কৃষি প্রতিক্ষণ ডেস্কঃ পঞ্চগড় জেলায় এবার মরিচের ভালো ফলন হলেও কাঙ্ক্ষিত দাম পাচ্ছেন না কৃষকরা। কৃষকদের অভিযোগ, বাজারে ভারতীয় মরিচের কারণে দেশী মরিচের চাহিদা নেই। দেশী মরিচের দাম প্রায় অর্ধেকে নেমে এসেছে। জেলা কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তর সূত্রে জানা গেছে, চলতি মৌসুমে জেলার ৮ হাজার ২৫০ হেক্টর জমিতে মরিচ আবাদের লক্ষ্যমাত্রার বিপরীতে আবাদ হয় ৯ হাজার ৭৯০ হেক্টর জমিতে। গত মৌসুমে ১ হাজার ৩০ হেক্টর জমিতে মরিচের আবাদ হয়েছিল। এবার আবহাওয়া অনুকূলে থাকায় ফলন বেশ ভালো হয়েছে। চলতি মৌসুমে ১১ হাজার ৮৬ টন লক্ষ্যমাত্রার বিপরীতে ১৮ হাজার ৯৯৫ টন মরিচ উত্পাদন হয়েছে। এর মধ্যে শুধু আটোয়ারী উপজেলায় ৯ হাজার ৩৫০ টন মরিচ উত্পাদন হয়েছে।
ভালো ফলন নিয়েও খুশি হতে পারছেন না কৃষকরা। বরং বাজারমন্দায় বিপাকে পড়েছেন তারা। কৃষকরা জানান, জেলায় এবার স্থানীয় জাত ছাড়াও উচ্চফলনশীল বাঁশগাইয়া, মল্লিকা, বিন্দু, হট মাস্টার, সুরক্ষাসহ বিভিন্ন জাতের মরিচ চাষ হয়েছে। প্রতি বিঘা জমিতে কাঁচামরিচ উত্পাদন হয়েছে ২৮ থেকে ৩২ মণ। শুকানোর পর ১০ থেকে ১২ মণে নেমে আসে। প্রতি বিঘা মরিচ চাষে খরচ হয়েছে ১২ থেকে ১৪ হাজার টাকা।
বর্তমানে শুকনা মরিচ বিক্রি হচ্ছে মণপ্রতি ২ হাজার ৭০০ থেকে ২ হাজার ৮০০ টাকা দরে। যেখানে গত বছর বিক্রি হয়েছিল সাড়ে ৪ থেকে ৫ হাজার টাকা দরে। তাছাড়া শ্রমিকদের মজুরিও বেড়েছে। গত বছর প্রতি ঢাকি (মরিচ রাখার বাঁশের পাত্র) মরিচ সংগ্রহে শ্রমিকদের দিতে হতো ২০ টাকা, কিন্তু এবার দিতে হচ্ছে ৪৫ থেকে ৫০ টাকা। সংশ্লিষ্টরা জানান, এবার উত্পাদন বেশি হওয়ায় বাজারে সরবরাহ বেশি। তার ওপর ভরা মৌসুমে বাজারে ভারতীয় মরিচ আসায় দেশী মরিচের চাহিদা কমে গেছে। এ কারণে দাম কমেছে।
পঞ্চগড় শহরের কাঁচাবাজারের মরিচ বিক্রেতা হারুনুর রশিদ জানান, বর্তমানে খুচরা পর্যায়ে ভারতীয় মরিচ কেজিপ্রতি ১৬০ টাকা দরে বিক্রি হচ্ছে। আর দেশী মরিচের দাম ১১০ থেকে ১২০ টাকা। তার পরও দেশী মরিচের ক্রেতা নেই। কারণ ভারতীয় মরিচ দেখতে আকর্ষণীয়। তিনি আরো জানান, তার দোকান থেকে প্রতি মাসে গড়ে ৬০ কেজি ভারতীয় মরিচ বিক্রি হয়। তবে কয়েক দিন থেকে দেশী মরিচ বিক্রিই হয়নি। আটোয়ারী ফকিরগঞ্জ বাজারের মরিচ ব্যবসায়ী ফারুক হোসেন বলেন, বর্তমানে প্রতি মণ শুকনা মরিচ ২ হাজার ৭০০ থেকে ২ হাজার ৮০০ টাকা দরে কিনছি। আমরা এখান থেকে বরিশাল, ভোলা, চট্টগ্রামসহ বিভিন্ন জেলায় এ মরিচ সরবরাহ করি। প্রতি মণ মরিচে আমাদের খরচ হয় দেড়শ টাকার মতো। আর বাইরে এ মরিচ বিক্রি হচ্ছে ৩ হাজার থেকে ৩ হাজার ১০০ টাকা দরে।
উপজেলার মির্জাপুর এলাকার মরিচচাষী আব্দুল করিম বলেন, গত বছর আড়াই বিঘা জমিতে মরিচ চাষ করে ৯০ হাজার টাকার মরিচ বিক্রি করেছিলাম। এবার ফলন ভালো হলেও দাম অর্ধেক। ভারতীয় মরিচের কারণে আমরা দাম পাচ্ছি না। বাজারের এ অবস্থা থাকলে খরচ ওঠানোই কষ্টকর হয়ে যাবে।সদর উপজেলার ফুটকিবাড়ী বাজারের মরিচ ব্যবসায়ী সোহেল রানাও দেশী মরিচের বাজারমন্দার জন্য ভারতীয় মরিচ আমদানিকে দুষছেন।
জেলা কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তরের উপপরিচালক মো. শামছুল হক বলছেন, পঞ্চগড়ের মাটি ও আবহাওয়া মরিচ চাষের উপযোগী হওয়ায় জেলায় প্রচুর মরিচ চাষ হয়েছে এবং উত্পাদনও ভালো হয়েছে। ফলে এবার স্থানীয় চাহিদা পূরণ করে মরিচ অন্য জেলায় পাঠানো যাবে। তবে সব ক্ষেত থেকে একসঙ্গে মরিচ সংগ্রহ ও উত্পাদন বেশি হওয়ায় গত বছরের তুলনায় এবার দাম কম।
সুত্রঃ বনিক বার্তা/ কৃপ্র/এম ইসলাম