কৃষি প্রতিক্ষণ ডেস্কঃ দেশের অর্থনৈতিক উন্নয়নে আখ প্রত্যক্ষ ও পরোক্ষভাবে কার্যকরী ভূমিকা রাখছে। পার্বত্যাঞ্চলে আখ চাষের উজ্জ্বল সম্ভাবনা দেখা দিয়েছে। পাহাড়ের কৃষকদের ভাগ্য বদলে দিতে পারে আখ চাষ। বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থা একজন সুস্থ মানুষের জন্য বছরে ১৩ কেজি চিনি বা গুড় খাওয়া প্রয়োজন বলে সুপারিশ করেছে। সে হিসেবে বাংলাদেশের ১৬ কোটি মানুষের জন্য চিনি বা গুড় প্রয়োজন প্রায় ২১ লাখ টন। দেশে বর্তমানে দুই থেকে আড়াই লাখ টন চিনি এবং সাড়ে চার লাখ থেকে পাঁচ লাখ টন গুড় উৎপাদিত হয়। কাজেই দেখা যায়, দেশের মোট চাহিদার তুলনায় চিনি ও গুড় উৎপাদন অপ্রতুল।
কৃষি পার্বত্যাঞ্চলের আদি পেশা ও জীবিকার প্রধান উৎস। কিন্তু পার্বত্যাঞ্চলের কৃষি ব্যবস্থা অনুন্নত ও পশ্চাদপদ। আখ পার্বত্যাঞ্চলে একটি নতুন অর্থকরী ফসল। খরা সহিষ্ণু ও প্রতিকূল আবহাওয়ায় দীর্ঘ দিন টিকে থাকার কারণে পার্বত্যাঞ্চলে আখ চাষের সম্ভাবনা দিন দিন উজ্জ্বল হচ্ছে। বিশেষ করে মৃত্তিকা, পরিবেশ ও মানবদেহের জন্য ক্ষতিকর ও বন উজাড়কারী তামাক চাষের পরিবর্তে এই অঞ্চলে আখ চাষের বিপুল সম্ভাবনা রয়েছে।
বাংলাদেশ সুগারক্রপ গবেষণা ইনস্টিটিউট (ভূতপূর্ব বাংলাদেশ ইক্ষু গবেষণা ইনস্টিটিউট) ২০০৬ সাল থেকে পার্বত্যাঞ্চলে ইক্ষু গবেষণা ও ইক্ষু চাষ সম্প্রসারণের লক্ষ্যে কাজ করে যাচ্ছে। বাংলাদেশ সুগারক্রপ গবেষণা ইনস্টিটিউটের বিজ্ঞানী, মাঠকর্মীদের নিরলস প্রচেষ্টা ও কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তরসহ সংশ্লিষ্ট সবার সহযোগিতায় বর্তমানে এ অঞ্চলে আখ তামাকের বিকল্প একটি লাভজনক অর্থকরী ফসল হিসেবে কৃষকদের মধ্যে ব্যাপক সাড়া জাগিয়েছে।
ইতোমধ্যে প্রকল্পটি পার্বত্য চট্টগ্রামে ব্যাপক গ্রহণযোগ্যতা পেয়েছে। পার্বত্য এলাকায় বেড়েছে বাণিজ্যিক আখ চাষ। গবেষণায় প্রাপ্ত তথ্য অনুযায়ী, ২০০৫-২০০৬ অর্থ বছরে পার্বত্য চট্টগ্রামের তিনটি জেলা রাঙ্গামাটি , খাগড়াছড়ি ও বান্দরবানে মোট ১ হাজার ৫০ হেক্টর (প্রায়) আখ চাষ হতো এবং গড় ফলন ৫০ থেকে ৭০ টন। পার্বত্য চট্টগ্রামে আখ চাষ সম্প্রসারণের জন্য পাইলট প্রকল্প বাস্তবায়নের ফলে বর্তমানে পার্বত্যাঞ্চলে আখ আবাদের পরিমাণ দাঁড়িয়েছে ২ হাজার ২৮০ হেক্টর (প্রায়) এবং আখ গড় ফলন দাঁড়িয়েছে ১৩০ থেকে ১৬০ টন।
দেশের এক দশমাংশ জমি তিন পার্বত্য জেলায় এবং বিভিন্ন ফসল উৎপাদনের সক্ষম ও রপ্তানির যোগ্য। এরই মধ্যে গবেষণার ফলাফল অনুযায়ী- পার্বত্যাঞ্চলে মাটি ও জলবায়ু আখ ও সাথী ফসল চাষের জন্য খুবই উপযোগী এবং অধিক সম্ভাবনাময় বলেন রাঙামাটি কৃষি অধিদপ্তরে অতিরিক্ত পরিচালক একেএম হারুন অর রশীদ। আদিকাল থেকে পাহাড়ে জুম চাষ হলেও বর্তমানে পাহাড়িরা জুম চাষের পাশাপাশি পাহাড়ের পাদদেশে আখের সাথে বিভিন্ন সাথী ফসল আবাদ করছে।
পার্বত্য এলাকায় আখ ও সাথী ফসল চাষের মাঠ পর্যায় মূল্যায়নের দেখা গেছে, ১ একর জমিতে শুধুমাত্র আখ চাষ করে নীটলাভ হিসেবে এক লাখ ২০ হাজার থেকে এক লাখ পঞ্চাশ হাজার টাকা পাওয়া যায় এবং আখের সাথে সাথী ফসল চাষ করে প্রতি একরে নীটলাভ হিসেবে পঁয়তাল্লিশ হাজার থেকে পঞ্চাশ হাজার টাকা পাওয়া যায়। সে হিসেবে একই জমিতে আখ ও সাথীফসল চাষ করে প্রতি একরে নীটলাভ হিসেবে সর্বমোট এক লাখ পঞ্চাশ হাজার থেকে দুই লাখ টাকা পাওয়া যায়।
বাংলাদেশ ইক্ষু গবেষণা ইনস্টিটিউটের হিসেব মতে, তিন পার্বত্য জেলায় বছরে গুড়ের চাহিদা প্রায় ১০৬ টন। এরই মধ্যে প্রকল্পের আওতায় বছরে গুড় উৎপাদন হয় শুধুমাত্র ২৬ টন এবং চাহিদার অবশিষ্ট গুড় উত্তরবঙ্গের বিভিন্ন জেলা থেকে আমদানি করতে হয়। এ ক্ষেত্রে এই ঘাটতি পূরণের জন্য পার্বত্য চট্টগ্রামে ইক্ষু চাষ সম্প্রসারণের জন্য পাইলট প্রকল্পের আওতায় আরো উৎপাদন বাড়ানো যেতে পারে। পার্বত্য অঞ্চলে চিবিয়ে খাওয়ার আখের জুস এর চাহিদাও ব্যাপক রয়েছে। এই অঞ্চলে উৎপাদিত চিবিয়ে খাওয়ার আখ থেকে জুসের চাহিদা পূরণ করা সম্ভব।
সুত্রঃ বাসস / কৃপ্র/এম ইসলাম