কৃষি প্রতিক্ষণ ডেস্কঃ নওগাঁ জেলার ধামইরহাট উপজেলায় “বরেন্দ্র এলাকায় খালে পানি সংরক্ষণের মাধ্যমে সেচ সম্প্রসারণ প্রকল্পের আওতায় প্রায় সাড়ে ৬শ’ হেক্টর জমিতে সেচ সুবধিা সৃষ্টি করে অতিরিক্ত ফসল উৎপাদনের পদক্ষেপ গৃহিত হয়েছে। প্রায় নিষ্ফলা এসব জমিতে ধান, গম, পাট, ভুট্টা, সরিষাসহ বিভিন্ন ফসল উৎপাদন করে কৃষকরা উপকৃত হচ্ছেন।
বরেন্দ্র বহুমুখী উন্নয়ন কর্ত্তৃপক্ষ পত্নিতলা রিজিওনের নির্বহী প্রকৌশলী মোঃ আব্দুল মালেক জানিয়েছেন এই এলাকা ঠা ঠা বরেন্দ্রভূমি অধ্যুষিত খরাপ্রবন অঞ্চল। সেচ সুবিধার অভাবে এই এলাকার প্রচুর পরিমাণ জমি অনাবাদি থাকতো। এই প্রকল্পের আওতায় এসব অনাবাদি জমি সেচসুবিধা দিয়ে ফসল উৎপাদনের আওতায় আনা সম্ভব হয়েছে। ৮ কোটি টাকা ব্যয়ে এই প্রকল্প হাতে নেয়া হয়েছে।
এই প্রকল্পের আওতায় উপজেলার শিমুলতলী নামক স্থানে আত্রাই নদীর দহে একটি পন্টুন স্থাপন করা হয়েছে। পন্টুনে ২ কিউসেক সেন্টিফিগাল মাপের ৯টি পাম্পের দ্বারা পানি উত্তোলন করা হচ্ছে। উত্তোলিত পানি ৪শ’ মিলিমিটার আয়তন বিশিষ্ট ৩টি পাইপের মাধ্যমে ৬ কিলোমিটার দূরে উপজেলার আগ্রাদ্বিগুন ইউনিয়নের আওয়ালদিঘী মৌজায় তিনটি খাড়ির সংযোগস্থলে নেয়া হচ্ছে। প্রায় ১৭ কিলোমিটার দীর্ঘ এই খাড়িতে পানি সংরক্ষণ করা হচ্ছে। সংরক্ষিত এই পানি থেকে আগ্রাদ্বিগুণ ইউনিয়নের মনোহরপুর, কাশিপুর, আওয়ালদিঘী এবং কামারখন্ড গ্রামের কয়েকশ কৃষক তাদের জমিতে ফসল উৎপাদন করে তাদের ভাগ্য বদল করেছেন।
এই প্রকল্পের আওতায় আবাদপুর নামক স্থানে একটি সোলার পাম্প বসানো হয়েছে। এই সোলার থেকে উৎপাদিত বিদ্যুতের দ্বারা বিভিন্ন স্থানে শ্যালোমেশিন চালিয়ে ঐ সংরক্ষিত পানি থেকে সেচ দিয়ে কৃষকরা ফসল উৎপাদিত করে থাকেন। এ ছাড়াও আবাদপুর নামক স্থানে খাড়িতে নির্মাণ করা হয়েছে একটি ক্রসড্যাম। এর ফলে সারা বছর এই খালে পানি সংরক্ষিত থাকবে। সেই পানি দিয়ে কৃষকরা সেচ সুবিধ নিয়ে বিশেষ করে রবি মৌসুমে প্রয়োজনমত ফসল উৎপাদন করতে পারবেন। এছাড়াও ক্রসড্যামটি ব্যবহৃত হচ্ছে ফুটওভার হিসেবে। এই ফুটওভার ব্রীজ দিয়ে প্রতিদিন হাজার হাজার মানুষ গন্তব্যে যাতায়াত করতে পারছেন।
প্রকল্প এলাকা মনোহরপ্রর গ্রামের কৃষক আব্দুর রহমান ও মোজাম্মেল হক, কাশিপুর গ্রামের কৃষক মজিবর রহমান, আওয়ালদিঘী মৌজার কৃষক নজরুল ইসলাম জানিয়েছেন এই খাড়িটি ডিসেম্বর মাসের পর খরা মৌসুমে আর কোন পানি থাকে না। ১৫ থেকে ২০ ফিট গর্ত করে সেখানে শ্যালো মেশিন চালিয়ে চাষাবাদ করা হতো। যা ছিল কৃষকদের নিকট অত্যন্ত কষ্টসাধ্য। ফসলও তেমন উৎপাদিত হতো না। বরেন্দ্র উন্নয়ন কর্ত্তৃপক্ষের উদ্যোগে নদী থেকে পানি এনে খাড়িতে সংরক্ষণের ফলে মামুদপুর হতে আবাদপুর এবং কাশিপুর হতে আবাদপুর পর্যন্ত আগ্রা খালের দুইধারের জমিতে সেচ সুবিধা নিশ্চিত হয়েছে।
এই খাড়িতে প্রায় ৪টি স্থানে ২৫০ মিঃমিঃ পাইপ লাইনের মাধ্যমে সোলার পাম্প দিয়ে সরাসরি মনোহরপুর, কাশিপুর, আওয়ালদিঘী ও কামারখন্ড মৌজার জমিতে সেচ দেয়া হচ্ছে। এতে করে বরেন্দ্র এলাকার এই অঞ্চলে অনেক অনাবাদি জমি সেচ সুবিধার আওতায় আনা সম্ভব হয়েছে। বরেন্দ্র বহুমুখী উন্নয়ন কর্ত্তৃপক্ষের পতœীতলা রিজিওনের নির্বাহী প্রকৌশলী মোঃ আব্দুল মালেক আরো জানিয়েছেন এই প্রকল্পটি সফল হয়েছে। কৃষকরা তাদের ফসল উৎপাদন করে খুশী হয়েছেন। কাজেই পরবর্তীতে বরেন্দ্র অঞ্চলে এধরনের আরও প্রকল্প হাতে নেয়ার পরিকল্পনা রয়েছে।
সুত্রঃ বাসস/ কৃপ্র/এম ইসলাম