কৃষি প্রতিক্ষণ ডেস্কঃ ভোলা জেলায় পোল্ট্রি খামারের মাধ্যমে অনেকেই স্বাবলম্বী হচ্ছেন। স্বল্প পুঁজি, কেউ বেশি পুঁজি নিয়ে ছোট, মাঝারি এবং বড় খামার করে ভাগ্য বদল করেছেন এখানকার পোল্ট্রি ব্যবসায়ীরা। সম্ভাবনাময় পোল্ট্রি খামারের জন্য সরকারি-বেসরকারি প্রশিক্ষণ ও ঋণ গ্রহণের সুবিধা থাকায় অনেক যুবকের আত্মকর্মসংস্থানের সুযোগ হয়েছে এখান থেকে। বিশেষ করে গ্রামীণ জনপদে বেকারত্ব দূর করতে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রাখছে মুরগির খামারগুলো। আর এতে করে পূরণ হচ্ছে প্রাণীজ আমিসের চাহিদাও।
জেলা প্রাণিসম্পদ দপ্তর জানায়, জেলার ৭ উপজেলায় ছোট-বড়-মাঝারি মিলিয়ে প্রায় দেড় হাজার মুরগির খামার রয়েছে। এর মধ্যে ব্রয়লার ১১’শ, লেয়ার ২’শ ও ১২৫টি সোনালী মুরগির খামার রয়েছে। আর মোট মুরগি রয়েছে প্রায় ১৪ লাখ। এসব মুরগি থেকে দৈনিক প্রায় ১২ লাখ ডিম ও ৬১ লাখ ৫২ হাজার কেজি মাংশ উৎপাদন হচ্ছে। এসব খামারে সরাসরি জেলার ২০ভাগ মানুষ জড়িত ও পরোক্ষভাবে জড়িত প্রায় ৫০ ভাগ মানুষ। ইতোমধ্যে জেলায় চাহিদার ৭০ভাগ ডিম ও ৬৮ভাগ মাংশ উৎপাদন হচ্ছে। ২০২১ সালের মধ্যে শতভাগ চাহিদা পূরণের সক্ষমতার লক্ষে নিরলস কাজ করছে প্রাণিসম্পদ দপ্তর।
প্রাণিসম্পদ কর্মকর্তা প্রদীপ কুমার কর্মকার বলেন, সম্প্রতি জেলায় পোল্ট্রি খামারের সংখ্যা বৃদ্ধি পাচ্ছে। এজন্য বছরে এখানে প্রায় ১০ হাজার জনকে পল্ট্রির উপর প্রশিক্ষণ দেয়া হচ্ছে। বর্তমানে জেলায় প্রায় ৪০ লাখ হাঁস-মুরগি রয়েছে। আর জেলার ২০ লাখ বাসিন্দার জন্য গড়ে ২টি করে হাঁস-মুরগি মজুদ রয়েছে। তাই এই খাতের জন্য ঋণের পরিমাণ আরো বাড়ানো দরকার বলে মনে করেন জেলা প্রাণিসম্পদ কর্মকর্তা।
এখানে সাধারণত লেয়ার, ব্রয়লার ও সোনালী এই ৩ জাতের মুরগি বাণিজ্যিকভাবে পালন করা হয়। এর মধ্যে লেয়ার মুরগি হচ্ছে ডিম উৎপাদনের মুরগি। এদেরকে ১ দিন বয়স থেকে পালন করা হয়। আর ১৯ সপ্তাহ বয়স হলে ডিম দেয়া শুরু করে। ৭২ থেকে ৭৮ সপ্তাহ পর্যন্ত টানা ডিম দেয়। প্রায় ১’শ সপ্তাহ ডিম দেয়ার পর মাংস হিসাবে বিক্রি করা হয়। আর মাংশের জন্য অন্যতম হলো ব্রয়লার। সাধারণত ১ মাস বয়স হলেই এরা বিক্রির উপযোগী হয়ে উঠে। এর জনপ্রিয়তা রয়েছে বেশ এখানে। এছাড়া রয়েছে সোনালী জাতের মুরগি। অনেকটাই দেশি মুরগির মত দেখতে এ মুরগিরও বেশ জনপ্রিয়তা রয়েছে জেলায়। পাশাপাশি পারিবারিকভাবে জেলায় দেশি মুরগি পালন করা হয়।
সদর উপজেলার ভেলুমিয়া ইউনিয়নের মুন পোল্ট্রি ফার্মের মালিক নওশাদ হোসেন মুন বলেন, তার ফার্মে বর্তমানে ২২’শ লেয়ার মুরগি রয়েছে। প্রতিদিন গড়ে ২ হাজার থেকে ২১শ ডিম উৎপাদন হয় এখানে। প্রতিটি ডিম সারে ৬টাকা দরে দৈনিক প্রায় ১৪ হাজার টাকার ডিম বিক্রি হয়। আর খরচ হয় ১০ হাজার টাকার মত। কর্মচারি খরচ দিয়ে মাসে প্রায় লাখ টাকার মত আয় হয় তার।
তিনি আরো বলেন, ১ বছর পূর্বেও তার এখানে গাভীর ফার্ম ছিলো। কিন্তু লোসকান হওয়ায় তিনি মুরগি পালন শুরু করেছেন। সম্প্রতি তিনি গাভীর লোসকান পুষিয়ে লাভবান হতে শুরু করেছেন।প্রাণিসম্পদ কর্মকর্তা প্রদীপ কুমার কর্মকার আরো বলেন, বিগত দিনের তুলনায় জেলায় ডিম, মাংশ ও মুরগি উৎপাদন বেড়েছে কয়েকগুন। আর পোল্ট্রি খামার বৃদ্ধির কারণে বছরে প্রশিক্ষণার্থীদের হার ১০ হাজার থেকে বাড়িয়ে ৩০ হাজার করার পরিকল্পনা রয়েছে সংশ্লিষ্ট দপ্তরের। মুরগির খামারের মাধ্যমে যেমন একদিকে বেকারত্ব দূর হচ্ছে, তেমনি দেশে দারিদ্র্যের হারও কমে যাচ্ছে।
দক্ষিণ দিঘলদী ইউনিয়নের বটতলা এলাকার বাসিন্দা মো: সেলিমউদ্দিন। সেনাবাহিনীর চাকরি থেকে অবসর গ্রহণ করেন ১৬ বছর আগে। তারপর থেকে বাড়ির পাশে গড়ে তুলেছেন ব্রয়লার মুরগির খামার। প্রায় দেড় হাজার মুরগি পালন করা হয় এখানে। সাধারণত ৪০ থেকে ৪৫ দিনের মধ্যে ১ কেজির বেশি ওজন হয়। স্থানীয় বাজারে বিক্রি করেন মুরগি।
সেলিমউদ্দিন বলেন, বর্তমানে মুরগি পালন করেই তার সংসার চলছে। বড় মেয়ে বিয়ে দিয়েছেন। ছেলে কলেজে লেখা-পড়া করছে। প্রাণিসম্পদ দপ্তর থেকে সব ধরনের ভ্যক্সিনেশনসহ বিভিন্ন রোগের চিকিৎসা সেবা পাচ্ছেন বলে জানান তিনি। একই এলাকার বেকার যুবক কবির হোসেন বর্তমানে ব্রয়লার পালন করে স্বাবলম্বী হয়েছেন। মুরগি পালনের মাধ্যমে বেকারত্ব জয় করেছেন তিনি। বর্তমানে ছেলে-মেয়ে ও স্ত্রী নিয়ে ভালো আছেন কবির হোসেন।
সুত্রঃ বাসস/ কৃপ্র/এম ইসলাম