ড. মো. হুমায়ুন কবীর: ক্যালেন্ডারের হিসেবে ইংরেজি আরো একটি বছর হারিয়ে গেল কালের আবর্তে। একটি পুরো বছরে যেমন থাকে অনেক চড়াই-উৎরাই, অপরদিকে নতুন আরেকটি বছর শুরু হলেও সেই বছরকে কেন্দ্র করে থাকে কিছু প্রত্যাশা ও সম্ভাবনা। ঠিক তেমনি একটি বছর ২০১৬ সাল অতিবাহিত হলো। সেইসাথে পহেলা জানুয়ারি তারিখে শুরু হলো আশা-নিরাশার ও প্রত্যাশা-প্রাপ্তির ২০১৭ সাল। মহাকাল ও সমকালের বিচারে প্রতিবছরের ন্যায় ২০১৬ সালটি ছিল অনেক গুরুত্বপূর্ণ ঘটনা-দুর্ঘটনার ও সফলতা-ব্যর্থতায় ভরপুর। ঠিক তেমনি ২০১৭ সালও হয়তো এমন অনেক সম্ভাবনা ও আশার আলো সঞ্চার করবে এটাইতো আশাবাদী মানুষদের প্রত্যাশা। আর সেসব ঘটনাবলীর মধ্যে কিছু রয়েছে জাতীয়ভাবে আলোচিত ও সমালোচিত এবং গুরুত্বপূর্ণ, আবার কিছু রয়েছে আন্তর্জাতিকভাবে আলোচিত ও সমালোচিত ও গুরুত্বপূর্ণ।
এখন আজকে আমি আমার এ নিবন্ধে এসব কিছু গুরুত্বপূর্ণ বিষয়েই ধারাবাহিকভাবে আলোচনা করার চেষ্টা করব। প্রথমে আসা যাক বাংলাদেশের শতকরা আশিভাগ মানুষের জড়িত থাকার বিষয় কৃষিতে। অনেকে বলেন, দেশে যখনই আওয়ামীলীগের সরকার ক্ষমতায় থাকে তখনই কৃষি ক্ষেত্রে দেশটি এগিয়ে যায়। এ কথার যথেষ্ট সত্যতা পাওয়া গেছে বিগত দিনগুলোর মধ্যে গত ২০১৬ সালেও। গত ২০১৬-১৭ অর্থ বছরের বাজেটে কৃষিতে গুরুত্বপূর্ণ কিছু বরাদ্দ ও প্রকল্প গ্রহণের কারণে কৃষিতে প্রবৃদ্ধি বেড়েছে এবং উৎপাদনে এসেছে বৈচিত্র।
নতুন নতুন কৃষি পণ্য যেমন গুরুত্ব পাচ্ছে, ঠিক তেমনি কিছু নতুন নতুন পণ্য যুক্ত হচ্ছে রপ্তানির তালিকায়। এক্ষেত্রে পাটের সুদিন ফিরিয়ে আনার বিষয়টি গুরুত্বের সাথে বিবেচনা করা যেতে পারে। আমরা জানি একসময় পাটই ছিল আমাদের দেশে একমাত্র গুরুত্বপূর্ণ রপ্তানিযোগ্য কৃষিপণ্য। এটিকে রপ্তানি করে দেশের অর্থনৈতিক চাকা সচল রাখা হতো। আর মাটির বিশেষ গুণাবলীর কারণে বাংলাদেশে একদিকে যেমন প্রচুর পরিমাণে পাট উৎপাদন হতো, অপরদিকে সেই উৎপাদিত পাটের ব্যাপক চাহিদা ও বাজার ছিল বিশ্বের বিভিন্ন দেশে। সেজন্য পাটকে তখন সোনালী আঁশ বলা হতো। কিন্তু বর্তমানে বিশ্বে পাটের পরিবর্তে অনেক কৃত্রিম তন্তু আবিষ্কৃত হয়েছে। সেজন্য আমাদের দেশের পাটের রপ্তানি চাহিদা কমে যাচ্ছিল বিদেশে। কমে যাচ্ছিল কৃষি ও কৃষকের আয়, হয়েছে শস্য আবর্তনে বিরাট পরিবর্তন।
