কৃষি প্রতিক্ষণ ডেস্কঃ বাসক পাতা বহুকাল থেকে ভেষজ ওষুধ হিসেবে ওষুধ হিসেবে ব্যবহৃত হয়ে আসছে। ঠাণ্ডাজনিত বিভিন্ন রোগের চিকিৎসায় বাসক পাতার ব্যবহার বেশ প্রসিদ্ধ। আগে আমাদের দেশে প্রাকৃতিকভাবেই গাছ জন্মালেও এখন এটি সহজলভ্য নয়। সম্প্রতি ঝিনাইদহের কালীগঞ্জ উপজেলার বিভিন্ন গ্রামে দেখা মিলছে বাসক পাতার।
প্রথমদিকে গবাদিপশুর হাত থেকে জমি রক্ষার জন্য বেড়া ও সৌন্দর্য বৃদ্ধির উদ্দেশ্যে লাগানো হলেও এখন ধারণা পাল্টেছে। দেশের বিভিন্ন ওষুধ কোম্পানির প্রতিনিধিরা এসে কৃষকদের কাছ থেকে এ পাতা নিয়ে যাচ্ছেন। এতে কৃষকরা অর্থনৈতিকভাবে লাভবান হচ্ছেন। এ অঞ্চলের আবহাওয়া ও মাটি বাসক চাষের উপযোগী হওয়ায় এখন রাস্তা ও বাড়ির পাশের পতিত জমিতে বাণিজ্যিকভাবে বাসক চাষ করছেন তারা।
এরই মধ্যে ঔষধি গুণসম্পন্ন এ গাছটির চাষ সম্প্রসারণ ও বাজারজাতকরণ-বিষয়ক জনসচেতনতা সৃষ্টির জন্য জাপানভিত্তিক একটি স্বেচ্ছাসেবী সংস্থা কাজ শুরু করেছে। এগিয়ে এসেছে বাংলাদেশ বন গবেষণা ইনস্টিটিউটও। তারা রংপুর, গাইবান্ধা, বগুড়া, নওগাঁ, জয়পুরহাট ও সিরাজগঞ্জ জেলার বিভিন্ন এলাকার চাষীদের বাসক চাষ ও সংগ্রহ বিষয়ে প্রশিক্ষণ দিচ্ছেন। বাংলাদেশ বন গবেষণা ইনস্টিটিউটের কর্মকর্তারা জানিয়েছেন, কালীগঞ্জ এলাকায়ও বাসক পাতা চাষে তারা কাজ শুরু করবেন।
জানা যায়, কালীগঞ্জ উপজেলার মোস্তবাপুর গ্রামে সাত বছর ধরে বাসক পাতার চাষ হচ্ছে। এখানকার প্রায় ১২ জন কৃষক এর সঙ্গে জড়িত। সাত বছর আগে এ গ্রামের আশাদুল ইসলাম প্রথমে তার বাড়ির ২০ শতক জমির চারপাশে বাসক গাছ লাগান। তার উদ্দেশ্য ছিল বেড়া দিয়ে জমি রক্ষা ও সৌন্দর্য বৃদ্ধি। এর দুই বছর পর কুষ্টিয়া থেকে কিছু লোক নামমূল্যে বাসকের এ পাতা কিনে নিয়ে যান। এর পর থেকে নিয়মিত তারা বাসকের পাতা সংগ্রহ করে নিয়ে যেতে থাকেন। এতে গ্রামের আরো অনেকেই বাসকের চাষ শুরু করেন। দেশের বিভিন্ন ওষুধ কোম্পানির প্রতিনিধিরা এখন তাদের কাছ থেকে পাতা সংগ্রহ করে নিয়ে যাচ্ছেন। এ ছাড়াও জেলার কমলাপুর, আলাইপুর, শ্রীরামপুর, সিংদহ, কালুখালী, আহসাননগর, কুল্লাগাছা, সুন্দরপুর, দুর্গাপুরসহ বিভিন্ন গ্রামের শতাধিক কৃষক এখন বাণিজ্যিকভাবে বাসক চাষ শুরু করেছেন।
জাপানভিত্তিক স্বেচ্ছাসেবী সংস্থার কর্মকর্তা এস এম শাহীন হোসেন জানান, এ অঞ্চলে বাসক পাতা চাষের ভালো সম্ভাবনা রয়েছে। তার মতে, এ অঞ্চলের কৃষকদের নিয়ে প্রশিক্ষণের ব্যবস্থা করলে তারা আরো লাভবান হবেন। পাশাপাশি দেশীয় ওষুধ শিল্পের কাঁচামাল জোগানে ব্যাপক ভূমিকা রাখবে।
বাংলাদেশ বন গবেষণা ইনস্টিটিউটের রোগ-বালাই বিভাগের বিভাগীয় বন সংরক্ষণ কর্মকর্তা মো. রফিকুল ইসলাম জানান, আমাদের দেশে বাসক পাতার যে চাহিদা, তার মাত্র ১০ ভাগ দেশ থেকে জোগান দেয়া হয়। বাকি ৯০ ভাগ ভারত থেকে আমদানি করা হয়। এক্ষেত্রে এর চাষ বৃদ্ধি করা গেলে আমাদের আমদানি-নির্ভরতা কমবে। রফতানিও করা সম্ভব হবে বলে জানান তিনি।
সুত্রঃ বনিক বার্তা / কৃপ্র/ এম ইসলাম