কৃষি প্রতিক্ষণ ডেস্কঃ গিনি ঘাস দেশের সকল এলাকায় জন্মে। আম, কাঁঠাল, নারিকেল, সুপারী ও অন্যান্য বাগানে এই ঘাস চাষ করা যায়। গিনি গ্রীষ্মমন্ডলীয় স্থায়ী ঘাস। আফ্রিকা-এর আদি বাসস্থান। ঘাসটি ১৭৯৩ সালে আফ্রিকা হতে ভারতে পরিচিতি লাভ করে। গিনি দেখতে অনেকটা ধান গাছের মত। এতে নেপিয়ার ও পারা ঘাসের তুলনায় জলীয় ভাগ কম এবং পুষ্টিমান বেশি। কান্ড চ্যাপ্টা ও পাতা অমসৃন। কান্ড ও পাতায় কোনো সুঙ (Cilia) নেই।
গিনি ঘাস উঁচু ও ঢালু জমিতে ভাল হয়। ছায়াযুক্ত জমিতেও এ ঘাস জন্মে। কাজেই আম, কাঁঠাল, নারিকেল, সুপারী ও অন্যান্য বাগানে এ ঘাস লাগানো যায়। স্যাঁতস্যাঁতে জলাবদ্ধ নিচু জমিতে এ ঘাস ভাল হয় না। এ ঘাস বীজ উৎপাদনে সক্ষম। বীজ ও মোথা দুই পদ্ধতিতেই গিনি ঘাসের চাষ করা যায়। গিনি ঘাস বৈশাখ হতে জ্যৈষ্ঠ মাস অর্থাৎ বর্ষা মৌসুমের প্রথম বৃষ্টির পরেই রোপন করতে হয়। বেশি বৃষ্টি বা জলাবদ্ধ অবস্থায় চারার গোড়া পচে যেতে পারে সেদিকে খেয়াল রাখতে হবে। তবে মাটিতে প্রচুর রস থাকলে অথবা পানি সেচের সুবিধা থাকলে এবং গ্রীষ্মের শুরুতে রোপণ করলে ভাল ফলন পাওয়া যায়।
জমি চাষ, রোপণ পদ্ধতি ও ঘাসের পরিচর্যা
জমি ২/৩টি চাষ ও মই দিয়ে তৈরি করতে হবে। এর পর বড় মোথা হতে ৪/৫টি ছোট চারা তৈরি করতে হবে। চারাগুলি ৭/৮ ইঞ্চি লম্বা হতে হবে। এক সারি হতে অন্য সারির দূরত্ব ২/৩ ফুট, এক গাছ হতে অন্য গাছের দূরত্ব ১ ফুট এবং ২/৩ ইঞ্চি মাটির গভীরে লাগাতে হবে। চারার গোড়া ভালোভাবে মাটি দিয়ে টিপে দিতে হবে। সারি থেকে সারি ২ ফুট এবং গাছ থেকে গাছ ১-১.৫ ফুট দূরত্বে লাগালে একরে প্রায় ১২,০০০ চারার দরকার হয়। বীজের ক্ষেত্রে প্রতি একরে বীজের পরিমাণ ৩-৪ কেজি। গিনি ঘাসের সাথে শুটি যেমন সেন্ট্রোসীমা, সিরাট্রো, গ্লাইসিন ইত্যাদি সাথী ঘাস হিসাবে চাষ করা যেতে পারে। এ সমস্ত শুটি গিনি ঘাস লাগানোর সময় দুই চারার মধ্যবর্তী স্থানে অথবা ছিটিয়ে বপন করা যায়। সারির মাঝের ফাঁকা জায়গা ঘাস কাটার পর পরই আলগা করে দিতে পারলে ভাল ফলন পাওয়া যায়। যদি প্রত্যেকবার ঘাস কাটার পর সম্ভব নাও হয়, তবে অন্তত বছরে এক বা দুই বার মাটি আলগা করে দিতে হয়। মাটি আলগা করে সার ও পানি দিতে পারলে আশানুরূপ ফলন পাওয়া যায়।
সার ও সেচ প্রয়োগ