কিন্তু সাম্প্রতিক সময়ে সেই পাটের সুদিন ফিরানোর জন্য বাংলাদেশি এক কৃষি বিজ্ঞানী ড. মাকসুদুল আলম পাটের জীবন রহস্য আবিষ্কারের পর তার গুরুত্ব আবার বাড়তে শুরু করে। তাছাড়া ২০১৬ সাল থেকে দেশে পাটের গুরুত্ব বাড়াতে এবং পরিবেশকে রক্ষা করার স্বার্থে বিভিন্ন নিত্য প্রয়োজনীয় পণ্যের বাজারজাতকরণে পাটের মুড়কীকরণ বাধ্যতামূলক করা হলে, দেশেই পাটের চাহিদা অনেক বেড়ে গিয়ে এ পণ্যটির গুরুত্ব বাড়তে থাকে। সেজন্য বর্তমান কৃষিবান্ধব সরকার পাটকে কৃষি পণ্য হিসেবে ঘোষণা করেছে। সেইসাথে পাটের উন্নয়নের জন্য গৃহীত হয়েছে অনেক গুরুত্বপূর্ণ প্রকল্প।
ঠিক তেমনিভাবে কৃষককে সহজশর্তে ঋণ বিতরণের জন্য সকল সরকারি-বেসরকারি ব্যাংককে সরকারের তরফ থেকে নির্দেশনা জারি করে টার্গেট বেধে দিয়ে সেটাকে বাধ্যতামূলক কারা হয়েছে। জ্বালানি তেল, সারসহ অন্যান্য কৃষি পণ্যের উপর সরকারের প্রণোদনা রয়েছে। কৃষিকে আধুনিক ও যান্ত্রিকীকরণের জন্য প্রয়োজনীয় উদ্যোগ গ্রহণ করা হয়েছে। সেরকমভাবে মূল কৃষির সাথে তার অন্যান্য উপখাতগুলো যেমন মাছ, হাঁস-মুরগি, গবাদিপশু ইত্যাদি প্রতিটি ক্ষেত্রে গুরুত্বপূর্ণ প্রণোদনার দরুণ এসব ক্ষুদ্র ক্ষুদ্র অবদানেই আজ দেশের অর্থনীতি অভাবনীয়ভাবে এগিয়ে যাচ্ছে।
মাছে এসেছে অভাবনীয় সাফল্য। কারণ বিশ্বে স্বাদু পানির মাছ উৎপাদনে আমরা এখন চতুর্থ। সেখানে ইলিশ মাছের ক্ষেত্রে যে একটি গুরুত্বপূর্ণ অবদান ফুটে উঠেছে, এবার তার আর উল্লেখ না করলেও চলে। কারণ দেখা গেছে, ২০১৬ সালে বিগত বিশ বছরের তুলনায় সবচেয়ে বেশি ইলিশ মাছ ধরা পড়েছে। সেই অনুসারে ইলিশ মাছের দামও ছিল সব মানুষের নাগালের ভিতরে। এগুলো ছিল সরকারের নীতি ও প্রয়োজনীয় উদ্যোগ। পরিবেশের ক্ষেত্রে ঘটেছে অভাবনীয় সাফল্য। কারণ আমাদের সরকারপ্রধান নিজেই একজন পরিবেশ কর্মী। তিনি পরিবেশ সংরক্ষণের জন্য জাতীয় আন্তর্জাতিকভাবে একজন গুরুত্বপূর্ণ নেতা হিসেবে বিশ্বে তিনি একটি জায়গা করে নিয়েছেন।
