কৃষি প্রতিক্ষণ ডেস্কঃ নাটোরের চলনবিলের বাঁধে থাকা ১৭টি স্লুইসগেট এখন কৃষকের গলার কাঁটা হয়ে দাঁড়িয়েছে। নষ্ট হয়ে যাওয়ায় এসব স্লুইসগেট দিয়ে প্রয়োজনের সময় পানি পাওয়া যায় না, আবার প্রবল বর্ষণে পানি আটকানোও যায় না। এ ছাড়া বাঁধগুলো দীর্ঘদিন সংস্কার না হওয়া এবং এসব বাঁধ কেটে ব্রিজ নির্মাণ করায় সম্প্রতি চলনবিলের কৃষকদের পাকা ধান তলিয়ে গেছে। সম্প্রতি টানা ভারি বর্ষণ ও উজান থেকে নেমে আসা পানিতে ডুবে গেছে চলনবিল অধ্যুষিত নাটোরের সিংড়া ও গুরুদাসপুরের প্রায় আড়াই হাজার হেক্টর জমির আধাপাকা ধানসহ কয়েকশ’ হেক্টর জমির বাদাম, ভুট্টা, তরমুজ-বাঙ্গী।
হালতি বিলের পানাউল্যাহ খাল, আত্রাই নদীর সিংড়াদহ সংলগ্ন নিংগুইন খাল, নাগর নদীর হাসপুকুরিয়া ও নাড়িবাড়ী খালের মুখে ১৯৯০ সালে প্রায় ৬ কোটি টাকা ব্যয়ে পাউবোর নির্মিত স্লুইসগেটগুলো মরিচা ধরে অচল হয়ে পড়েছে। নষ্ট হয়ে গেছে পানিপ্রবাহের দরজা। ফলে প্রয়োজনীয় মুহূর্তে পানি পাওয়া যাচ্ছে না। অন্যদিকে বর্ষা মৌসুমেও ঠেকানো যাচ্ছে না পানিপ্রবাহ। অভিযোগ রয়েছে, এসব স্লুইসগেট অপারেট করার জন্য পাউবোর একজন চাবি অপারেটর থাকার কথা। অথচ চাবি থাকে এলাকার মাতবরদের হাতে। এ ছাড়া কর্তৃপক্ষের যথাযথ তদারকির অভাবে এ অবস্থা হয়েছে বলেও অভিযোগ উঠেছে।
শেরকোল গ্রামের কৃষক রুবন আলী জানান, প্রায় ৩০ বছর আগে পাউবো হালতি বিলের খালে স্লুইসগেট নির্মাণ করেছিল। এর পর থেকে কেউ খোঁজও নেয়নি। ধীরে ধীরে খসে পড়েছে গেটের অস্তরণ, ভেঙে গেছে কপাট। হঠাৎ নদীর পানি বৃদ্ধি পাওয়ায় স্থানীয় জনপ্রতিনিধিদের উদ্যোগে বাঁশ ও তালাই দিয়ে বেড়া দেওয়া হলেও ডুবে গেছে বোরো ধান। পাটকোল গ্রামের কৃষক আব্দুল গণি বলেন, বন্যা ও জলাবদ্ধতা নিরসনে লাখ লাখ টাকা ব্যয়ে নির্মিত এসব স্লুইসগেট এখন কৃষকের গলার কাঁটায় পরিণত হয়েছে। সিংড়া উপজেলা পরিষদ চেয়ারম্যান শফিকুল ইসলাম জানান, বন্যানিয়ন্ত্রণ বাঁধের বেশ কয়েক জায়গায় ফাটল রয়েছে। এসব ফাটল দিয়ে বাঁধের ভেতরে পানি প্রবেশ করে। তিনি দ্রুত এসব বাঁধ সংস্কারের দাবি জানান।
নাটোর পাউবোর নির্বাহী প্রকৌশলী সুধাংশু কুমার সরকার জানান, চলনবিলের সিংড়া ও গুরুদাসপুর উপজেলায় মোট ১৭টি স্লুইসগেট রয়েছে। এর মধ্যে ১৬টি ঠিক রয়েছে। সম্প্রতি কয়েকটি মেরামতও করা হয়েছে। বাঁধের ওপর অপরিকল্পিতভাবে ব্রিজ নির্মাণকেও ফসলহানির কারণ হিসেবে দায়ী করেছেন তিনি। এই ব্রিজ নির্মাণে পাউবোর কোনো মতামত নেওয়া হয়নি বলেও অভিযোগ করেন তিনি।
নাটোরের জেলা প্রশাসক শাহিনা খাতুন জানান, বাঁধের সংস্কার ও প্রয়োজনীয় রক্ষণাবেক্ষণের জন্য পদক্ষেপ নিতে পাউবোকে নির্দেশনা দেওয়া হয়েছে। খুব দ্রুত ক্ষতিগ্রস্ত বাঁধ ও স্লুইসগেটগুলোর সংস্কারকাজ শুরু হবে।
সুত্রঃ সমকাল / কৃপ্র/এম ইসলাম