জমির উর্বরা শক্তির উপর নির্ভর করে ঘাসের উৎপাদন। জমি তৈরির সময় প্রতি একরে কমপক্ষে ৪ টন গোবর বা ১ টন মুরগির বিষ্ঠা এবং ৪৫ কেজি টিএসপি সার দিতে হবে। চারা রোপনের পরে চারা মাটিতে ধরে গেলে একর প্রতি ৪০ কেজি ইউরিয়া প্রয়োগ করতে হবে। তাছাড়া প্রতিবার ঘাস কাটার পর একর প্রতি ৪০ কেজি ইউরিয়া প্রয়োগ করতে হবে। ইউরিয়া প্রয়োগের সময় জমিতে পর্যাপ্ত রস না থাকলে সার প্রয়োগ করে সেচ দিতে হবে।
ঘাস কাটার নিয়ম ও ফলন
গিনি ঘাস লাগানোর ৬০-৭০ দিন পরই প্রথম বার ঘাস কাটা যায়। পরবর্তী ৪০-৪৫ দিন পরপর কাটা যায়। ঘাসের খাদ্যমান বেশি পেতে হলে কচি অবস্থায় কেটে গবাদিপশুকে খাওয়াতে হবে। ঘাস মাটি হতে ৪/৫ ইঞ্চি রেখে কাটতে হবে। ভাল যত্ন বা পরিচর্যা করলে এই ঘাস বছরে ৭/৮ বার কাটা যেতে পারে। ভাল ব্যবস্থাপনায় একর প্রতি প্রায় ২০-৩০ টন কাঁচা ঘাস উৎপন্ন হয়।
ঘাস খাওয়ানোর নিয়ম
গরু মাঠে চরিয়ে কাঁচা ঘাস হিসাবে গিনি ঘাস খাওয়ানো যেতে পারে। তবে মাঠ থেকে কেটে এনে খাওয়ানোই উত্তম। এক্ষেত্রে ২/৩ ইঞ্চি টুকরা করে শুকনা খড়ের সাথে মিশিয়ে খাওয়ানো ভাল। যদি একটি গাভীর দৈহিক ওজন ১০০ কেজি হয়, তাহলে-এর দৈনিক খাদ্য তালিকায় ১.০ কেজি দানাদার খাদ্য, ১.৪০ কেজি শুকনা খড় এবং প্রায় ৪.০ কেজি গিনি ঘাস সরবরাহ করা যেতে পারে। তবে যদি এই গাভীকে (১০০ কেজি ওজনের) ইউরিয়া মোলাসেস মিশ্রিত খড় খাওয়ানো হয় সেক্ষেত্রে ০.৫ কেজি দানাদার খাদ্য ১.০ কেজি শুকনা খড়, ২.৫-৩.০ কেজি সবুজ গিনি ঘাস এবং ২-২.৫ কেজি ইউরিয়া মোলাসেস মিশ্রিত খড় প্রতিদিন সরবরাহ করা যেতে পারে। এর সাথে পর্যাপ্ত বিশুদ্ধ পানি সরবরাহ নিশ্চিত করতে হবে।
সংরক্ষণ
গিনি ঘাস কচি অবস্থায় কেটে রৌদ্রে শুকিয়ে “হে” করে রাখা ভাল। তবে এই ঘাস সাইলেজ করেও রাখা যায়। গাভীর দুধ উৎপাদন ও সু-স্বাস্থ্যের জন্য কাঁচা ঘাসের প্রয়োজনীয়তা অনস্বীকার্য। কাঁচা ঘাসের সরবরাহ বাড়ানো ছাড়া মাংস ও দুধ উৎপাদন বাড়ানো অসম্ভব প্রায়। সেক্ষেত্রে উচ্চ ফলনশীল ঘাস হিসাবে গিনি বাংলাদেশে ব্যাপকভাবে চাষ হতে পারে। আমাদের জমির স্বল্পতা আছে সত্য, তবে পরিত্যাক্ত উঁচু জমি, বিভিন্ন ফলের বাগানে এ ঘাস চাষ করে ঘাস উৎপাদন বাড়ানো যেতে পারে। এ জাতীয় ঘাস সঠিক নিয়মে গবাদিপশুকে খাওয়ানো হলে দুধ ও মাংসের উৎপাদন বাড়বে বলে আশা করা যায়।
কৃপ্র/এম ইসলাম