কৃষি প্রতিক্ষণ ডেস্কঃ চায়না থেকে আমদানিকৃত জমাটবাঁধা মোটা দানার ইউরিয়া সার নিয়ে চরম বিপাকে রয়েছে কিশোরগঞ্জ জেলার সার ডিলাররা । এসব সার বস্তায় জমাটবাঁধা, ওজন কম, বস্তা ছেঁড়া-ফাঁড়া, সারের রং লালচে হয়ে গেছে বলে ডিলাররা অভিযোগ করেন। কৃষকরা এসব সার কিনতে অনাগ্রহী হওয়ায় এই জেলায় রোববার পর্যন্ত প্রায় ১ হাজার মে. টন (২০ হাজার বস্তা) জমাটবাঁধা সার অবিক্রিত অবস্থায় মজুদ রয়েছে। জেলার ১৩টি উপজেলার ১৭৫ জন ডিলারকে প্রতিমাসেই ইউরিয়া সারের বরাদ্দ দেয়া হয়। গত জানুয়ারি ও ফেব্রুয়ারি মাসে এই জেলার ডিলারদের ২৬ হাজার ৯৫৬ মে. টন সার বরাদ্দ দেয়া হয়। তার মধ্য আশুগঞ্জ সার কারখানা থেকে ২৫ শতাংশ জমাটবাঁধা মোটা সার সরবরাহ দেয়া হয় বলে বাংলাদেশ ফার্টিলাইজার অ্যাসোসিয়েশন, কিশোরগঞ্জ জেলা ইউনিটের (বিএফএ) সভাপতি তারিক আহমেদ জানিয়েছেন।
কৃষকরা বলছেন টাকা দিয়ে আমরা সার কিনব, কিন্তু জমাটবাঁধা, ফাঁড়া-ছেঁড়া বস্তার খারাপ সার নেব কেন? এসব জমাটবাঁধা, শক্ত সারের গুণগত মান নিয়েও প্রশ্ন উঠেছে।
ভৈরব উপজেলা কৃষি অফিসার মো. জালাল উদ্দিন জানান জমাটবাঁধা এসব ইউরিয়া সার কৃষকদের জমিতে ছিটানো কষ্টকর এবং গুণগতমান সঠিক আছে কিনা পরীক্ষা করতে হবে।
জানা গেছে, গত কয়েক বছর ধরে ভৈরবসহ কিশোরগঞ্জ জেলার ডিলারদের মাসিক বরাদ্দের ২৫ শতাংশ চায়না জমাটবাঁধা মোটা দানার ইউরিয়া সার আশুগঞ্জ সারকারখানা থেকে সরবরাহ দেয়া হচ্ছে। গত বছর সরকার গ্যাস সরবরাহ বন্ধ রেখে প্রায় ৮ মাস আশুগঞ্জ সারকারখানার উৎপাদন বন্ধ রাখে। ফলে বিদেশ থেকে আমদানিকৃত সার এই কারখানা থেকে ডিলারদের সরবরাহ দেয়া হয়েছে। গত সেপ্টেম্বর মাসে কারখানাটি চালু হলেও একাধিকবার বন্ধের মধ্য মাত্র দুই মাস কারখানা চালু ছিল। তাই বছরের ১২ মাসই ডিলাদের বিদেশী মোটা সার সরবরাহ দেয়া হয়।
এই অঞ্চলের কৃষকের কাছে চিকন সারের চাহিদা বেশি হলেও প্রতিনিয়ত বিদেশী মোটা খারাপ বস্তার ওজন কম সার সরবরাহ দেয়া হয় বলে একাধিক ডিলার অভিযোগ করেছে। তবে দেশীয় শাহজালাল সার কারখানার মোটা সার কৃষকরা জমিতে কিছু কিছু ব্যবহার করছে বলে জানা গেছে। বিএফএ, কিশোরগঞ্জ জেলার সাধারণ সম্পাদক মো. আ. হেকিম জানান, আমরা বার বার বিসিআইসি কর্তৃপক্ষকে চায়না জমাটবাঁধা সার সরবরাহ না দিতে অনুরোধ সত্ত্বেও কর্তৃপক্ষ নিয়মিত জমাটবাঁধা সার সরবরাহ দিচ্ছে। তিনি বলেন আমাদের জেলায় গত দুই মাসে দেড় কোটি টাকা মূল্যের ২০ হাজার বস্তা জমাটবাঁধা সার অবিক্রিত অবস্থায় মজুদ রয়েছে। ডিলারদের অনেকেই স্বল্প পুঁজিতে ব্যবসা করে, আবার অনেকে ব্যাংক থেকে ঋণ নিয়ে ব্যবসা করছে। জমাটবাঁধা অবিক্রিত সারের পুঁজির টাকার মাসে মাসে ব্যাংক সুদ দিতে হচ্ছে ডিলারদের। ফলে এ সার নিয়ে এখন ডিলাররা ক্ষতির সম্মুখীনসহ অনেককেই ব্যবসায় লোকসান গুনতে হচ্ছে।
কিশোরগঞ্জ কৃষি সম্প্র্রসারণ অধিদফতরের পরিচালক মো. শফিকুর রহমান জানান, সরকারিভাবে এসব সার সরবরাহ দেয়া হলে আমাদের কিছুই করার নেই। তিনি বলেন চায়না থেকে আমদানিকৃত জমাটবাঁধা সার ডিলারদের সরবরাহ না দিতে জেলা প্রশাসক একটি পত্র দিলেও কোনো কাজ হয়নি। জমাটবাঁধা মোটা দানার সারের গুণগত মান নিয়েও সন্দেহ রয়েছে বলে তিনি স্বীকার করেন।
সুত্রঃ যুগান্তর / কৃপ্র/এম ইসলাম