কৃষি প্রতিক্ষণ ডেস্কঃ বিভিন্ন উদ্যোগ নেয়া সত্ত্বেও খুলনা অঞ্চলে চিংড়িতে অপদ্রব্য পুশ বন্ধ করা যাচ্ছে না। মত্স্য পরিদর্শন ও মাননিয়ন্ত্রণ অধিদপ্তর, র্যাব ও কোস্টগার্ড বিভিন্ন মাছের ডিপো ও আড়তে অভিযান পরিচালনা করলেও এক্ষেত্রে কোনো পরিবর্তন আসেনি। প্রকাশ্যেই চিংড়ির দেহে অপদ্রব্য পুশ করা হচ্ছে। খবর বনিক বার্তা।
সংশ্লিষ্ট সূত্রে জানা যায়, খুলনা নগরীর নতুন বাজার, আড়ংঘাটা, পূর্ব রূপসা, আলাইপুর, শিয়ালী ও ডোবা বাজার, ফুলতলার জামিরা, ডুমুরিয়া, খর্নিয়া, শাহাপুর, চুকনগর বাজার, পাইকগাছা, বাগেরহাটের ফকিরহাট, ফলতিতা, ফয়লা, মংলা, সাতক্ষীরাসহ বিভিন্ন এলাকার মাছের ডিপো ও আড়তে বাগদা ও গলদা চিংড়ির দেহে কেমিক্যালজাতীয় পদার্থ পুশ করানো হচ্ছে। এসব অঞ্চলে র্যাব, পুলিশ, কোস্টগার্ড এবং মত্স্য পরিদর্শন ও মাননিয়ন্ত্রণ দপ্তরের অভিযান অব্যাহত থাকলেও স্থায়ীভাবে তা বন্ধ করা যাচ্ছে না। তবে অভিযোগ রয়েছে, জেলার বিভিন্ন উপজেলা মত্স্য কর্মকর্তাদের এ নিয়ে কোনো মাথাব্যথা নেই। অজ্ঞাত কারণে তারা নীরব ভূমিকা পালন করছেন।
খুলনা, বাগেরহাট, সাতক্ষীরা, নড়াইল ও যশোর অঞ্চলে ৪৩টি মত্স্য প্রতিষ্ঠান ও ছোট-বড় এক হাজার ডিপো রয়েছে। বেশকিছু ব্যবসায়ী অভিযোগ করে বলেন, মত্স্যবিষয়ক আইন বাস্তবায়নে মোবাইল কোর্ট পরিচালনার কথা থাকলেও এসব প্রতিষ্ঠানে তা দায়সারাভাবে করা হচ্ছে।
সংশ্লিষ্ট সূত্র জানায়, চলতি বছরের ১ মে কোস্টগার্ড সিজি স্টেশন রূপসার একটি অপারেশন দল পশুর নদীতে অভিযান চালিয়ে দুই হাজার কেজিরও বেশি অপদ্রব্যযুক্ত চিংড়ি আটক করে; যার আনুমানিক মূল্য ২৪ লাখ টাকা। গত ১৯ আগস্ট এ রকম আরো দুই হাজার কেজি বাগদা চিংড়ি জব্দ করা হয়। অন্যদিকে রূপসা সেতুর টোলপ্লাজায় একটি পিকআপ থেকে ১ হাজার ২০০ কেজি অপদ্রব্যযুক্ত বাগদা চিংড়ি জব্দ করা হয়। এছাড়া গত ২০ আগস্ট কোস্টগার্ড স্টেশন রূপসার একটি অপারেশন দল এবং মত্স্য পরিদর্শন ও মাননিয়ন্ত্রণ দপ্তর যৌথভাবে পূর্ব রূপসার মেসার্স তালহা ফিশের মালিক নাজমুল হাসানের ডিপোয় অভিযান চালায়। এ সময় চিংড়িতে অপদ্রব্য (জেলি) পুশ করার সরঞ্জামসহ ৮০০ কেজি বাগদা চিংড়ি জব্দ করা হয়। এ রকম অভিযানে জরিমানাও করা হয় বেশ কয়েকটি প্রতিষ্ঠানকে। গত ৩ সেপ্টেম্বর পূর্ব রূপসায় তিনটি ডিপোয় চিংড়িতে অভিযান চালায় র্যাব। অভিযানে ৩ হাজার ১৪০ কেজি বাগদা ও গলদা চিংড়ি জব্দ ও পাঁচজনকে দুই বছরের বিনাশ্রম কারাদণ্ড দেন ভ্রাম্যমাণ আদালত। এসব জব্দকৃত চিংড়ি জনসমক্ষে বিনষ্টও করা হয়।
গত ১৮ সেপ্টেম্বর সাতক্ষীরার আশাশুনির মৈশাকুড়ার মেসার্স তাইফুর ফিশে অপদ্রব্য পুশবিরোধী অভিযান চালানো হয়। এ সময় ২০০ কেজি বাগদা চিংড়ি জব্দ করে ডিপো মালিককে ৭৫ হাজার টাকা জরিমানা করা হয়। গত ৩ নভেম্বর র্যাব-৬ ও মত্স্য পরিদর্শন ও মাননিয়ন্ত্রণ দপ্তর ডুমুরিয়া বাজার এলাকার মেসার্স সাত্তার ফিশের ডিপোয় অভিযান চালায়। এ সময় ৪০০ কেজি গলদা চিংড়ি জব্দ করা হয়। ডিপো মালিক মো. সাইদুল ইসলামকে ৭০ হাজার টাকা জরিমানাও করা হয়। এ অভিযানে নেতৃত্ব দেন মত্স্য পরিদর্শন ও মাননিয়ন্ত্রণ দপ্তরের পরিদর্শক মো. তরিকুল ইসলাম ও মো. আমিনুল ইসলাম। এছাড়া গত ১৪ নভেম্বর গোপন সংবাদের ভিত্তিতে র্যাব-৬-এর একটি বিশেষ দল মত্স্য পরিদর্শন ও মাননিয়ন্ত্রণ দপ্তরের সহযোগিতায় বেলা ১টার দিকে পূর্ব রূপসার মেসার্স এসএন ফিশ ও মেসার্স আলভি ফিশে অভিযান চালায়। অভিযানে ১০৫ কেজি বাগদা চিংড়িসহ ১৪ জনকে আটক করা হয়। পরবর্তীতে ভ্রাম্যমাণ আদালতে মেসার্স এসএন ফিশের মালিক নাসির আহমেদ ও শফিকুল ইসলামকে ৩ লাখ এবং আলভি ফিশের মালিক আনছার আলীকে ৩ লাখ টাকা জরিমানা করা হয়। কিন্তু কোনোভাবেই ব্যবসায়ীদের এ প্রবণতা বন্ধ করা যাচ্ছে না। এতে হুমকির মুখে পড়েছে খুলনা অঞ্চলের চিংড়ি শিল্প।
মত্স্য পরিদর্শন ও মাননিয়ন্ত্রণ খুলনার উপপরিচালক প্রফুল্ল কুমার সরকার জানান, চিংড়ি শিল্পকে টিকিয়ে রাখতে র্যাব, পুলিশ ও কোস্টগার্ডের সহযোগিতায় এ অভিযান অব্যাহত রয়েছে। প্রয়োজনে আরো কঠোর পদক্ষেপ গ্রহণ করা হবে বলে জানান তিনি।
কৃপ্র/ এম ইসলাম