জনসচেতনতার মাধ্যমে ইলিশের উৎপাদন বাড়াতে চাই- সচিব, মৎস্য ও প্রাণিসম্পদ মন্ত্রণালয়
কৃষি প্রতিক্ষণ ডেস্কঃ দেশে মাছ চাষ বাড়ছে। একই সঙ্গে বাড়ছে মানুষের মাছ খাওয়ার পরিমাণ। মৎস্য গবেষণা ইনস্টিটিউটের হিসাবে, ২০১০ সালে দেশে মাথাপিছু দৈনিক মাছ খাওয়ার পরিমাণ ছিল ৪৮ গ্রাম। বর্তমানে মাথাপিছু মাছ খাওয়ার পরিমাণ বেড়ে দাঁড়িয়েছে ৫৫ গ্রামে। মৎস্য অধিদপ্তরের হিসাবে, ২০০৪ থেকে ২০১৫ সালের মধ্যে বাংলাদেশে মাছের উৎপাদন ৫৭ শতাংশ বেড়েছে। রুই, পাঙ্গাশ, কৈসহ বেশ কিছু মাছের দাম দরিদ্র মানুষের ক্রয়সীমার মধ্যেই রয়েছে। ফলে গত ১০ বছরে দেশে মাথাপিছু মাছ খাওয়ার পরিমাণ শতভাগ বেড়েছে।
জাতিসংঘের কৃষি ও খাদ্য সংস্থার (এফএও) মতে, ২০২২ সাল পর্যন্ত বিশ্বে পুকুরে মাছ চাষ সবচেয়ে বেশি বাড়বে বাংলাদেশে। মৎস্য অধিদফতরের ২০১৫-১৬ অর্থবছরের বার্ষিক প্রতিবেদন অনুযায়ী, দেশের মোট জনগোষ্ঠীর ১১ শতাংশের বেশি অর্থাৎ এক কোটি ৮২ লাখ মানুষ মৎস্য খাতের বিভিন্ন কার্যক্রমের সঙ্গে জড়িত থেকে জীবিকা নির্বাহ করছেন।
২০১৫-১৬ অর্থবছরে ৭৫ হাজার ৩৩৮ মেট্রিক টন মৎস্য রফতানি করে চার হাজার ২৮৩ কোটি বৈদেশিক মুদ্রা অর্জিত হয়েছে। ২০০৮-০৯ অর্থবছরে ৭২ হাজার ৮৮৮ মেট্রিক টন মৎস্য ও মৎস্যজাত পণ্য রপ্তানি করে আয় হয়েছে তিন হাজার ২৪৩ দশমিক ৪১ কোটি টাকা। দেশের পুকুর ও দীঘিতে ২০১৪-১৫ অর্থবছরে বার্ষিক হেক্টরপ্রতি গড় মৎস্য উৎপাদন ৪ দশমিক ৩৩ মেট্রিক টনে উন্নীত হয়েছে, যা ২০০৮-০৯ অর্থবছরে ছিল ২ দশমিক ৯৯ মেট্রিক টন।
চলতি (২০১৬-১৭) অর্থবছরের জুলাই থেকে সেপ্টেম্বর মেয়াদে হিমায়িত ও জীবিত মাছ রপ্তানি করে আয় হয়েছে ১৩ কোটি ৬৭ লাখ ২০ হাজার মার্কিন ডলার বা এক হাজার ৭৪ কোটি টাকা। বাংলাদেশ রপ্তানি উন্নয়ন ব্যুরোর (ইপিবি) সেপ্টেম্বর মাসে প্রকাশিত হালনাগাদ প্রতিবেদনে এ তথ্য জানানো হয়।
মৎস্য অধিদপ্তরের হিসাব অনুযায়ী, দেশে মাথাপিছু মাছের ভোগ বা খাওয়ার পরিমাণ যা বেড়েছে, তার ৭৬ শতাংশই আসছে পুকুর ও জলাশয় থেকে। ১৯৯০ সালে দেশে মোট চাষকৃত মাছ উৎপাদিত হয়েছিল এক লাখ ৯৩ হাজার টন। ২০০০ সালে তা বেড়ে ৬ লাখ ৫৭ হাজার এবং ২০১৫তে এসে ১০ লাখ টন ছাড়িয়ে গেছে।
সামাজিক নিরাপত্তা কর্মসূচির আওতায় ২০১৫-১৬ অর্থবছরে জাটকাসমৃদ্ধ ১৫টি জেলার ৮০টি উপজেলায় জাটকা আহরণে বিরত দুই লাখ ৩৬ হাজার ১৭৬টি জেলে পরিবারকে মাসিক ৪০ কেজি করে চার মাসের জন্য মানবিক সহায়তা কর্মসূচির আওতায় ৩৭ হাজার ৭৮৮ মেট্রিক টন চাল বিতরণ করা হয়েছে।
ইলিশ প্রজনন সুরক্ষা কার্যক্রম বাস্তবায়নের ফলে ২০১৪-১৫ অর্থবছরে ইলিশের উৎপাদন ৩ দশমিক ৮৭ লাখ মেট্রিক টনে উন্নীত হয়েছে, যা ২০০৮-০৯ অর্থবছরে ছিল ২ দশমিক ৯৯ লাখ মেট্রিক টন। ২০১৫-১৬ অর্থবছরে ইলিশের উৎপাদন চার লাখ মেট্রিক টনে উন্নীত হবে বলে আশা করছেন সংশ্লিষ্ট রা। মৎস্য উৎপাদন বাড়াতে জেলেদের জন্য একটি প্রকল্প গ্রহণ করা হয়েছে। এ প্রকল্পের আওতায় জুন ১৬ পর্যন্ত সমগ্র বাংলাদেশে ১৫ লাখ জেলের নিবন্ধন করা হয়েছে। এরই মধ্যে ১৩ লাখ ৩০ হাজার জেলের পরিচয়পত্র তৈরি এবং বিতরণ করা হয়েছে।
মৎস্য ও প্রাণিসম্পদ মন্ত্রণালয়ের সচিব মাকসুদুল হাসান খান বলেন, মাছের উৎপাদন বাড়ানোর জন্য সরকার নানামুখী পদক্ষেপ গ্রহণ করেছে। এ ব্যাপারে সংশ্লিষ্ট এক্সপার্টরা তাদের নতুন নতুন উদ্ভাবনী অব্যাহত রেখেছে। তিনি বলেন, আমাদের মোট মাছের চাহিদা এখন ৪১ লাখ মেট্রিক টন। দু-এক বছরের মধ্যে আমরা এ লক্ষে পৌঁছতে পারব বলে আশা করছি। বর্তমানে দেশে মাথাপিছু মাছ খাওয়ার পরিমাণ ৫৫ গ্রাম। দু-এক বছরের মধ্যে এটি ৬০ গ্রামে পৌঁছাতে চাই। তিনি বলেন, একটি মা-ইলিশ ৩০ লাখ ডিম দেয়। মা-ইলিশ না ধরা এবং এ ব্যাপারে সরকারের বিভিন্ন উদ্যোগের কারণেই প্রতি বছর ইলিশের উৎপাদন বাড়ছে। পুলিশ বা গার্ড দিয়ে পাহারা নয়, জনসচেতনতা সৃষ্টির মাধ্যমে আমরা ইলিশের উৎপাদন আরও বাড়াতে চাই। মাছ উৎপাদনে স্বাবলম্বী হতে চাই।
কৃপ্র/ এম ইসলাম