কৃষি প্রতিক্ষণ ডেস্কঃ প্রাকৃতিক সোন্দর্যের লীলাভূমি মৌলভীবাজারের শ্রীমঙ্গল। পাহাড়, অরণ্য, হাওড় আর সবুজ চা বাগান পরিবেষ্টিত এই শ্রীমঙ্গল। চা শিল্পের জন্য শ্রীমঙ্গলের সুনাম বিশ্বব্যাপী। পাহাড়বেষ্টিত এ উপজেলার চারদিকে চিরসবুজের সমারোহ। দু’টি পাতা একটি কুঁড়ি দেশ হিসেবেও শ্রীমঙ্গলের রয়েছে ব্যাপক পরিচিতি। ৪২৫ দশমিক ১৫ বর্গ কিলোমিটার আয়তনের এই জনপদের সঙ্গে সারা দেশের রেল ও সড়কপথে রয়েছে উন্নত যোগাযোগ ব্যবস্থা।
শ্রীমঙ্গলে রয়েছে ৪৪ টি চা বাগান। সবুজের নির্সগভরা এসব চা বাগানের নয়নাভিরাম প্রাকৃতিক সৌন্দর্য প্রতিনিয়তই পর্যকটদের আকৃষ্ট করছে। আর শ্রীমঙ্গল শহর মূলত চা শিল্প কেন্দ্রিক হওয়ায় একে চায়ের রাজধানীও বলা হয়ে থাকে। এসব চা বাগানগুলোতে কর্মরত রয়েছে প্রায় ২৫ হাজার চা শ্রমিক। প্রকৃতি ও বাগানে কাজ করা চা শ্রমিকদের সমন্বয়ে গড়ে ওঠা চা বাগানের নান্দনিক সৌন্দর্যে যে কোন মানুষেরই মন কাড়বে।
উঁচু-নিচু পাহাড়ে সারি সারি ঘন সবুজ চা বাগান। দেখলে মনে হবে কেউ যেন সবুজ চাদর বিছিয়ে রেখেছে। বাগানের চা গাছগুলোকে রোদের উত্তাপ থেকে বাঁচাতে চা বাগানে ঠাঁয় দাঁড়িয়ে আছে বিভিন্ন প্রজাতির গাছ-গাছালি। এ গাছগুলো ছায়াবৃক্ষ নামে পরিচিত। প্রতিটি চা বাগানের চা শ্রমিকদের বিশেষভাবে পিঠে কাপড় বেঁধে একটি কুঁড়ি দু’টি পাতা তুলে আনা, চায়ের কুঁড়ি সংগ্রহ করে বিকেলে মাথায় করে শ্রমিকদের লাইন ধরে ঘরে ফেরা-নান্দনিক এসব দৃশ্য দেখলে শুধু চোখ নয়, মনও ভরে যায়। এছাড়া নানান জাতের পাখির কলরব, বাগানের ভেতর দিয়ে বয়ে চলা পাহাড়ি ঝর্ণার ছলছল শব্দ।
১৮৪০ সালে চট্টগ্রামের কর্ণফুলী নদীর তীরে কোদালায় প্রথম পরীক্ষামূলকভাবে চা চাষ শুরু হয়। তবে বাণিজ্যিকভাবে চা চাষের গোড়াপত্তন হয়েছিল ১৯৫৫ সালে সিলেটের মালনীছড়া চা বাগানে। ১৯৮০ সালে শ্রীমঙ্গল উপজেলার বালিশিরা উপত্যকায় একের পর এক চা বাগান গড়ে ওঠতে থাকে। চায়ের উৎপাদন ও গুণগত মান উন্নয়ন সংক্রান্ত গবেষণার জন্য ১৯৫৭ সালে শ্রীমঙ্গলে চা গবেষণা ইনস্টিটিউট (বিটিআরআই) প্রতিষ্ঠা করা হয়েছিল। দেশের একমাত্র চা গবেষণা কেন্দ্রটি এখন পর্যটকদের জন্য একটি আকর্ষণীয় স্থান হিসেবে রূপ নিয়েছে।
চা বাগানে এসব নয়নাভিরাম প্রাকৃতিক সৌন্দর্য ছাড়াও এখানে রয়েছে দিগন্ত জোড়া হাইল হাওর। যার নীল ঢেউয়ের ছন্দে প্রাণ জুড়িয়ে যায়। হাওরের অফুরন্ত মূল্যবান জলজ সম্পদ ও শীতের সময় আসা অতিথি পাখিরা পর্যটকদের আকৃষ্ট করে বারবার। এছাড়াও রয়েছে বন্যপ্রাণী সেবা আশ্রম, ডিনস্টন সিমেট্রি, মাগুরছড়া পরিত্যক্ত গ্যাসকূপ, খাসিয়াপুঞ্জি, নির্মাই শিববাড়ি, বধ্যভূমি ৭১’র মনুমেন্ট, লেবু, আনারস ও রাবার বাগান। পর্যটকদের রাত্রি যাপনের জন্য এখানে ব্যক্তি মালিকানাধীন কয়েকটি হোটেল, রিসোর্ট, রেস্ট হাউজ ও কটেজ গড়ে উঠেছে। চা বাগানগুলোতেও রয়েছে কোম্পানী বাংলা। যেখানে পর্যটকরা রাত্রি যাপন করে প্রকৃতিকে খুব কাছ থেকে অবলোকন করার সুযোগ পান। এছাড়া রয়েছে খাসিয়া, মণিপুরী, টিপরা, উড়িয়া, সাঁওতালসহ আদিবাসী সম্প্রদায়ের বসবাস। আদিবাসীদের বৈচিত্র্যময় জীবনচিত্র, সংস্কৃতি পর্যটকদের বারবার শ্রীমঙ্গল ভ্রমণে উৎসাহিত করে।
কৃপ্র/ এম ইসলাম