কৃষি প্রতিক্ষণ ডেস্কঃ শরিফা আমাদের জনপ্রিয় ফলগুলোর একটি। শরিফার ইংরেজি নাম- Custard apple, sugar apple, sweetsop ও বৈজ্ঞানিক নাম- Annona squamosa । দক্ষিণ আমেরিকার নিরক্ষীয় অঞ্চলে শরিফার জন্মস্থান। শরিফার অন্য নাম ‘বেহেশতের ফল’ ও ‘সীতা ফল’ নামে পরিচিত। বর্তমানে ভারত, বাংলাদেশ, চীন, ফিলিপাইন, মিসর ও আফ্রিকাসহ বহু দেশেই শরিফার গাছ দেখতে পাওয়া যায়।
খেতে সুম্বাদু ও জনপ্রিয় তবে ব্যাপকভাবে আমাদের দেশে এ ফলের চাষ হয় না। এ ফল দেখতে অনেকটা আতার মতো। আকৃতি উঁচু-নিচু ঢেউ খেলানো এবং খেতে বেশ মিষ্টি ও সুস্বাদু। ওই ফল আতার চেয়ে কিছুটা বড় ও মসৃণ। সাধারণভাবে গ্রীষ্ম প্রধান ও শুষ্ক জলবায়ু শরিফা চাষের জন্য উপযুক্ত। প্রায় সব রকমের মাটিতেই শরিফা জন্মে। তবে গাছের গোড়ায় পানি জমলে বিশেষ ক্ষতি হয়। প্রধানত বীজ থেকেই এর বংশবিস্তার করা হয়।
পানি দাঁড়ায় না এমন উঁচু জমিতে, বসতবাড়ির খোলা জায়গায় এবং অল্প ছায়াযুক্ত স্থানেও শরিফা গাছ লাগানো যায়। তবে বেলে দোঁআশ মাটিতে সবচেয়ে ভাল হয়। অম্ল স্বাদযুক্ত পাহাড়ি মাটিতেও এ গাছ ভাল হয়। শরিফা গাছ শুষ্ক ও গরম পরিবেশ পছন্দ করে।
বীজ থেকে সাধারণত শরিফার চারা তৈরি করা হয়। বীজের গাছও দুই-তিন বছর বয়স থেকে ফল দেয়া শুরু করে। পুষ্ট ও নিরোগ বীজ থেকে চারা উত্পাদন করতে হয়। বীজ থেকে চারা অংকুরিত হতে দুই-তিন মাস সময় লাগে। বীজের আবরণ বেশ শক্ত। তাই পানিতে ভিজিয়ে বপন করলে তাড়াতাড়ি গজায়। বীজতলায় এবং পলিথিনের ব্যাগে চারা উত্পাদন করা যায়। ৪ থেকে ৫ মাস বয়সী সুস্থ চারা বা কলম মূল জমিতে লাগাতে হয়। জুন-জুলাই মাস চারা রোপণের জন্য উত্তম। ইদানিং গ্রাফটিং করেও চারা তৈরি করা হচ্ছে। ৬ থেকে ১২ মাস বয়সী চারার উপর ভিনিয়ার এবং ক্লেফট্ গ্রাফটিং করা হয়। ফেব্রুয়ারি মাস থেকে জুন-জুলাই মাস পর্যন্ত গ্রাফটিং করার উপযুক্ত সময়।
জমি পরিষ্কার করে চাষ ও মই দিয়ে সারি থেকে সারি এবং গাছ থেকে গাছের দূরত্ব ৪ মিটার বজায় রেখে ৬০x৬০x৬০ সেমি গর্ত করে প্রতি গর্তে ২০ কেজি পচা গোবর, ২৫০ গ্রাম টিএসপি, ২৫০ গ্রাম এমপি সার ভালভাবে মিশিয়ে গর্ত ভরাট করে ১৫ থেকে ২০ দিন রাখতে হবে। এর পর গর্তের ঠিক মাঝখানে খাড়াভাবে চারা রোপণ করতে হবে। রোপণের পর পরই গর্তে পানি দিতে হবে। প্রতি বছর ১ থেকে ২ বছর বয়সী গাছে ফেব্রুয়ারি ও অক্টোবর মাসে দুই কিস্তিতে মোট ১৫ থেকে ২০ কেজি গোবর, ২০০ গ্রাম ইউরিয়া, ২০০ গ্রাম টিএসপি, ২০০ গ্রাম এমপি সার প্রয়োগ করতে হবে। সার দেয়ার পর পর সেচের ব্যবস্থা করতে হবে। গাছের বয়স বাড়ার সাথে সাথে প্রতিবছর সারের পরিমাণ বাড়াতে হবে। ফল ধরার আগ পর্যন্ত প্রায় তিন বছর গাছের দ্রুত বাড়ার জন্য ইউরিয়া এবং এমপি সারের ব্যবহূত মোট পরিমাণকে ভাগ করে প্রতি ২ মাস পর পর ব্যবহার করা যেতে পারে। ৮ থেকে ১০ বছরের একটি ফলন্ত গাছে প্রতিবছর ফেব্রুয়ারি, মে এবং অক্টোবর মাসে ১৫০ থেকে ১৭৫ গ্রাম ইউরিয়া, ১৫০ থেকে ১৭৫ গ্রাম টিএসপি ও ১২৫ থেকে ১৫০ গ্রাম করে এমপি সার প্রয়োগ করতে হবে।
এ গাছ ঝোপজাতীয় ছোটগাছ বীজের চারার গাছ থেকে ২-৩ বছর পর থেকেই ফল পাওয়া যায়। সাধারণত মে-জুন মাসে ফুল আসে। আগস্ট-সেপ্টেম্বরের দিকে ফল পাকে। আশার কথা, বিলুপ্তপ্রায় এই ফলটি টিকিয়ে রাখতে এর বাণিজ্যিক চাষ শুরু হয়েছে পাবনার ঈশ্বরদীতে। খরচ কম ও লাভজনক হওয়া শরিফা চাষে আগ্রহ বাড়ছে কৃষকদের। ক্যারোটিন, ভিটামিন সি ও ক্যালসিয়ামসমৃদ্ধ সুস্বাদু ফল শরিফার রয়েছে অনেক ঔষধি গুণও। পাকা ফল বলকারক, বাত ও পিত্তনাশক, তৃষ্ণা শান্তিকারক, বমিনাশক, রক্ত বৃদ্ধিকারক ও মাংস বৃদ্ধিকারক। শরিফার শিকড় রক্ত আমাশয় রোগে হিতকর।
সুত্রঃ যায়যায় দিন / কৃপ্র/এম ইসলাম