কৃষি প্রতিক্ষণ ডেস্কঃ আঙুর একটি অতিলতানো জাতের গাছ। শাখা-কলমের বেলায় প্রায় এক ফুট দীর্ঘ শাখা-খণ্ডের এক-তৃতীয়াংশকে মাটির নিচে কাত করে পুঁতলে ভালো হয়। বয়স্ক গাছে প্রতি বছর এপ্রিল মাসে দুই কেজি খৈল, এক কেজি হাড় চূর্ণ এবং এক পোয়া সালফেট অব পটাশ ব্যবহার করা ভাল।তবে ইউরিয়া, সুপার ফসফেট ও মিউরেট অব পটাশের ১:৩:৩ অনুপাতে মিশ্রণ ব্যবহার উত্তম। ছোট চারা গাছের জন্য এ মিশ্রণের প্রায় দুই ছটাক এবং বেশ বয়স্ক গাছের জন্য প্রায় এক কেজি পর্যন্ত প্রয়োগ করা যেতে পারে।
চারা পরস্পর থেকে ১০ ফুট দূরে রোপণ করা যেতে পারে। আঙুরের জন্য একটি শক্তিশালী প্রধান কাণ্ড গঠন আবশ্যক। এর যেসব শাখা জন্মে তার গায়ে ফল-পল্লব দেখা যায়। সাধারণত ফল সংগ্রহের পর যখন পাতা ঝরে যায় তখন শাখা ছাঁটাই করা হয়। সব শাখাকেই এমনভাবে ছেঁটে দেয়া যেতে পারে, যাতে ওটার গায়ে কেবল দুই থেকে তিনটি চোখ বাকি থাকে। যেসব শাখা অতি শক্ত হয়ে যায় তার অধিকাংশই কাটা যেতে পারে। ফলের গুচ্ছ থেকে কিছু কিছু ফল কাঁচি দ্বারা কেটে পাতলা করে দিলে ফল উত্কৃষ্ট হয়। এপ্রিল-মে মাসে ফুল দেখা দেয় এবং আগস্ট-সেপ্টেম্বর মাসে ফল পাকে। গাছপ্রতি ১০ থেকে ১৫ কেজি আঙুর পাওয়া যায়।
আমাদের দেশে এ যাবত্ তিনটি উত্পাদনশীল আঙুর গাছের জাত নির্বাচন করা হয়েছে , জাককাউ, ব্ল্যাক রুবী ও ব্ল্যাক পার্ল এ তিনটি জাতই গ্রীষ্মকালীন এবং পরে তিনটি রংয়ে রূপান্তরিত হয়ে যথাক্রমে হালকা বাদামি, কালো ও করমচা রং ধারণ করে। ফলন আসতে সময় লাগে প্রায় দু’বছর। মিষ্টতার পরিমাণ ১৮ থেকে ২০ শতাংশ । মাটির পিএইচ ৬.৫-৭.৫ হলে আঙ্গুর দ্রুত মিষ্টি হয়।
গাছের দীর্ঘায়ু বিবেচনা করে মাচায় লোহার তারের ব্যবস্থা করা ভালো। মাচায় ওঠা পর্যন্ত আঙুর গাছের পার্শ্ব শাখা ভেঙে দিতে হবে। আর যা যা করবেন তা হলো মাচায় প্রথম ডগা উঠবার মুহূর্তে তা ভেঙে দিতে হবে যাতে কর্তনকৃত অংশের নিচ থেকে দুটি কচি ডগা ইংরেজি ‘ভি’ আকারে মাচায় ওঠে এবং ৫০ সেন্টিমিটার লম্বা হবে। দুটি ডগার মাথা পুনরায় ৫০ সেন্টিমিটার দূরে ভেঙে দিতে হবে, যাতে প্রতি শাখার উভয় পার্শ্বে অনধিক দুটি করে চারটি প্রশাখা গজায় এবং তা পুনরায় ৫০ সেন্টিমিটার পর্যন্ত বড় হবে। উত্পাদিত আটটি প্রশাখা ৫০ সেন্টিমিটার বড় হওয়ার পর তা আবার মাথা ভেঙে দিতে হবে এবং এরপর গাছ যথারীতি বড় হতে থাকবে।
