কৃষি প্রতিক্ষণ ডেস্কঃ বিশ্বজুড়ে পাটপণ্যের বহুমুখী ব্যবহার ও পরিচিতি বাড়াতে রাজধানীতে চালু হচ্ছে পাটপণ্যের সবচেয়ে বড় বিক্রয় কেন্দ্র। এ লক্ষ্যে ঢাকার বহুমুখী পাটপণ্য সেবা কেন্দ্রটিকে (জেইএসসি) সংশ্লিষ্ট উদ্যোক্তাদের বিক্রয় কেন্দ্রে রূপান্তর করা হচ্ছে। ১২ জানুয়ারি কেন্দ্রটি উদ্বোধন করবেন পাট ও বস্ত্রমন্ত্রী ইমাজ উদ্দিন প্রামাণিক। পর্যায়ক্রমে দেশের আরো পাঁচটি শহরে বিক্রয় কেন্দ্র ও কাঁচামাল ব্যাংক চালু করবে জেডিপিসি ।
ঢাকা-চট্টগ্রামসহ দেশের ছয়টি জেলায় পাটপণ্য বিক্রয় ও প্রদর্শনী কেন্দ্র রয়েছে। এছাড়া ঢাকার মানিক মিয়া এভিনিউয়ে বাংলাদেশ জুট রিসার্চ ইনস্টিটিউটের (বিজেআরআই) ভবনে রয়েছে জেডিপিসির আওতাধীন জেইএসসি কার্যালয়। সংস্থাটির অধীনে পাটপণ্যের কাঁচামাল ব্যাংকের মাধ্যমে স্থানীয় উদ্যোক্তাদের বিভিন্ন পাটের সামগ্রী বিক্রয় ও পাটের বহুমুখী ব্যবহারের কাঁচামাল সরবরাহ করা হয়।
বর্তমানে ঢাকার এ প্রদর্শনী কেন্দ্রকে বহুমুখী পাটপণ্যের একটি পরিপূর্ণ বিক্রয় ও প্রদর্শনী কেন্দ্রে রূপান্তর করা হচ্ছে। ঢাকার পর চট্টগ্রামের কার্যালয়টিকেও একইভাবে বিক্রয় কেন্দ্রে পরিণত করা হবে। প্রায় সাড়ে পাঁচ হাজার বর্গফুটের এ কেন্দ্রকে পাটপণ্যের প্রদর্শনী ও বিক্রয় কেন্দ্রে পরিণত করা হবে। পাশাপাশি সারা দেশের উদ্যোক্তাদের জন্য পাটের প্রয়োজনীয় সব ধরনের কাঁচামাল মজুদ রাখা হবে এখানে।
পাটের বহুমুখী ব্যবহার নিশ্চিতে এরই মধ্যে ৪৫০ জনকে প্রশিক্ষণ দিয়েছে জেডিপিসি। এসব উদ্যোক্তা দেশের বিভিন্ন প্রান্তে পাটপণ্য উত্পাদন করছেন। তারা বর্তমানে ২৩১ ধরনের পাটপণ্য উত্পাদন করলেও তাদের জন্য নির্দিষ্ট কোনো বিক্রয় কেন্দ্র নেই। এছাড়া প্রচারের অভাবে পাটের বহুমুখী পণ্যের সঙ্গে পরিচয় নেই দেশের সাধারণ মানুষেরও। নির্দিষ্ট বিক্রয় কেন্দ্র না থাকায় ভোক্তারাও পাটের পরিবর্তে বিকল্প পণ্যে অভ্যস্ত হয়ে উঠছে।
ফলে বাজারজাতের সুযোগ সীমিত থাকায় উদ্যোক্তাদের মধ্যে হতাশা কাজ করছে। এ সমস্যা নিরসনে পাটপণ্যের প্রদর্শনী কেন্দ্রগুলোকে বিক্রয় কেন্দ্রে রূপান্তরের পরিকল্পনা নেয়া হয়েছে বলে জানিয়েছে জেডিপিসি কর্তৃপক্ষ। শুরুতে কেন্দ্রটি প্রধানমন্ত্রীর উদ্বোধনের কথা থাকলেও ব্যস্ততার কারণে পাট ও বস্ত্রমন্ত্রী তা ১২ জানুয়ারি উদ্বোধন করবেন।
