কৃষি প্রতিক্ষণ ডেস্কঃ মাছ চাষ, মাছের রেণু ও পোনা উৎপাদনের পর সবুজচাষেও বিপ্লব ঘটিয়েছেন বিশ্বনাথের উদ্যমী যুবক বেলাল। মৎস্য চাষের পাশাপাশি সফলতার সাথে নিজের পরিচালিত ড্রিম এগ্রো’র একটি প্রকল্পে তিনি এবার প্রায় ২০ হাজার চারা রোপণ করেছেন ক্যাপসিকামের (মিষ্টি মরিচ)। এছাড়া ৪ হাজার ৭শ’ চারা রোপণ করেছেন নাগা মরিচের (স্টার চিলি)। ইতোমধ্যেই গাছে গাছে ফলন ধরতে শুরু করেছে উচ্চমূল্যের সবজি ক্যাপসিকাম ও নাগা মরিচের।
সিলেটের বিশ্বনাথের বেলাল আহমদ ইমরান এক উদ্যমী যুবক। শিক্ষা জীবন সমাপ্তির পর পরই চাকরির আশায় না থেকে শিখে নেন তথ্য-প্রযুক্তির নানা দিক। দ্রুততম সময়ে অর্জন করেন প্রযুক্তির বেসিক আইডিয়া। তবে অর্জিত জ্ঞান নিঃস্বার্থভাবে বিলিয়ে দিয়েছেন তরুণ সমাজে। তার সহযোগিতায় এলাকার তরুণ-যুবারা কম্পিউটার শিক্ষায় নিজেদের অনেকখানি এগিয়ে নেন।
উদ্যমী যুবক এখানেই থেমে থাকেননি। সময়ের সাথে সাথে অব্যাহত থাকে তার অগ্রযাত্রা। আর কর্মজীবনের শুরুতেই তিনি হাত দেন মৎস্য চাষে। নিজ কর্মনিষ্ঠায় অল্পদিনেই সফলতা পান এ যাত্রায়ও। ফলে একের পর এক নতুন উদ্যোগ গ্রহণ করে প্রকল্প সম্প্রসারণে। প্রতিষ্ঠা করেন জিউল মাছের খামার। দেশী শিং-মাগুর চাষে তার সফলতার বিষয়টি সর্বমহলে ব্যাপক প্রশংসিত হয়। তখন থেকেই তার নাম ডাক ছড়িয়ে পড়ে সিলেট বিভাগের সীমানা পেরিয়ে সারাদেশে। বেলালের সফলতার সংবাদ পেয়ে আগ্রহী উদ্যোক্তারা তার সাথে যোগাযোগ করতে থাকেন প্রতিনিয়ত। নিজের সফলতার কর্মপরিকল্পনা খোলামনে ব্যক্ত করেন। তিলে তিলে বুঝিয়ে দেন তথ্য উপাত্তসহ সফল হওয়ার যাবতীয় কৌশল। আর বেলালের কাছ থেকে প্রাপ্ত কর্মপরিকল্পনা গ্রহণ ও প্রয়োগ করে সফল হয়েছে অনেকেই।
মৎস্য চাষে সফলতা পাওয়ার পর বেলাল আহমদ ইমরানের স্বপ্ন আরো প্রসারিত হতে থাকে। তাইতো মাত্র কিছুদিনের মধ্যেই তিনি শুরু করেন জিউল মাছের রেণু-পোনা উৎপাদন। নিজ খামারে উৎপাদিত পোনা সংগ্রহে চাষিদের মাঝে অভাবনীয় সাড়া পান তিনি। ফলে এ কাজেও তাকে আর পেছনে তাকাতে হয়নি। আর এসব কাজে বেলাল যেমন পেয়েছেন প্রবল উৎসাহ তেমনি পেয়েছে স্বীকৃতিও। ইতোমধ্যেই মৎস্যচাষে সর্বোচ্চ জাতীয় পুরস্কার (বঙ্গবন্ধু জাতীয় কৃষি পুরস্কার) ওঠেছে তার হাতে।