দেশে-বিদেশে যেখানেই পরিবেশ সম্পর্কে কোন কিছু হয় বাংলাদশের প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা উপস্থিত থাকেন এবং দেশের স্বার্থে দেন দরবারে অংশ নেন। তারই অংশ হিসেবে তিনি ২০১৬ সালে মারাকাসে বিশ্ব জলবায়ু কপ-২২ সম্মেলনে অংশ নিয়ে বাংলাদেশের পক্ষে গুরুত্বপূর্ণ বক্তব্য রাখেন। পরে তিনি আবার হাঙ্গেরিতে বিশ্ব পানি সম্মেলনেও অংশ নিয়ে বাংলাদেশের পক্ষে দেন দরবারতো করেছেনই, পাশাপাশি তিনি এসব ক্ষেত্রে বাংলাদেশের অভিজ্ঞতা বিনিময় করেন। সেজন্য বাংলাদেশ যে কোন উন্নত দেশের চেয়েও সাফল্যজনকভাবে দুর্যোগ মোকাবেলা করতে সমর্থ হচ্ছে।
আর জলবায়ু পরিবর্তনসহ যেকোন দুর্যোগ মোকাবেলা করার জন্য বিশ্বের কোন দেশের সাহয্যের দিকে তাকিয়ে না থেকে সরকারের নিজস্ব তহবিল থেকে ৪০০ মিলিয়ন ডলারের একটি ফান্ড সৃষ্টি করেছেন, যা গ্রিন ক্লাইমেট ফান্ড নামে আখ্যায়িত করা হয়েছে। ২০১৬ সালটি আইনশৃঙ্খলার ক্ষেত্রে ছিল একটি আলোচিত এবং সমালোচিত বছর। বিগত একবছরের প্রকাশিত একটি পরিসংখ্যান থেকে জানায় যায়, সেখানে একবছরে আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর ১১টি অভিযানে ৩৬ জন জঙ্গি নিহত হয়েছে। তার আগে বিদেশের আইএস, আল কায়েদা ইত্যাদির আদলে জেএমবি, আনসারুল্লাহ বাংলা টিম ইত্যাদি নামে-বেনামে জঙ্গি সংগঠন দেশে তথাকথিত ইসলাম প্রচারের নামে সন্ত্রাসী কর্মকা-ের মাধ্যমে ত্রাসের রাজত্ব কায়েম করার প্রয়াস চালায়। তারই অংশ হিসেবে বিভিন্ন ধর্মীয় উপাসনালয়, মসজিদ, মন্দির, প্যাগোডা এবং ইমাম, পুরোহিত, ফাদার, ধর্মগুরু এবং ধর্মযাজকদেরকে হত্যা করে, আবার কাউকে কাউকে হত্যার চেষ্টা চালায়।
সেখানে বাদ যায়নি শোলাকিয়ার মতো বিশ্বের সবচেয়ে বড় ঈদের নামাজের মাঠ, বাদ যায়নি পবিত্র রমজান মাসে রাজধানীর অভিজাত এলাকা গুলশানের হলি আর্টিজান বেকারিতে দেশি-বিদেশি হত্যা। কিন্তু বর্তমান সরকারের জঙ্গি-সন্ত্রাসবাদ বিরোধী নীতির কারণে এবং বেশকিছু সফল অভিযানের কারণে তা অনেকটাই নিয়ন্ত্রণে। সর্বশেষ গত ডিসেম্বর মাসেও ঢাকার এয়ারপোর্টের কাছে দক্ষিণখানে আশকোনাসহ আরো কয়েকটি স্থানে, কয়েকটি সফল অভিযান পরিচালনা করে আত্মঘাতী স্কোয়াডের বেশ কয়েকজন নারী-পুরুষ এমনকি শিশু জঙ্গিকে নিস্ক্রিয় করা সম্ভব হয়েছে। তা না হলে এরা গত ২৫ ডিসেম্বরের বড় দিন এবং ৩১ ডিসেম্বরের থার্টি ফার্স্ট নাইটে নিরীহ জনগণের উপর ঝাঁপিয়ে পড়ার পরিকল্পনার ছক এঁটেছিল বলে জানা গেছে। কোন দেশের অর্থনীতিই হলো একটি দেশের উন্নয়নের মাপকাঠি।
