কৃষি প্রতিক্ষণ ডেস্কঃ যশোর শহরের বেজপাড়া এলাকার গৃহবধূ নাজমা বেগম , তিনি যে দ্বিতল ভবনটিতে বাস করছেন, সেটিতে পৌরসভার সরবরাহকৃত পানি পৌঁছাচ্ছে না। পানি উঠছে না তাদের টিউবওয়েলটিতেও। ফলে প্রতিদিনই সাবমার্সিবল টিউবওয়েল থেকে খাওয়ার পানি আনতে পাশের বাড়িতে যেতে হচ্ছে তাকে। শুধু নাজমা বেগমই নন, এ এলাকার অধিকাংশ বাসিন্দাই এখন তীব্র পানি সংকটে ভুগছে। একই সংকটে রয়েছেন যশোরের কৃষকরাও। ভূগর্ভস্থ পানির স্তর অস্বাভাবিক নেমে যাওয়ায় সেচ নিয়ে চিন্তিত হয়ে পড়েছেন তারা।
সংশ্লিষ্ট সূত্রে জানা গেছে, পৌর এলাকায় পানির স্তর ৩৪ ফুটে নেমে এসেছে। গত বছর এ সময় ৩১ ফুট পর্যন্ত নেমেছিল। পৌরসভা কর্তৃপক্ষ বর্তমানে ২৯টি গভীর নলকূপ দিয়ে পানি উত্তোলন করছে। তাদের গ্রাহকদের পানির চাহিদা রয়েছে ১ কোটি ৬৫ লাখ লিটার। অথচ এ চাহিদার বিপরীতে সরবরাহ করা হচ্ছে মাত্র ৭০ লাখ লিটার পানি। ফলে ঘাটতি থেকে যাচ্ছে ৯৫ লাখ লিটার।
একদিকে পানির স্তর নেমে যাওয়ায় গৃহস্থদের অধিকাংশ টিউবওয়েলেই পানি উঠছে না, অন্যদিকে পৌরসভা পানির দাম ৬০ টাকা বাড়ালেও প্রয়োজনীয় পানি সরবরাহে ব্যর্থ হচ্ছে বলে অভিযোগ পাওয়া গেছে। ফলে খাওয়ার পানির জন্য বিভিন্ন স্থানে দেখা যাচ্ছে মানুষের দীর্ঘ লাইন। এ ব্যাপারে কথা হলে পৌরসভার সহকারী প্রকৌশলী (পানি) হাফিজুর রহমান জানান, অপরিকল্পিতভাবে মোটর লাগিয়ে পানি তোলার কারণে পানির স্তর ক্রমেই নেমে যাচ্ছে। এ অবস্থায় দ্রুত বৃষ্টি না হলে এ সংকট আরো বাড়বে।
এদিকে যশোর বিএডিসি (সেচ) সূত্রে জানা গেছে, পানির স্তর ২২ ফুট নিচে পর্যন্ত থাকলে তা স্বাভাবিকভাবে উত্তোলন করা যায়। এ স্তর ২৪ ফুট পর্যন্ত নেমে গেলে পানি কম ওঠা শুরু করে। অথচ বর্তমানে এখানে ভূগর্ভস্থ পানির স্তর ২৭ থেকে ৩৪ ফুট পর্যন্ত নেমে গেছে। এ অবস্থায় পানি সংকটে চলতি বোরো মৌসুমে সেচ নিয়ে চিন্তিত হয়ে পড়েছেন কৃষকরাও। শ্যালো মেশিন দিয়ে জমিতে পানি দিলেও তা পর্যাপ্ত নয়। এতে তাদের সেচ খরচও বেড়েছে বলে জানিয়েছেন তারা।
তবে যশোর আঞ্চলিক কৃষি অফিসের অতিরিক্ত পরিচালক চণ্ডী কুমার দাস দাবি করেন, এ অঞ্চলে আগাম বোরো ধান আবাদ করায় সেচের জন্য চাষীদের পানি সংকট নেই। তাছাড়া শ্যালো মেশিন দিয়ে সেচও দেয়া হয়েছে। তবে চাষীরা যদি এখন ধান আবাদ করতেন, তাহলে তারা সংকটে পড়তেন। কারণ সাধারণত এ সময়ই ভূগর্ভস্থ পানির স্তর নেমে যায়।
সংশ্লিষ্ট সূত্রে জানা যায়, যশোর জেলায় এবার ১ লাখ ৭৯ হাজার ২১২ হেক্টর জমিতে বোরো ধান আবাদ হচ্ছে। এসব জমিতে শ্যালো মেশিন ব্যবহার হচ্ছে ৭১ হাজার ৬৫৩টি। রয়েছে ১ হাজার ৬টি পাওয়ার পাম্প। ডিপ টিউবওয়েল রয়েছে আরো দেড় হাজারেরও বেশি। কিন্তু বর্তমানে পানির স্তর নেমে যাওয়ায় আগাম ধান আবাদ করলেও সেচ সংকট রয়েই গেছে বলে জানিয়েছেন কৃষকরা।
যশোর বিএডিসির (সেচ) নির্বাহী প্রকৌশলী মাহাবুব আলম বলেন, ‘মানুষ অপরিকল্পিতভাবে শ্যালো ও গভীর নলকূপ বসাচ্ছে। এ কারণে পানির অপচয় বেশি হচ্ছে। নেমে যাচ্ছে পানির স্তর।’ এ ব্যাপারে যশোর পানি উন্নয়ন বোর্ডের নির্বাহী প্রকৌশলী প্রবীর কুমার গোস্বামী জানান, দিন দিন বিভন্ন পুকুর ও জলাশয় ভারট হয়ে যাচ্ছে, নদী শুকিয়ে যাচ্ছে, কমছে পরিধিও। এসব কারণেই ভূগর্ভস্থ পানির স্তর দিন দিন নিচে নেমে যাচ্ছে। এ অবস্থায় দ্রুত বৃষ্টিপাত না হলে সংকট আরো তীব্র আকার ধারণ করবে।
সুত্রঃ বনিক বার্তা/ কৃপ্র/এম ইসলাম