গাছ রোপণের উপযুক্ত সময় মার্চ থেকে মে। তবে আগস্ট মাস পর্যন্ত রোপণ করা যাবে। এরপর গাছের সতেজতা কমে যাবে। অক্টোবর থেকে জানুয়ারি পর্যন্ত গাছ ঘুমন্ত অবস্থায় থাকবে এবং পাতা ঝরে যাবে। বছরে দু’বার ফুল আসবে। মার্চ ও জুলাই মাসে তা আঙুরে রূপান্তরিত হবে। ফুল আসার পর থেকে আঙুর মিষ্টি হতে সময় লাগবে ১২০ দিন বা চার মাস। নির্দিষ্ট সময়ের আগে আঙুর কাটলে ‘টক’ লাগবে। ফুল আসার ৭০-৮০ দিনের মধ্যে সবুজ অবস্থায় আঙ্গুর স্পঞ্জের ন্যায় নরম হবে। এটা আঙুরের পরিপকস্ফতা বুঝায়। পরবর্তীকালে ৪০ দিন সময় নিবে আঙুর মিষ্টির পর্যায়ে যেতে।
৭০-৮০ দিনের সময় গাছপ্রতি ২০ গ্রাম পটাশ পানির সঙ্গে মিশিয়ে দিলে আঙুর দ্রুত মিষ্টির পর্যায়ে চলে যায়। ফুল থেকে আঙুর মুগ ডালের মতো আকার হলে জিবরেলিক এসিড ছিটিয়ে প্রয়োগ করলে আকারে ও আকৃতিতে বড় হয়। ফুল থাকা অবস্থায় কীটনাশক ওষুধ প্রয়োগ নিষেধ। আঙুরের থোকায় হাত লাগানো উচিত নয়, এতে চামড়ার উপরের সাদা পাউডার হাতের ছোঁয়ায় উঠে যায় এবং পোকার আক্রমণ সহজতর হয়। থোকায় আঙুুর যখন মুগ ডালের আকারে থাকে তখন ছোট অবস্থায় কিছু আঙ্গুর বাছাই করে ফেলে দেয়া ভাল যাতে আঙ্গুরের সাইজ সুন্দর থাকে। আঙ্গুর পাকার সময় বৃষ্টি হবার সম্ভাবনা থাকায় মাচার উপরে ‘পলিথিন সীট’ দিয়ে আবৃত করে দিতে হবে যাতে গাছে বৃষ্টির পানি না লাগে। লাগলে পাকা আঙ্গুর ফেটে যাবার সম্ভাবনা থাকে।
প্রতি বছর একটা নির্দিষ্ট সময়ে পরিচর্যা নিয়মিতভাবে করতে হবে। প্রতি বছর জানুয়ারি মাসের দ্বিতীয় সপ্তাহের মদ্যে গাছের গোড়ায় মাটি হালকাভাবে কুপিয়ে আলগা করে তাতে অনুমোদিত সার প্রয়োগ করে শুধুমাত্র একবার বেশি করে পানি দিতে হবে। জানুয়ারি মাসের ৪র্থ সপ্তাহে ঘুমন্ত গাছের শাখা-প্রশাখা ছাটাই করে দিতে হবে। ছাটাইকৃত ডালগুলো কেটে পরে মাটিতে পুতে পানি দিলে পুনরায় নতুন গাছ হবে। ফেব্রুয়ারি মাসের ১ম সপ্তাহে সামান্য গরম আরম্ভ হবার সাথে সাথে গাছের গোড়ায় পানি সেচ দিতে হবে, যে পর্যন্ত না বৃষ্টি হয়। পানি দেবার ১০ দিনের মধ্যে গাছে নতুন শাখা-প্রশাকা গজাবে এবং তাতে ফুল দেখা দিবে যা পরবর্তীতে আঙ্গুরে রূপান্তরিত হবে।’
কৃপ্র/ এম ইসলাম