আমাদের বাংলাদেশ আজ অতীতের তলাবিহীন ঝুড়ির অপবাদ গুচিয়ে তরতর করে সামনের দিকে এগিয়ে যাচ্ছে। বর্তমানে বিজয়ের ৪৫ বছর পরে বাংলাদেশের জিডিপির প্রবৃদ্ধি ৭ দশমিক ১১ শতাংশ, যা বিশ্বের অনেক উন্নত দেশের চেয়েও বেশি। এখন সামনে তাকালে উন্নয়নের চিত্র চারপাশে খুবই দৃশ্যমান, যা চোখ মেলে তাকালেই যে কেউ দেখতে পাবে সহজেই। সেগুলোর কিছু হলো- মাথাপিছু আয় ১৪৬৬ মার্কিন ডলার, দারিদ্য্রের হার কমে এখন ২৪ দশমিক ৮ শতাংশ, কেন্দ্রীয় ব্যাংকের রিজার্ভ ৩১ দশমিক ৩৮ বিলিয়ন মার্কিন ডলার, রেমিট্যান্স ১৫ বিলিয়ন ডলার, রপ্তানি আয় ৩৪০০ কোটি ডলার, চাল উৎপাদন ৩ কোটি ৮৯ লাখ মে. টন, সাক্ষরতার হার ৭০ শতাংশ, গড় আয়ু ৭০ বছরের উপরে, ২৮৭৯৩ কোটি টাকার পদ্মা সেতু নিজস্ব অর্থায়নে নির্মাণ ইত্যাদি। ২০১৬-১৭ অর্থ বছরে বিদেশ নির্ভরতা কমিয়ে শুধু অভ্যন্তরীণ খাতে অর্থ আহরণকে গুরুত্বের সাথে বিবেচনায় নিয়ে দেশের ইতিহাসের সর্বোচ্চ ৩ লক্ষ ৪১ হাজার কোটি টাকার জাতীয় বাজেট ঘোষণা করা হয়েছে।
আর অর্থনৈতিক উন্নয়নের সাথে সাথে ভৌত অবকাঠােমোসহ অন্যান্য নাগরিক জীবনমানের উন্নয়ন অব্যাহত রয়েছে। বাংলাদেশের অর্থনৈতিক উন্নয়নের মিরাকল দেখে বিশ্বের অনেক দেশ রীতিমত হিংসা ও ঈষা করছে। শুধু তাই নয়, তারা বাংলাদেশের এ চলমান উন্নয়নকে বাধাগ্রস্ত করার জন্য নানা ষড়যন্ত্র ও ফন্দিফিকির চালাচ্ছে। উদাহরণস্বরূপ বলা যায় পোষাক শিল্পের কথা। সেখানে যুক্তরাষ্ট্রসহ কয়েকটি উন্নত রাষ্ট্রে কোটামুক্তভাবে যে প্রবেশাধিকার ছিল তা নানা টালবাহানায় আটকে রেখেছে। বার বার বিভিন্ন শর্ত আরোপ করে তা না দেওয়ার পায়তারা চলমান রয়েছে। কিন্তু তারপরেও বাংলাদেশ এগুলোকে তোয়াক্কা না করার পর্যায়ে চলে এসেছে। আর সেরকম আর্থিক সক্ষমতার জন্যই সরকারি চাকৃরিজীবীদের জন্য জাতীয় পেস্কেল ঘোষণা করে সকল পর্যায়ে বেতনভাতা বাড়িয়ে তা প্রায় দ্বিগুণ করা হয়েছে। প্রায় ২৯ হাজার কোটি টাকা ব্যায়ে দেশের সবচেয়ে বড় অবকাঠামো পদ্মা সেতু বিশ্বব্যাংেকের মতো ডোনারকে বৃদ্ধঙ্গুলি প্রদর্শন করে দ্রুত পদক্ষেপে এগিয়ে চলেছে। তৈরী হচ্ছে সারাদশে বিভিন্ন গুরুত্বপূর্ণ চারলেন রাস্তা সম্প্রসারণের কাজ। গড়ে উঠছে ফ্লাই ওভার, ব্রিজ, কালভার্ট ইত্যাদি।
