কৃষি প্রতিক্ষণ ডেস্কঃ ঝিনাইদহ, জেলায় আম চাষের আবাদ বাড়ছে । স্বাস্থ্য ঝুঁকি বিহীন জৈব আর ব্যাগিং পদ্ধতিতে আম চাষ করছে এ এলাকার আমচাষীরা। এ বছর ফলন ভালো হওয়ার আশাবাদী তারা।আমচাষীদের সাথে আলাপ করে জানা যায়, ২০১১ সালে ঝিনাইদহের কোটচাঁদপুর উপজেলায় আমের আবাদী জমির পরিমান ছিল মাত্র ২’শ ১০ হেক্টর। ওই বছর থেকে মুজিবনগর সমন্বিত কৃষি উন্নয়ন প্রকল্পের আওতায় কোটচাঁদপুর উপজেলার সলেমানপুর গ্রামে আমের প্রদর্শনী শুরু হয়। ২ বছর যেতে না যেতেই এর সুফল পেতে শুরু করেন কৃষকরা।
এরপর একে অপরের দেখা দেখি আম চাষ শুরু করেন। বর্তমানে এ উপজেলায় ৭শ’ হেক্টর জমিতে চাষ করা হচ্ছে আম্রপলি, ল্যাংড়া, ফজলি, তিলে বোম্বাই, হাড়ি ভাঙ্গা, হিমসাগরসহ বিভিন্ন জাতের সু-স্বাদু আম। আবহাওয়া অনুকূলে থাকায় আর কৃষি বিভাগের প্রযুক্তিগত পরামর্শে অন্যান্য বছরের তুলনায় এবার বাগানগুলোতে আমের বাম্পার ফলন হবে বলে আশা করছেন চাষীরা। তারা সেক্স ফেরোমন ও ব্যাগিং পদ্ধতিতে এ বছর আমের পরিচর্যা করেছেন। রোদ, বৃষ্টি বা পোকামাকড়ের আক্রমণ থেকে রক্ষা করার জন্য কার্বন ব্যাগ পরিয়ে রাখা হয়েছে। এছাড়াও আমের পোকা-মাকড় দূর করার জন্য ব্যবহার করা হয়েছে সেক্স ফেরোমন পদ্ধতি। জৈব পদ্ধতিতে আম চাষের কারণে গুণগত মান বাড়বে বলে মনে করেন কৃষকরা। এতে লাভবান হবেন আম চাষি, বাগান মালিক ও আম ব্যবসায়িরা। বর্তমানে কোটচাঁদপুর উপজেলার ৭ হাজার পরিবার আম চাষের সাথে সম্পৃক্ত। সেই সাথে কর্মসংস্থানের ব্যবস্থা হয়েছে ২ হাজার মানুষের।
আমচাষী শহিদুল ইসলাম জানান, প্রথমে তিনি ৪ বিঘা জমিতে প্রদর্শনী প্লট করেন তিনি। ৩ বছর পর সেই বাগান থেকে তিনি আম সংগ্রহ শুরু করেন। অন্যান্য ফসলের চেয়ে লাভ বেশি হওয়ায় তিনি বর্তমানে ২০ বিঘা জমিতে আমের চাষ করছেন। আমচাষী আব্দুল আজিজ জানান, প্রথমে ৩ একর জমিতে আম চাষ শুরু করেন। প্রথমে খরচ একটু বেশি হলেও বর্তমানে বিঘা প্রতি মাত্র ১০ হাজার টাকা ব্যয় হচ্ছে। আর সেখান থেকে আয় হচ্ছে ৩০ হাজার টাকা। যে কারণে তিনি অন্যান্য ফসল আবাদ বাদ দিয়ে আম চাষ করছেন। আবুল হোসেন নামের আর এক কৃষক জানান, আম চাষ লাভবান করার জন্য বর্তমানে জৈব পদ্ধতিতে আম চাষ করা হচ্ছে। প্রতিটি গাছের ডালে সেক্স ফেরোমেন দেওয়া হয়েছে। কোন প্রকার রাসায়নিক বা ওষুধ আম গাছে দেওয়া হয়নি। এছাড়াও এ বছর ব্যাগিং পদ্ধতি শুরু করা হয়েছে। এর মাধ্যমে আম পোকামাকড়ের হাত থেকে রক্ষা পেয়েছে। সেই সাথে আমের স্বাদ ও গুণ বজায় থাকছে। আমচাষী বাবুল সর্দার জানান, আম মৌসুমী ফল। অন্যান্য ফসলের ন্যায় যদি আম সংরক্ষণের কোন ব্যবস্থা সরকার গ্রহণ করতো তাহলে আমচাষীরা আরও লাভবনা হতো। আম ব্যবসায়ী ওমর ফারুক জানান, তিনি দীর্ঘদিন ধরে এ এলাকা থেকে আম নিয়ে ঢাকায় পাঠান। এখানকার আম স্বাদে ও গুণে ভালো হওয়ার কারণে বেশি লাভ করতে পারছেন।
কোটচাঁদপুর উপজেলা কৃষি কর্মকর্তা শেখ সাজ্জাদ হোসেন জানান, এবার কোটচাঁদপুর উপজেলায় ৭’শ হেক্টর জমিতে প্রায় ২০ হাজার মেট্টিক টন আম উৎপাদন হবে। কৃষি বিভাগের পক্ষ থেকে চাষীদের সকল প্রকার সহায়তা করা হচ্ছে। যেকোন সমস্যায় মাঠ পর্যায়ে উপ-সহকারী কৃষি কর্মকর্তারা সার্বক্ষণিক প্রযুক্তিগত পরামর্শ দিয়ে আসছেন। তিনি আরো জানান, কোটচাঁদপুরের মতো ঝিনাইদহ সদরসহ জেলার অন্যান্য উপজেলায়ও আম চাষ সম্প্রসারিত হচ্ছে।
সুত্রঃ বাসস / কৃপ্র/এম ইসলাম