‘বারশিম’ দুগ্ধবতী গাভীর জন্য অত্যন্ত উপকারী
কৃষি প্রতিক্ষণ ডেস্কঃ বারশিম বিভিন্ন দেশে বিভিন্ন নামে পরিচিত। এটা সর্বপ্রথম মিশর হতে ভারতবর্ষে এনে চাষ করা হয় এবং তখন থেকে রবি মৌসুমে এটা গো-খাদ্য হিসাবে চাষ শুরু হয়।বারশিম ঘাস যদি নিয়মিতভাবে গাভীকে সরবরাহ করা যায় তাহলে নিশ্চিতভাবেই দুধ উৎপাদন বৃদ্ধি পাবে। তাছাড়া এতে নন-লিগুম ঘাসের চেয়ে বেশি মাত্রায় আমিষ থাকে বলে আমিষের চাহিদা পূরণেও সহায়তা করে। অন্যদিকে বারশিম ঘাসের শিকড়ে যে “নডিউল” জন্মে তা থেকে নাইট্রোজেন (N2) সরবরাহ করে মাটির উর্বরতা শক্তি বৃদ্ধি করে। বহুবর্ষজীবী ডাল জাতীয় (লিগিউম) বারশিম দুগ্ধবতী গাভীর জন্য অত্যন্ত উপকারী। বারশিম দো-আঁশ মাটিতে ভাল জন্মে। তবে ১৫-২০০সে তাপমাত্রায় এর উৎপাদন খুব ভালো হয়। অক্টোবর হতে নভেম্বর পর্যন্ত বীজ বপনের উৎকৃষ্ট সময়।
চাষ ও রোপণ পদ্ধতি ঃ বারশিম বীজের অঙ্কুরোদগমের জন্য জমি ভালোভাবে চাষ করা দরকার। জমিতে ২/৩ বার চাষ করে আগাছামুক্ত করতে হবে। ভালো ফলন পাবার জন্য জমিতে পর্যাপ্ত গোবর বা আবর্জনা-পচা সার প্রয়োগ করতে হবে। তাছাড়া একর প্রতি ২৫ কেজি নাইট্রোজেন সার দেয়া যেতে পারে। প্রতি একর জমিতে ৮-১০ কেজি পরিমাণ বারশিম বীজের প্রয়োজন হয়। ভালো উৎপাদন পেতে একর প্রতি ১০ কেজি বীজ ব্যবহার করা উচিত।শীতের প্রাক্কালে নেপিয়ার অথবা অন্যান্য স্থায়ী ঘাসের সাথে মিশ্র শস্য হিসাবে বারশিম চাষ করা যায়। শীতকালে নেপিয়ার, গিনি বা ইসপ্লেন্ডিডা ঘাসের বৃদ্ধি কমে যায়। অথচ সে সময় এ ঘাস বেশ ভালো জন্মে। উল্লেখ্য, এ ঘাস মাটির উর্বরা শক্তি বৃদ্ধিতে যথেষ্ট সাহায্য করে।
বপন পদ্ধতি
(ক) রিলে পদ্ধতিতে আমন ধানের সাথে
আমন ধান কাটার ৩ (তিন) সপ্তাহপূর্বে যখন মাটি ভেজা থাকে তখন ধান ক্ষেতে বারশিম বীজ বপন করা যেতে পারে।
(খ) বীজতলা পদ্ধতি
জমি খুব ভালোভাবে চাষ করে বীজ ছিটিয়ে হালকা মই দিতে হবে যাতে বীজ মাটির বেশি নীচে চলে না যায়।
(গ) জমি কাদা করে বীজ বোনা
জমি ভালোভাবে চাষ করে মই দিয়ে সমান করে নিতে হবে। এরপর জমির উপর ২/৩ ইঞ্চি পানি জমা করতে হবে। ছিটিয়ে বীজ বপন করা হলে উক্ত পানি ধীরে ধীরে বের করে দেবার ব্যবস্থা করতে হবে।
সার প্রয়োগ ও সেচ
বারশিম শুটিজাতীয় ঘাস সেহেতু নাইট্রোজেন সারের প্রয়োজন হয় কম। তবে অবশ্যই প্রয়োজনীয় ফসফেট সার প্রয়োগ করতে হবে। এজন্যে জমি তৈরির সময় একর প্রতি ৫০ কেজি টিএসপি এবং চারা গজানোর পর ১৮ কেজি ইউরিয়া প্রয়োগ করতে হবে। বারশিমের জন্য সেচের প্রয়োজন হয়। জমির আর্দ্রতার কম-বেশির উপর সেচ নির্ভরশীল। শুকনো মৌসুমে দো-আঁশ মাটিতে ২০ হতে ২৫ দিন পর পর সেচ দেয়া যেতে পারে।
পরিচর্যা ও ঘাস কাটা
বারশিম ঘাসের তেমন একটা পরিচর্যার দরকার হয়না। তবে ঘাস কাটার কয়েকদিন অর্থাৎ প্রায় ১০ দিন পূর্বে সেচ প্রদান করা যেতে পারে। এই সেচ প্রদানের ফলে পরবর্তী ঘাস কাটার সময় বেশি ফলন পাওয়া যায়।
ঘাস কাটার নিয়ম ও ফলন
সাধারণত মাটির উপর এক থেকে দেড় ইঞ্চি রেখে বারশিম কাটতে হয়। ঘাস কেটে গবাদিপশুকে সরাসরি অথবা অন্য কোনো নিুমানের ঘাসের সাথে মিশিয়েও খাওয়ানো যায়। ব্যবস্থাপনা ভালো হলে এ ঘাসের ফলন একর প্রতি ২৫-৫০ টনের মত হয়।
ঘাস সংরক্ষণ পদ্ধতি
বারশিম ঘাসে ফল হওয়া শুরুর পূর্বে কেটে রৌদ্রে শুকিয়ে “হে” করে সংরক্ষণ করা যায়। এজন্যে কাটা ঘাস ২-৩ দিন রৌদ্রে ভালোভাবে শুকাতে হয়। শুকানোর সময় বাঁশের আড়া (কেদোল) দিয়ে দিনে ৫/৬ বার নাড়া-চাড়া করতে হয়। ভালোভাবে শুকানোর উদ্দেশ্য হচ্ছে, যাতে ঘাসে কোনক্রমেই ১৪%-এর বেশি আর্দ্রতা না থাকে। তাই ঘাস শুকানোর সময় যথেষ্ট সতর্কতা অবলম্বন করতে হবে। ঘাস সঠিকভাবে শুকানোর বিষয়টি জানার জন্য এক মুঠা ঘাস হাতে নিয়ে চাপ দিলে যদি পুরাপুরি ভেঙ্গে না যায় তাহলে বুঝতে হবে ঘাস সঠিকভাবে শুকানো হয়েছে। শুকানো ঘাস ঘরে গাদা করে রেখে দিলে দীর্ঘ দিন সংরক্ষিত থাকবে।
কৃপ্র/এম ইসলাম