শিক্ষাখাতেও বাংলাদেশের অর্জন আজ বিশ্বের কাছে রোল মডেল হয়েছে। দেশে এখন সরকারি বিশ্ববিদ্যালয়ের সংখ্যা এখন ৩৯টি। উচ্চশিক্ষার মানোন্নয়ণের লক্ষ্যে ইউজিসিকে সহযোগিতার জন্য সৃষ্টি করা হয়েছে অ্যাক্রাডিটেশন কাউন্সিল, বর্তমান ইউজিসিকে শক্তিশালীকরণের জন্য গঠন করা হচ্ছে উচ্চশিক্ষা কমিশন। গবেষণায় বরাদ্দ বাড়ানো হয়েছে। প্রাথমিক শিক্ষাকে অষ্টম শ্রেণি পর্যন্ত বৃদ্ধি করে তা অবৈতনিক করা হয়েছে। প্রায় পাঁচ শতাধিক স্কুল ও কলেজকে বেসরকারি থেকে জাতীয়করণ করা হয়েছে। নতুর শিক্ষানীতি প্রণয়ন করা হয়েছে। স্বাস্থ্য সেবায় আনা হয়েছে অভাবনীয় উন্নয়ন। দেশের বিভিন্ন কমিউনিটি ক্লিনিক ও হাসপাতাল, সৃষ্টি করা হয়েছে বার্ন ইউনিটসহ নতুন নতুন ইউনিট। বৃক্ষমানবসহ অনেক দুর্লভ রোগের চিকিৎসা সরকারি খরচে সম্পন্ন করা হয়েছে।
দেশের স্বাধীনতা ও মুক্তিযুদ্ধের দীর্ঘদিনের কলঙ্ক মোচনের অংশ হিসেবে চলমান যুদ্ধাপরাধীদের বিচারের আওতায় ২০১৬ সালে আরো দুজনের রায় কার্যকর করা হয়েছে। এরা হলেন জামাতের আমীর মতিউর রহমান নিজামী এবং জামাতের মূল অর্থ প্রদানকারী হিসেবে পরিচিত মীর কাসেম আলী। অনেক বিশ্বমানের আইন প্রণয়ন করা হয়েছে জাতীয় সংসদে। আইনের শাসন প্রতিষ্ঠার অসামান্য নজির হিসেবে দুইজন ক্ষমতাসীন মন্ত্রীকে আদালত কর্তৃক জরিমানা করে তা আদায় করা হয়েছে। এতে প্রামাণ করার চেষ্টা হয়েছে যে কেউই আইনের উর্ধ্বে নয়। দেশে ২০১৬ সালটি রাজনৈতিকভাবে গুরুত্বপূর্ণ ছিল। কারণ এসময়ে বিএনপি এবং আওয়ামীলীগ- এ দুটি বড় দলের দলীয় কাউন্সিল অনুষ্ঠিত হয়েছে। তবে এক কথায় বলতে গেলে বিএনপির কাউন্সিলের চেয়ে আওয়ামীলীগের কাউন্সিলটি ছিল অনেক গুছানো এবং সফল।
এবারেই প্রথম দলীয় প্রতীকে এবং মনোনয়নে স্থানীয় সরকারের নির্বাচনগুলো অনুষ্ঠিত হয়েছে। তবে এক্ষেত্রে বছরের প্রথম দিকে ইউপি নির্বাচন নিয়ে কিছু কথাবার্তা থাকলেও সর্বশেষ অনুষ্ঠিত নারায়ণগঞ্জ সিটি করপোরেশন নির্বাচন এবং জেলা পরিষদ নির্বাচন নিয়ে তেমন কোন কথা শোন যায়নি। তবে নির্বাচন সুষ্ঠু করতে নির্বাচন কমিশনের একটি গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা থাকায় বছরের শেষ দিকে অর্থাৎ ডিসেম্বরে এসে মহামান্য রাষ্ট্রপতির উদ্যোগে রাজনৈতিক দলগুলোর সাথে আলোচনা করার একটি প্রক্রিয়া চলমান রয়েছে। এতে সব রাজনৈতিক দলই একটি স্বস্তির ভাব বিরাজমান রয়েছে যা সুস্থ রাজনৈতিক ধারার একটি পূর্বশর্ত।
