কৃষি প্রতিক্ষণ ডেস্কঃ রাজবাড়ী জেলার বরাট , উড়াকান্দা ও লালগোলা এলাকায় পদ্মা নদীর দুই কিলোমিটার এলাকাজুড়ে ভাঙন দেখা দিয়েছে। এতে ওইসব এলাকার শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান, ফসলি জমিসহ বসতঘর নদীতে বিলীন হওয়ার হুমকিতে রয়েছে। এরই মধ্যে গত ১০ দিনে নদীভাঙনের ফলে ১২-১৩টি বসতঘরসহ কয়েক একর ফসলি জমি নদীতে বিলীন হয়ে গেছে। একই সঙ্গে ভাঙনের হুমকির মধ্যে রয়েছে রাজবাড়ী শহররক্ষা বাঁধ।
স্থানীয় সূত্রে জানা গেছে, সদর উপজেলার বরাট ইউনিয়নের লালগোলা থেকে বরাট বাজার পর্যন্ত প্রায় দুই কিলোমিটার এলাকায় নদীভাঙন শুরু হয়েছে। এতে হুমকিতে রয়েছে প্রায় দেড়শত বসতভিটা। এর মধ্যে উড়াকান্দা সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয় ও পূর্ব উড়াকান্দা সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়, উড়াকান্দা বাজার, কবরস্থান, মসজিদসহ বিভিন্ন স্থাপনা মারাত্মক ভাঙনঝুঁকিতে রয়েছে। তবে কিছু কিছু এলাকায় ভাঙন শহররক্ষা বাঁধের কাছে চলে আসায় গত মঙ্গলবার জিও ব্যাগ ফেলা শুরু করেছে পানি উন্নয়ন বোর্ড।
বরাট ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যান মো. মনিরুজ্জামান সালাম বলেন, ‘গত বছর পদ্মার ভাঙনে কয়েকশ পরিবারকে ভিটেমাটি ছাড়তে হয়েছে। কিন্তু সময়মতো সংস্কারকাজ না করায় এ বছর আবারো ভাঙন দেখা দিয়েছে। বর্তমানে স্থানীয়রা নিজ উদ্যোগে বাঁশ আর টিন দিয়ে ভাঙন ঠেকানোর চেষ্টা করছে। সরকারের পক্ষ থেকে কোনো পদক্ষেপ গ্রহণ করা হচ্ছে না। বর্তমানে যেভাবে ভাঙন দেখা দিয়েছে, তাতে আগামী দু-এক সপ্তাহের মধ্যেই বিপুল পরিমাণ বসতবাড়িসহ শহররক্ষা বাঁধ ভেঙে যাওয়ার আশঙ্কা রয়েছে।’
রাজবাড়ী জেলা পরিষদের চেয়ারম্যান মুক্তিযোদ্ধা ফকির আব্দুল জব্বার বলেন, ‘নদীশাসন ও ভাঙনরোধে ঊর্ধ্বতন কর্তৃপক্ষকে অবহিত করা হয়েছে; কিন্তু কোনো টাকা পাওয়া যাচ্ছে না। এখন স্থানীয়রা স্বতঃস্ফূর্তভাবে যার যার বাড়ির সামনে বাঁশ, কাঠ ও টিন দিয়ে বাঁধ দেয়ার চেষ্টা করছে।
রাজবাড়ীর জেলা প্রশাসক মো. শওকত আলী বলেন, ‘এরই মধ্যে পানি উন্নয়ন বোর্ডের ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তারা নদীভাঙন এলাকা পরিদর্শন করেছেন। ভাঙনকবলিত এলাকায় থাকা দুটি প্রাথমিক বিদ্যালয়সহ বসতবাড়ি রক্ষায় স্থায়ী ব্যবস্থা গ্রহণের জন্য পানি সম্পদ মন্ত্রণালয়ে চিঠি পাঠানো হবে। বরাদ্দ পাওয়া গেলে দ্রুত কাজ শুরু করা হবে।’
রাজবাড়ী-১ আসনের সংসদ সদস্য আলহাজ কাজী কেরামত আলী বলেন, ‘রাজবাড়ীতে যমুনা নদীর ক্রমাগত ভাঙনের ফলে মারাত্মক ঝুঁকির মধ্যে রয়েছে ওই এলাকার শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানসহ বিভিন্ন স্থাপনা। ডিপিপি পাস না হওয়ায় স্থায়ী ব্যবস্থা গ্রহণ করা যাচ্ছে না। আপাতত ২০০ মিটার এলাকায় ১২ হাজার জিও ব্যাগ ফেলা হচ্ছে, তবে তাতে নদীভাঙন রোধ হবে বলে মনে হয় না।’
তিনি বলেন, ‘লালগোলা থেকে উড়াকান্দা বাজার পর্যন্ত কয়েক কিলোমিটার এলাকা পুরোটাই ভাঙনের ঝুঁকিতে রয়েছে। গত বছর বন্যার সময় ওই এলাকার কয়েক হাজার ঘরবাড়ি ও শত শত বিঘা ফসলি জমি নদীতে বিলীন হয়ে গেছে। নদীশাসনের জন্য এরই মধ্যে ১০ কোটি টাকা বরাদ্দ চেয়েছে পানি উন্নয়ন বোর্ড, রাজবাড়ী। বরাদ্দ পাওয়া গেলে দ্রুত কাজ শুরু হবে। তবে সময়মতো যদি বরাদ্দ পাওয়া না যায়, তবে রাজবাড়ী শহররক্ষা বাঁধসহ গোটা শহর রক্ষা করা কঠিন হয়ে পড়বে।’
রাজবাড়ী পানি উন্নয়ন বোর্ডের উপবিভাগীয় প্রকৌশলী এসএম নুরুন্নবী বলেন, ‘বরাট ইউনিয়নের লালগোলা থেকে বরাট বাজার পর্যন্ত প্রায় দুই কিলোমিটার ভাঙনকবলিত এলাকা মেরামতের জন্য জরুরিভিত্তিতে ১০ কোটি টাকা চাওয়া হয়েছিল। কিন্তু মাত্র ২০০ মিটার এলাকার জন্য ১২ হাজার বস্তা জিও ব্যাগ ফেলার অনুমোদন দেয়া হয়েছে। এ বিষয়ে মন্ত্রণালয়ে বারবার যোগাযোগ করা হলেও কোনো সাড়া পাওয়া যায়নি। যদি মন্ত্রণালয়ের অনুমোদন পাওয়া যায় এবং চাহিদা ও প্ল্যান অনুসারে কাজ করা হয়, তবে ভাঙন রোধ করা সম্ভব।’
পানি উন্নয়ন বোর্ড ফরিদপুর সার্কেলের অতিরিক্ত প্রধান প্রকৌশলী মহম্মদ আলী বণিক বার্তাকে বলেন, ‘আমাদের অনেক বাধ্যবাধকতা আছে। ইচ্ছা থাকলেও আমরা অনেক কিছু করতে পানি না। তার পরও রাজবাড়ী শহররক্ষা বাঁধ যাতে রক্ষা করা যায়, সে ব্যাপারে সর্বোচ্চ চেষ্টা করা হচ্ছে।’
সুত্রঃ বনিক বার্তা/ কৃপ্র/এম ইসলাম