কৃষি প্রতিক্ষণ ডেস্কঃ লাভজনক হওয়ায় ধান চাষ ছেড়ে বেগুন চাষ ঝুকছেন নওগাঁর মহাদেবপুরের কৃষকরা। বেগুন চাষ করে একদিকে কৃষকরা যেমন আর্থিক ভাবে লাভবান হচ্ছেন। উপজেলার মহাদেবপুর সদর, রাইগাঁ, চেরাগপুর ও এনায়েতপুর ইউনিয়নে গত তিন বছর ধরে বোরো মওসুমে তাদের জমিতে বোরো ধান চাষ না করে বেগুন চাষ শুরু করেছেন। অধিক লাভজনক হওয়ায় এলাকার প্রত্যেক কৃষকই নিন্মে ৫ কাঠা থেকে সর্বোচ্চ দুই বিঘা পর্যন্ত জমিতে বেগুনের চাষ করেছেন। এসব এলাকায় মাঠে মাঠে এখন কেবল বেগুনের ক্ষেত। কৃষকরা যশোহরের ইসলামপুরী এবং সাদা গুটি জাতের বেগুন চাষ করেছেন।
বর্তমানে বেগুন বিক্রি করতে কৃষকদের কষ্ট করে হাটে বাজারে যেতে হয় না। পাইকারী কাঁচা তরকারী ব্যবসায়ীরা সরাসরি ক্ষেত থেকে নগদ টাকা দিয়ে কিনে নিয়ে যায়। এতে করে তারা সার্বিক ভাবে অনেক বেশী লাভবান হচ্ছেন কৃষকরা। যার ফলে যে এলাকায় কোন দিন সবজি চাষ সম্ভব ছিল না সেখানকার কৃষকরা এখন বেগুন চাষের প্রতি ঝুকছেন নাটশাল গ্রামের হানিফ জানান, তিনি ২৫ কাঠা জমি প্রতিবছর ১৫ হাজার টাকায় ৫ বছরের জন্য লিজ নিয়ে গত তিন বছর ধরে বেগুন চাষ করছেন। বেগুন চাষ কর বর্তমানে তার সংসারে স্বচ্ছলতা ফিরে এসেছে।
ফটিকপুর গ্রামের নওশাদ আলী তার নিজস্ব এক বিঘা জমিতে বেগুনের ক্ষেত করেছেন। গোপালপুর গ্রামের জামাল উদ্দিন তার ১০ কাঠা জমিতে এবং নাটশাল গ্রামের একরামুল হক ১৫ কাঠা জমিতে বেগুনের চাষ করেছে বলে জানান তারা। এসব বেগুন চাষীরা জানিয়েছেন, বেগুন চাষে বোরো আবাদের চেয়ে পানি কম লাগে। সার ও শ্রমিক খরচও অনেক কম। তুলনামুলক ভাবে বাজারে মুল্য বেশী পাওয়া যাচ্ছে। এক বিঘা জমিতে বোরো আবাদ করলে সব মিলিয়ে খরচ পড়ে প্রায় ১২/১৩ হাজার টাকা। ধান পাওয়া যায় সর্বোচ্চ ১৮ থেকে ২০ মন। প্রতি মন ৭শ টাকা হিসেবে উৎপাদিত ধানের বাজার মূল্য সর্বোচ্চ ১৪ হাজার টাকা। উৎপাদন খরচ বাদ দিলে কৃষকের তেমন লাভ হয়না।
অপরদিকে,এক বিঘা জমিতে বেগুন চাষ করতে সর্বোচ্চ খরচ পড়ে ২৬/২৮ হাজার টাকা। সেখানে পুরো মওসুমে প্রায় দেড়শ মন বেগুন পাওয়া যায় । বর্তমান বাজার অনুযায়ী গড়ে প্রতি মন বেগুন পাইকারী পর্যায়ে ৭শ থেকে ৮শ টাকা বিক্রি হয়। যার খরচ বাদ দিয়ে কৃষকরা ৭৫ থেকে ৮০ হাজার টাকা পর্যন্ত লাভ করছেন। পাইকারী বেগুন ক্রেতারা জানিয়েছেন, এখানকার বেগুন কিনে নিয়ে তারা নওগাঁ জেলা পর্যায়ের বাজার ছাড়াও বগুড়া, রাজশাহী, সিলেট, চট্রগ্রাম, ঢাকাসহ দেশের বিভিন্ন জেলায় সরবরাহ করেন।
মহাদেবপুর উপজেলা কৃষি অফিসার একেএম মফিদুল ইসলাম জানান, গত বছর বেগুন চাষের জমির পরিমান ছিল সাড়ে ৩শ হেক্টর। এ বছর উপজেলায় মোট ৪২০ হেক্টর জমিতে বেগুনের চাষ হয়েছে। যা অবশ্যই বোরো চাষের চেয়ে বেগুন চাষ অধিক লাভজনক হিসেবে কৃষকদের নিকট পরিলক্ষিত হয়েছে। জেলা কৃষি কর্মকর্তা সত্যব্রত সাহা জানান, বেগুন চাষ করে কৃষকরা লাভবান হচ্ছেন পাশাপশি বর্তমানে বেগুনের দামও ভালো পাচ্ছেন।
কৃপ্র/এম ইসলাম