দেশে কিছু জঙ্গি-সন্ত্রাসী ঘটনা, নাসিরনগরে ধর্মীয় সংখ্যালঘু হিন্দুদের উপর ভয়াবহ নির্যাতন, সিরাজগঞ্জে শাঁওতাল পল্লীতে উদ্দেশ্যমূলক আক্রমণ ছাড়া সারাবছর সারাদেশে শান্তি বজায় ছিল। যে কারণে আন্তর্জাতিক অনেক মানবিক সূচকে বাংলাদেশের অগ্রগতি ছিল আশাব্যঞ্জক। সেজন্য বিদেশে বাংলাদেশের মান ও ভাবমূর্তি উজ্জ্বল হয়েছে। তাই বাংলা নববর্ষ পালনের ঐতিহ্যবাহী মঙ্গল শোভাযাত্রাকে জাতিসংঘের ইউনেস্কো কর্তৃক বিশেষ মর্যাদা দিয়ে বিশ্ব ঐতিহ্যের অংশ হিসেবে স্বীকার করে নেওয়া হয়েছে। আইসিটি ক্ষেত্রেও বাংলাদেশ বিশ্বে অনুকরণীয় দৃষ্টান্ত। দেশে আইসিটিখাত অভাবনীয় উন্নতি সাধন করেছে।
আন্তর্জাতিক ক্ষেত্রেও ২০১৬ সালটি ছিল আলোচনা সমালোচনার শীর্ষে। তুরস্কে সেনা অভ্যুত্থান থেকে বেসামরিক এরদোগানের পুনরুদ্ধার, ব্রিটেনের ব্রেক্সিট থেকে বের হওয়া এবং ডেভিড ক্যামেরনের পদত্যাগের পর সরকারের পরিবর্তন হয়ে টেরেজা মে’র ক্ষমতারোহণ। আবার বছরজুড়ে মার্কিন নির্বাচনের উত্তাপ এবং সর্বশেষ সকল জরিপকে ভুল প্রমাণ করে হিলারিকে হারিয়ে ঐতিহাসিকভাবে ডোনাল্ড ট্রাম্পের বিজয় অর্জন। রোহিঙ্গার অভিবাসী শরণার্থী সমস্যায় জর্জরিত হয়েছে আবারো বাংলাদেশ। সর্ব গত নভেম্বরে ৯০ বছর বয়সে ফিদেল ক্যাস্ট্রো নামের এক বিপ্লবীর বিদায় হলো। সবশেষ ডিসেম্বরের শেষ সপ্তাহে জাপানের প্রধানমন্ত্রী শিনজো অ্যাবে ৭৫ বছর পর ঐতিহাসিক পার্ল হারবার পরিদর্শন করেন তাও আবার মার্কিন প্রেসিডেন্ট বারাক ওবামাকে নিয়ে। বলা হয় আগের হাল যেভাবে যায় পিছনের হালও সেভাবেই যেতে বাধ্য। গত ২০১৬ সালটি যেভাবে গিয়েছে সার্বিক বিচারে বিফলতার চেয়ে সফলতাই বেশি ছিল বলে মনে করছেন বিশ্লেষকগণ। কাজেই তারই পথ ধরে আগামী ২০১৭ সালটিও সফলতার দিকেই এগিয়ে যাবে বলেই আশাবাদী সকলের বিশ্বাস। স্বাগতম ২০১৭।
লেখক: ডেপুটি রেজিস্ট্রার, জাতীয় কবি কাজী নজরুল ইসলাম বিশ্ববিদ্যালয়
কৃপ্র/ এম ইসলাম