কৃষি প্রতিক্ষণ ডেস্কঃ কয়েক বছর আগে লক্ষ্মীপুরের তারেক মাহমুদ সুজন সামান্য পুঁজি দিয়ে শুরু করেন নারকেল বেচাকেনা। ব্যবসায় লাভ হওয়ায় পরবর্তী সময়ে পুঁজি বাড়িয়ে নারকেল সংগ্রহ করে বিভিন্ন জেলায় চুক্তিতে সরবরাহ শুরু করেন। পাশাপাশি স্থাপন করেন নারকেলের ছোবড়া প্রক্রিয়াজাতের কারখানা। বর্তমানে তার ব্যবসার বার্ষিক টার্নওভার দাঁড়িয়েছে ৩ কোটি টাকা। তার কারখানায় কাজ করছেন ৩০ জন শ্রমিক। নারকেলের বদৌলতে এখন তিনি সফল ব্যবসায়ী। সুজনের মতো জেলার আরো অনেকে স্বাবলম্বী হয়েছেন নারকেল ও এ থেকে প্রাপ্ত দ্রব্য বিক্রি করে। বর্তমানে লক্ষ্মীপুরে প্রায় দুই লাখ মানুষ নারকেল ও নারকেলজাত পণ্য উৎপাদন এবং বিক্রির সঙ্গে জড়িত। নারকেলভিত্তিক শিল্প-কারখানা গড়ে উঠলে এ অঞ্চলের অর্থনীতি আরো গতিশীল হবে বলে আশা সংশ্লিষ্টদের।
জেলা কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তর সূত্রে জানা গেছে, লক্ষ্মীপুরের পাঁচ উপজেলায় ২ হাজার ৭৫০ হেক্টর জমিতে নারকেল বাগান আছে। এসব বাগানে প্রায় ১১ লাখ ১৮ হাজারটি নারকেলগাছ রয়েছে। প্রতি গাছে বছরে ৫০টি করে প্রায় ৫ কোটি ৫৯ লাখ নারকেল উৎপাদন হয়, যার বাজারমূল্য ১০০ কোটি ৬১ লাখ টাকা। এছাড়া লক্ষ্মীপুর থেকে বছরে প্রায় ১০ কোটি টাকার নারকেলের ছোবড়া বিভিন্ন জেলায় সরবরাহ করা হয়।
স্থানীয়রা জানায়, জেলায় নারকেলের সবচেয়ে বড় হাট বসে সদর উপজেলার দালালবাজারে। নারকেল বেচাকেনা ও ছোবড়া বের করার কাজে শতাধিক নারী-পুরুষের কর্মসংস্থানের সৃষ্টি হয়েছে এ বাজারে। এছাড়া সদরের চন্দ্রগঞ্জ, মান্দারী, রায়পুর উপজেলার খাসেরহাট, মোল্লারহাট, মিতালীবাজার, হায়দরগঞ্জ, রামগঞ্জ উপজেলা, কমলনগর উপজেলার হাজিরহাট ও রামগতি উপজেলার আলেকজান্ডার নারকেল কেনাবেচার জন্য প্রসিদ্ধ। মৌসুম শুরু হওয়ায় এসব হাটবাজারে এখন কেনাবেচায় ব্যস্ত সময় পার করছেন ব্যবসায়ীরা। এসব বাজার থেকে নারকেল ও নারকেলজাত পণ্য খুলনা, বাগেরহাট, ঢাকা, চট্টগ্রাম, বান্দরবান, রাঙ্গামাটি, খাগড়াছড়ি, ফরিদপুর, ময়মনসিংহসহ দেশের বিভিন্ন জেলায় পাঠানো হয়।
ব্যবসায়ীরা জানান, লক্ষ্মীপুরে উৎপাদিত নারকেল সুস্বাদু ও প্রাপ্ত তেলের গুণগত মান ভালো। চাষীদের কাছ থেকে এক জোড়া নারকেল ৪০-৫০ টাকা দরে সংগ্রহ করা হয়। বাজার থেকে নারকেল জেলার চাহিদা মিটিয়ে দেশের বিভিন্ন স্থানে সরবরাহ করা হয়। এছাড়া প্রতিটি নারকেলের ছোবড়া তুলে শ্রমিকরা ১ টাকা করে পান। আবার মাসিক ৪-৫ হাজার টাকা মজুরি দিয়ে শ্রমিকদের দিয়ে নারকেলের ছোবড়া প্রক্রিয়াজাত করা হয়। প্রক্রিয়াকৃত প্রতি বান্ডিল (১০০ কেজি) ছোবড়া ১ হাজার ৫০০ থেকে ২ হাজার টাকা দরে বিক্রি হয়। প্রতি মাসে ১০০ বান্ডিল ছোবড়া সরবরাহ করা হয় জাজিম ও আসবাব কারখানাসহ বিভিন্ন জেলায়।
নারকেল ব্যবসায়ী তারেক মাহমুদ সুজন, জাকির হোসেন ও শশি বাবু জানান, এ মৌসুমে তারা প্রতিটি ২০-২৫ টাকা দরে প্রায় ১৫ লাখ ৪০ হাজার নারিকেল কিনেছেন। এতে ব্যয় হয়েছে প্রায় ৩ কোটি টাকা। এগুলো কয়েকটি জেলায় পাঠানো হবে। নারকেল ব্যবসায়ী আকবর বেপারি জানান, চলতি মৌসুমে প্রতি সপ্তাহে দালালবাজার থেকে ৫-৬ কোটি টাকার নারকেল দেশের বিভিন্ন স্থানে সরবরাহ করা হচ্ছে। রামগঞ্জ পৌরসভা শহরের ব্যবসায়ী জাহের বলেন, আমাদের এ অঞ্চলে অপরিকল্পিতভাবে নারকেলগাছ লাগানো হয়। পরিকল্পিতভাবে চাষাবাদ হলে লাভ আরো বাড়বে। নারকেলভিত্তিক শিল্প-কারখানা গড়ে তুললে কর্মসংস্থানের সুযোগ বাড়বে। লক্ষ্মীপুর পরিসংখ্যান ব্যুরোর ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা আবু নোমান চৌধুরী জানান, জেলার প্রায় দুই লাখ মানুষ নারকেল ব্যবসার সঙ্গে জড়িত। তাছাড়া লক্ষ্মীপুর জেলায় প্রায় ২৫০টি নারকেলের বাজার রয়েছে।
জেলা কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তরের উপপরিচালক মো. গোলাম মোস্তফা বলেন, লক্ষ্মীপুরে প্রতি বছর ১০০ কোটি টাকারও বেশি নারকেল উৎপাদন হয়ে থাকে। তাছাড়া নারকেলের ছোবড়া বিক্রি করেও ব্যবসায়ীরা লাভবান হচ্ছেন। এতে বেকারদের কর্মসংস্থান হচ্ছে। এ অঞ্চলে নারকেলভিত্তিক শিল্প-কারখানা গড়ে উঠলে কৃষকরা যেমন লাভবান হতেন, তেমনি দেশের অর্থনীতি গতিশীল হতো।
সুত্রঃ বনিক বার্তা/ কৃপ্র/এম ইসলাম