কৃষি প্রতিক্ষণ ডেস্কঃ গাজীপুরের বঙ্গবন্ধু সাফারি পার্কে মরুভূমি অঞ্চলের উটপাখি দেশে প্রথমবারের মতো বাচ্চা জন্ম দিয়েছে। দীর্ঘ প্রতীক্ষার পর মা হয়েছে এই উটপাখি। ৪০ দিন ডিমে তা দেয়ার পর গত সপ্তাহে ফুটফুটে বাচ্চা হয়। বাচ্চাটি এখন বেশ সুস্থ আছে।
এ পাখি বাংলাদেশের পরিবেশে ডিম পেড়ে বাচ্চা ফোটানোর ঘটনায় উটপাখির বংশ বিস্তারের সম্ভাবনা দেখছেন বিশেষজ্ঞরা। বাংলাদেশে প্রাকৃতিক পরিবেশে এটিই প্রথম ডিম থেকে উটপাখির বাচ্চা ফোটার ঘটনা। এখন থেকে প্রায় দেড় মাস আগে ১৫টি ডিমে পুরুষ ও নারী উটপাখি ‘তা’ দিতে শুরু করে। কিছুদিন আগে মায়ের সঙ্গে বাচ্চার ঘুরে বেড়ানোর দৃশ্য পার্কের লোকেদের নজরে আসে।
সাফারি পার্কের বন্যপ্রাণি পরিদর্শক আনিসুর রহমান জানান, বাংলাদেশে এই প্রথম কোনো উটপাখি ডিমে ‘তা’ দিয়ে বাচ্চা জন্ম দিতে পেরেছে।
তিনি জানান, উটপাখির বাচ্চাটির আকার মুরগির বাচ্চার চেয়ে একটু বড়। বাচ্চাটি জন্ম নেয়ার প্রথম কয়েক দিন বাবার পালকে মুখ লুকিয়ে বসেছিল। এর দুদিন পর বাচ্চাটি মা-বাবার সঙ্গে ঘুরে বেড়ায়।
উটপাখি লালনপালনে বাবা-ই বেশি ভূমিকার রাখে। কারণ একটি পুরুষ উটপাখি দুই থেকে তিনটি নারী উটপাখিকে নিয়ে সংসার গড়ে তোলে। একটি নারী উটপাখি প্রতিবছর ১০টির বেশি ডিম দিয়ে থাকে। ডিম থেকে বাচ্চা ফোটার আগ পর্যন্ত দিনের বেলায় মা ও রাতের বেলায় বাবা উটপাখি ডিমে ‘তা’ দেয়। ১২টি ডিম নিয়ে উটপাখি তা দিলেও গত ১৬ জানুয়ারি ১টি বাচ্চা ফুটে। ১১টি ডিম এখনো তা দেয়া হচ্ছে। ডিম পাড়ার পর দুজনের মিলে ৪০-৪২ দিন পর্যন্ত তা দেয়।
সাফারি পার্ক সূত্রে জানা যায়, প্রায় তিন বছর আগে আফ্রিকা থেকে ৬টি উট পাখি আনা। এর মধ্যে ২টি পরুষ ও ৪টি স্ত্রী পাখি। পার্কে দর্শনার্থীদের চাপ এড়ানোর জন্য নেয়া হয়েছে বিশেষ ব্যবস্থা। বাচ্চা ও মা উটপাখিকে নিবিড় পর্যবেক্ষণে রেখেছে পার্ক কর্তৃপক্ষ। সাফারি পার্ক কর্তৃপক্ষ জানায়, ২০১৩ সালে দক্ষিণ আফ্রিকা থেকে আড়াই বছর বয়েসী ৬টি উটপাখি আনা হয়। এর মধ্যে, দুটি পুরুষ ও ৪টি নারী। দুই থেকে চার বছর বয়স হলে উটপাখি প্রজননক্ষম হয়।
গত বছরের নভেম্বরের মাঝামাঝি আবারও নারী উটপাখিগুলো ডিম দিতে শুরু করে। বেষ্টনিতে বালু মিশ্রিত মাটি দিয়ে ওরা নিজেরাই গর্ত করে ডিম পাড়ার জায়গা তৈরি করে। এভাবে ২০টি ডিম জমা করে তারা। মরুভূমিতে একটি নারী উটপাখি একসঙ্গে ৩০ থেকে ৪০টি বাচ্চা লালনপালন করে। প্রাপ্তবয়স্ক একটি উটপাখির উচ্চতা ৩ মিটার এবং ওজন হয় ১৫০ কেজি। ঘণ্টায় উটপাখি প্রায় ৭০ কিলোমিটার গতিতে ছুটতে পারে। পুরুষ উটপাখির পাখার পালকের রঙ কালো। নারীদের পালক ধূসর বাদামি। পাখা দুটি মেলে ধরলে একটি উটপাখির দৈর্ঘ্য হয় প্রায় সাত ফুট। প্রাকৃতিক পরিবেশে ৪০-৪২ বছর আয়ুষ্কাল হলেও আবদ্ধ পরিবেশে তাদের আয়ুষ্কাল হয় ৫০-৬০ বছর।
সাফারি পার্কে গিয়ে দেখা গেছে, উটপাখির বাচ্চ্াটি তার বাবার আশপাশে ঘুরে বেড়াচ্ছে। বাবাও ছানাটির দিকে তীক্ষ্ণ নজর রাখছে। বাচ্চাটিও সুযোগ পেলেই ছুটে চলার চেষ্টা করছে। বেষ্টনির আরেক পাশে এক পুরুষ উটপাখি বেশ কয়েকটি ডিমে তা দিচ্ছে। পার্ক কর্তৃপক্ষ আশা করছে, আর কিছুদিনের মধ্যে আরও কয়েকটি উটপাখির ছানা জন্ম নিতে পারে। উটপাখির ওই বেষ্টনিতে তাদের খাবার হিসেবে ঘাস, শাক-সবজি, পাকা কলা, ভাঙা ভুট্টা দেয়া হচ্ছে। সাফারি পার্কে উটপাখির ছানা দেয়ার খবর ছড়িয়ে পড়লে বিভিন্ন এলাকা থেকে নতুন অতিথিকে দেখার জন্য দর্শনার্থীরা ভিড় করছে। পার্কে নতুন অতিথি আসায় পার্ক কর্তৃপক্ষও খুশি।
সুত্রঃ বাসস/ কৃপ্র/এম ইসলাম