত্র। সেই তুলনায় ইরানে জাফরানের ফলন অনেক বেশি। কারণ, সেখানে শ্রমশক্তি তুলনামূলক সস্তা, আর ফসলের ক্ষতি কম। বিশ্বের ৯৩ শতাংশ জাফরানের জোগান দেয় ইরান। ২০১৫ সালে সেখানে উৎপাদনের পরিমাণ ছিল ৩৫০ টন। বাকি ৭ শতাংশের জোগান দেয় যৌথভাবে স্পেন, মরক্কো ও কাশ্মীর। স্পেনের গ্রামাঞ্চলে দিনমজুরেরা ফুল সংগ্রহের জন্য কেজিপ্রতি সাড়ে পাঁচ মার্কিন ডলারের মতো পান। প্রতি গ্রাম মসলার দাম পড়ে চার ডলারের বেশি।
২০০৮ সালে স্পেন বড় ধরনের অর্থনৈতিক মন্দার কবলে পড়েছিল। সেটা মিনায়ার জাফরান ব্যবসায়ীদের সেভাবে ছুঁতে পারেনি। তাই মসলাটিকে তাঁরা ‘লাল সোনা’ মনে করেন। নতুন অনেক কৃষক এখন এই অর্থকরী ফসল উৎপাদনের দিকে ঝুঁকছেন।
সুত্রঃ প্রথম আলো / কৃপ্র/এম ইসলাম