বেলাল আহমদ ইমরানের কৃষি প্রকল্পের সর্বশেষ সংযোজন হচ্ছে সবজি চাষ। তবে সফলতার সাথে চলছে মৎস্য চাষও। ৪ বছর ধরে তিনি চাষ করেছেন ক্যাপসিকাম (মিষ্টি মরিচ)। প্রতিবছরই ভাল ফলন পেয়েছেন তিনি। বেলাল এবার ক্যাপসিকামের চারা রোপণ করেছেন প্রায় ২০ হাজার। এছাড়া ৪ হাজার ৭শ’ চারা রোপণ করেছেন নাগা মরিচের। ইতোমধ্যেই গাছে গাছে ধরেছে ক্যাপসিকাম। কিছুদিনের মধ্যে গাছের ডালে ডালে ঝুলবে নাগা মরিচও। ফলে আর মাত্র ক’দিন পরই বাজারে ওঠবে বেলালের উৎপাদিত এসব ক্যাপসিকাম ও মরিচ।
বেলালের একের পর এক সফলতা অবলোকন করে তার এলাকাসহ বিভিন্ন স্থানের লোকজন উদ্বুদ্ধ হচ্ছে মাছ ও সবজি চাষ তথা কৃষিকাজে।
বেলালের সহযোগিতায় ইতোমধ্যে বিশ্বনাথসহ দেশের বিভিন্ন স্থানের শতাধিক ব্যক্তি মাছ, ক্যাপসিকাম ও নাগা মরিচ চাষ করছেন। তাদের মধ্যে অধিকাংশ ব্যক্তি মাছ চাষ করলেও বেশ কয়েকজন ২/৩ বছর ধরে চাষ করছেন উচ্চমূল্যের সবজি ক্যাপসিকাম ও নাগা মরিচ। তাছাড়া বেলালের উৎপাদিত ক্যাপসিকামের চারা সরকারি বিভিন্ন প্রদর্শনীতেও নেয়া হচ্ছে।
বেলাল আহমদ ইমরানের সাথে আলাপকালে তিনি বলেন, ইতোপূর্বে মাছ চাষে সফলতা পাওয়ায় ক্যাপসিকাম চাষ শুরু করি। ৪ বছর ধরে আমি উচ্চমূল্যের এ সবজি চাষ করছি। সফলতাও পেয়েছি প্রতিবছর। শুরুতে ক্যাপসিকাম অনেকটা অপরিচিত থাকলে বর্তমানে এটা পাওয়া যাচ্ছে সিলেটের বিভিন্ন বাজারে, যাচ্ছে রাজধানীসহ দেশের বিভিন্ন স্থানেও। ক্যাপসিকাম চাষে আমার এ সফলতার পেছনে বিশেষ অবদান রয়েছে কৃষি ও গণমাধ্যম ব্যক্তিত্ব শাইখ সিরাজ, সিলেট কৃষি বিশ্ববিদ্যালয়ের উদ্যান তথ্য বিভাগের প্রধান ড. শহীদুল ইসলাম ও বিশ্বনাথ উপজেলার সাবেক কৃষি কর্মকর্তা খাইরুল আমীনের। তারা আমাকে এ ব্যাপারে পরামর্শ প্রদানসহ সার্বিকভাবে সহযোগিতা করেছেন।
এ ব্যাপারে বিশ্বনাথ উপজেলা কৃষি কর্মকর্তা মো. আলী নূর বলেন, বেলাল একজন সফল কৃষক। ইতোমধ্যে তিনি জিউল মাছ, ক্যাপসিকাম ও নাগা মরিচ চাষে সফল হয়েছেন। কঠোর পরিশ্রমী ও উদ্যোমী এ যুবক কৃষিকাজে অনেককেই অনুপ্রেরণা যোগাচ্ছেন। তাকে অনুসরণ করে ইতোমধ্যে বিশ্বনাথসহ দেশের বিভিন্ন স্থানে অনেকে মাছ ও সবজি চাষে সম্পৃক্ত হয়েছে।
সিলেট কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তরের উপ-পরিচালক মো. আবুল হাশেম বলেন, ক্যাপসিকাম একটি উচ্চমূল্যের সবজি। সিলেটে এ সবজি খুব কমই চাষ হয়। তবে বিশ্বনাথের বেলাল ইতোমধ্যে ক্যাপসিকাম চাষে সফল হয়েছেন। তিনি বলেন, প্রবাসী অধ্যুষিত সিলেট অঞ্চলে এখনো অনেক জমি অনাবাদি থাকে। বেলালের মতো সচেতন ও উদ্যোমী যুবকরা কৃষিকাজে এগিয়ে আসলে কোনো জমি পতিত থাকবে না। আর এটা সম্ভব হলে তারা যেমন ব্যক্তিগতভাবে লাভবান হবে তেমনি দেশও এর সুফল পাবে।
সুত্রঃ বাসস / কৃপ্র/এম ইসলাম