কৃষি প্রতিক্ষণ ডেস্কঃ আলুর দাম কম থাকায় লোকসানে পড়েছেন রংপুরের আলুচাষীরা। লেট ব্লাইট রোগে আক্রান্ত হওয়ায় কমে গেছে আলুর ফলনও। এতে আলু চাষ করে চরম হতাশায় পড়েছেন স্থানীয় কৃষকরা। তবে কৃষি বিভাগ দাবি করছে, যথাসময়ে ক্ষেতে ছত্রাকনাশক ওষুধ ব্যবহার করায় লেট ব্লাইট রোগ নিয়ন্ত্রণ করা গেছে। তাছাড়া আবহাওয়া ভালো হওয়ায় বর্তমানে রোগের প্রাদুর্ভাব নেই বললেই চলে।
আলুচাষীরা বলছেন, ক্ষেতে ঘন ঘন ছত্রাকনাশক ওষুধ ব্যবহারের ফলে একদিকে যেমন খরচ বাড়ছে, অন্যদিকে ফলনও কমে গেছে। এতে উত্পাদন খরচ না ওঠার শঙ্কায় রয়েছেন তারা। তারাগঞ্জ উপজেলার ইকরচালি ইউনিয়নের আলুচাষী জয়তুল ইসলাম বলেন, যেসব কৃষক অল্প জমিতে দেশী জাতের আলু রোপণ করেছিলেন, তাদের প্রায় ৯০ ভাগ জমিতেই লেট ব্লাইট রোগে আক্রান্ত হয়ে সব গাছ মারা গেছে। আমার নিজেরও ১৫ শতক জমির দেশী আলুর গাছ মারা গেছে। এছাড়া ৫০ শতাংশ জমিতে সেভেন ও ক্যাডিনাল জাতের আলু আবাদ করেছিলাম। ওই জমিতেও ছত্রাকের আক্রমণ হয়েছিল। কিন্তু সময়মতো ছত্রাকনাশক ওষুধ ব্যবহার করায় গাছ রক্ষা পেয়েছে।
তিনি বলেন, গত বছর জমিতে মাত্র ১ হাজার টাকার ছত্রাকনাশক ওষুধ ব্যবহার করেছিলাম। কিন্তু চলতি বছর এরই মধ্যে ছত্রাক দমনে ৪ হাজার টাকা খরচ হয়েছে। সদর উপজেলার চন্দনপাঠ ইউনিয়নের কৃষক আব্দুল হালীম বলেন, এ বছর তার ৪ দোন (১০০ শতাংশ) জমির আলুগাছ লেট ব্লাইট রোগে আক্রান্ত হয়েছে। ছত্রাকনাশক ব্যবহার করায় রোগের প্রকোপ কমেছে ঠিকই, কিন্তু আক্রান্ত জমিতে আলুর ফলন বৃদ্ধির জন্য ইউরিয়াসহ অন্য কোনো সার প্রয়োগ করতে পারছেন না। এতে ফলন অনেক কমে যাওয়ার আশঙ্কা রয়েছে। গত বছর ১ দোন (২৫ শতাংশ) জমিতে আলুর ফলন হয়েছিল ৬৪ মণ। কিন্তু এ বছর ফলন অর্ধেকে নেমে আসবে বলে মনে হচ্ছে।
তিনি বলেন, প্রতি দোন জমিতে এরই মধ্যে ১০ হাজার টাকা খরচ হয়েছে। কিন্তু বাজারে প্রতি কেজি গ্রানুলা জাতের আলু বিক্রি হচ্ছে ৪-৫ টাকা এবং ক্যাডিনাল জাতের আলু বিক্রি হচ্ছে ৭-১০ টাকা দরে। আগামীতে বাজারে এ দাম থাকলে আলুচাষীরা পথে বসবেন। কাউনিয়া সদর উপজেলার ২ নং খানসামা ইউনিয়নের আলুচাষী রাজু মিয়া বলেন, আমি ২৪ দোন জমিতে আগাম গ্রানুলা জাতের আলু আবাদ করেছিলাম। প্রতি দোন জমিতে আলু উত্পাদন হয়েছে প্রায় ৩৪ মণ। আর খরচ পড়েছে ১২ হাজার টাকার মতো। ১৫ দিন আগে ২০০ টাকা দরে প্রতি মণ আলু বিক্রি করেছি। ফলে প্রতি দোন জমিতে লোকসান হয়েছে ৫ হাজার ২০০ টাকার মতো। এছাড়া আরো ২৪ দোন জমির অর্ধেকই লেট ব্লাইট রোগে আক্রান্ত হয়েছে।
কৃষি বিপণন অধিদপ্তর সূত্রে জানা গেছে, জেলার বিভিন্ন হাটবাজারে গত বছর একই সময় প্রতি কেজি গ্রানুলা, ক্যাডিনাল ও দেশী জাতের আলু বিক্রি হয়েছে যথাক্রমে ১১ থেকে ১২, ১৪ থেকে ১৬ এবং ২০ থেকে ২২ টাকায়। বর্তমানে গ্রানুলা জাতের আলু সাড়ে ৪ থেকে ৫ টাকায়, ক্যাডিনাল আলু ৭ থেকে ১০ এবং দেশী আলু ১৪-১৫ টাকায় বিক্রি হচ্ছে। জেলা মার্কেটিং কর্মকর্তা এএসএম হাসান সারওয়ার বলেন, চলতি বছর বাজারে দাম কম হওয়ার অন্যতম কারণ হচ্ছে, এ অঞ্চলে আগাম আলুর চাষ বেড়েছে। ফলে এলাকার অধিকাংশ চাষীই এখন আগাম আলুর চাষ করেন। এতে বাজারে চাহিদার তুলনায় আলুর জোগান বেড়ে গেছে, তাই দাম কমে গেছে।
কৃপ্র/এম ইসলাম