জেডিপিসির ঊর্ধ্বতন এক কর্মকর্তা জানান, শুরুতে দেশের সবচেয়ে বড় পাটপণ্য বিক্রয় কেন্দ্রটি উদ্বোধনের জন্য প্রধানমন্ত্রীর অনুমতি চাওয়া হয়েছিল। কিন্তু রাষ্ট্রীয় প্রয়োজনে প্রধানমন্ত্রী সময় দিতে না পারায় পাট ও বস্ত্রমন্ত্রী ইমাজ উদ্দিন প্রামাণিক এটি উদ্বোধন করবেন। বর্তমানে বেসরকারি প্রতিষ্ঠানগুলো বিভিন্ন ধরনের পাটপণ্য নিজস্ব ব্র্যান্ডিংয়ের মাধ্যমে বিক্রি করছে। এক্ষেত্রে এসব পাটপণ্য উচ্চমূল্যে বিক্রি এমনকি রফতানি করলেও সংশ্লিষ্ট উদ্যোক্তারা ন্যায্যমূল্য থেকে বঞ্চিত হচ্ছেন। এ সমস্যা সমাধানে জেডিপিসি উদ্যোক্তাদের পণ্য এককভাবে বিক্রির সিদ্ধান্ত নিয়েছে।
জেডিপিসির পরিচালক (প্রজেক্ট মনিটরিং) মঈনুল ইসলাম বণিক বার্তাকে বলেন, জেডিপিসি দীর্ঘদিন ধরে পাটপণ্যের বহুমুখী ব্যবহার ও উত্পাদনে কাজ করছে। বর্তমানে দেশের প্রায় ৫০০ উদ্যোক্তা পাটের বহুমুখীকরণে নিয়মিত কাজ করছেন। কিন্তু সাধারণ মানুষ পাটের ভিন্ন ব্যবহার সম্পর্কে না জানায় পণ্য বিক্রিতে সমস্যায় পড়ছেন তারা। এসব সমস্যা থেকে উত্তরণে জেডিপিসি বড় পরিসরে এ বিক্রয় কেন্দ্র চালু করছে। দেশের সর্ববৃহৎ এ কেন্দ্রের মাধ্যমে বিভিন্ন ধরনের পাটপণ্য সাধারণ মানুষের কাছে পৌঁছে দেয়া হবে। উদ্যোক্তাদের তৈরি পণ্য ন্যায্যমূল্যে ক্রয়ের পর এ কেন্দ্রে তা প্রদর্শন ও বিক্রি করা হবে।
জেডিপিসি সূত্রে জানা গেছে, পাটের বহুমুখী ও উচ্চমূল্য সংযোজিত পাটপণ্য উত্পাদন এবং ক্ষুদ্র ও মাঝারি শিল্প স্থাপনে সহায়তার উদ্দেশে বস্ত্র ও পাট মন্ত্রণালয়ের অধীন ২০০২ সালের মার্চে জেডিপিসি গঠন করা হয়। সে সময় থেকেই বেসরকারি পর্যায়ে বহুমুখী উচ্চমূল্য সংযোজিত পাটপণ্য উত্পাদনে উদ্যোক্তা তৈরিতে সুনির্দিষ্ট কর্মসূচিভিত্তিক কার্যক্রম শুরু করে জেডিপিসি।
এরই ধারাবাহিকতায় বহুমুখী পাটপণ্য উত্পাদনের লক্ষ্যে জেডিপিসি ২৫টি মাঝারি, ১০০টি ক্ষুদ্র ও ৫০০টি কুটির শিল্প কারখানা গড়ে তোলার কর্মপরিকল্পনা করছে। এসব কারখানায় ৭২ হাজার ৫৩৬ জনের কর্মসংস্থান হবে। ২০১৩ সালের ১ নভেম্বর চট্টগ্রামে জেডিপিসির পাটপণ্য প্রদর্শনী কেন্দ্র চালু করা হয়েছিল। সুনির্দিষ্ট লক্ষ্য অর্জনে এ কেন্দ্রকেও উদ্যোক্তাদের পণ্য বিক্রয় কেন্দ্রে রূপান্তর করা হবে বলে জানিয়েছেন সংশ্লিষ্ট কর্মকর্তারা।
সুত্রঃ বনিক বার্তা / কৃপ্র/এম ইসলাম