কৃষি প্রতিক্ষণ ডেস্কঃ ফরিদপুর জেলায় বাড়ছে পাটের আবাদ। গত সাত বছরে জেলায় পাটের আবাদ বেড়েছে প্রায় সাত হাজার হেক্টর জমিতে। তবে এ সময়ে পানির সংস্থানসাপেক্ষে পাটের উৎপাদন কম-বেশি হয়েছে। কৃষকদের দাবি, ন্যায্যমূল্য নিশ্চিত করা হলে আরো অনেকে পাটচাষে উত্সাহিত হবেন। জেলা কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তর সূত্রে জানা গেছে, গত ২০১০-১১ মৌসুমে ফরিদপুরে ৭৫ হাজার ৯৬৮ হেক্টর জমিতে ৮ লাখ ৭৩ হাজার ৫৩ বেল পাট উৎপাদিত হয়। এছাড়া ২০১১-১২ মৌসুমে ৭৭ হাজার ১৯০ হেক্টর জমিতে ৬ লাখ ১৭ হাজার ২২ বেল, ২০১২-১৩ মৌসুমে ৭১ হাজার ৪৮৩ হেক্টর জমিতে ৮ লাখ ২০ হাজার ৮১ বেল, ২০১৩-১৪ মৌসুমে ৭৪ হাজার ৩৯৬ হেক্টর জমিতে ৬ লাখ ৮৬ হাজার ৪৩৯ বেল, ২০১৪-১৫ মৌসুমে ৭৪ হাজার ৮৬ হেক্টর জমিতে ৬ লাখ ৭৩ হাজার ৪৭০ বেল, ২০১৫-১৬ মৌসুমে ৭৭ হাজার ২০৩ হেক্টর জমিতে আবাদ করে ৭ লাখ ৩৩ হাজার ৪৯০ বেল, ২০১৬-১৭ মৌসুমে ৮২ হাজার ৫০ হেক্টর জমিতে ৯ লাখ ২ হাজার ১৪৫ বেল পাট উৎপাদন করা হয়। আর চলতি ২০১৭-১৮ মৌসুমে ৮২ হাজার ৮৬৫ হেক্টর জমিতে পাটের আবাদ করা হয়েছে। এ হিসাবে গত সাত বছরে পাটের আবাদ বেড়েছে ৬ হাজার ৮৯৭ হেক্টর জমিতে। এবার উৎপাদনের লক্ষ্যমাত্রা ধরা হয়েছে ৯ লাখ ২ হাজার ১৫১ বেল, তবে তা নির্ভর করছে আবহাওয়া ও পানির সংস্থানের ওপর।
কৃষকরা জানান, চৈত্রের শেষ ভাগে পাটের মৌসুম শুরু হয়। বৈশাখে পুরোদমে পাটের আবাদ হয়। আষাঢ় ও শ্রাবণ মাসে জমি থেকে পাট কর্তন করা হয়। এ সময় বৃষ্টি বেশি হলে পাট জাগ দেয়া সহজ হয়। এতে ভালো পাট পাওয়া যায়। তবে কোনো কারণে পানির অভাব দেখা দিলে পাট উৎপাদন ক্ষতিগ্রস্ত হয়। তারা জানান, এ অঞ্চলে অন্য ফসলের তুলনায় পাট ভালো হয়। এছাড়া বর্ষা ও বন্যায় পানিতে পাটগাছের টিকে থাকার সক্ষমতা বেশি। তাই ফসল হিসেবে পাটই চাষীদের অধিকতর পছন্দ।
বোয়ালমারীর কয়েক কৃষক জানান, গত কয়েক বছরে পাট উৎপাদন ভালো হলেও ন্যায্যমূল্য না পাওয়ায় অনেকে ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছেন। তবে এ বছর পাটের মূল্য ভালো। সাতৈর বাজারের ব্যবসায়ীরা জানান, বর্তমানে প্রথম শ্রেণীর মণপ্রতি পাট ১ হাজার ৯০০ থেকে ২ হাজার টাকায়, দ্বিতীয় শ্রেণীর পাট ১ হাজার ৬০০ থেকে ১ হাজার ৭০০ টাকায় এবং নিম্নমানের পাট ১ হাজার ৪০০ টাকায় পাট বিক্রি হচ্ছে।
চাষীরা জানান, জেলায় পাট উৎপাদন হলেও প্রক্রিয়াকরণে নানা সমস্যায় পড়তে হয়। অনেক সময় পানির অভাবে জাগ দেয়া যায় না। কখনো খাদে, পুকুরে জমে থাকা বদ্ধ পানিতে জাগ দেয়া হলেও ভালো পাট উৎপাদন হয় না। এতে চাষীরা ক্ষতিগ্রস্ত হন। তাদের দাবি, ন্যায্যমূল্য নিশ্চিত ও আধুনিক পদ্ধতিতে আঁশ সংগ্রহের ব্যবস্থা করা গেলে পাটের উৎপাদন আরো বাড়বে।
কৃষি কর্মকর্তারা জানান, রিবন রেটিং পদ্ধতিতে আঁশ সংগ্রহে তুলনামূলক পানি কম লাগে। এ পদ্ধতিতে কাঁচা পাট থেকে আঁশ ছাড়িয়ে তা নির্দিষ্ট জায়গায় গর্ত করে পলিথিন দ্বারা আবৃত করে রাখা হয়। পরে পানি দিয়ে আঁশ ভিজিয়ে রাখতে হয়। পাট গবেষণা ইনস্টিটিউট উদ্ভাবিত এ পদ্ধতি পাট প্রক্রিয়াজাতকরণের জন্য সর্বাধুনিক হিসেবে বিবেচিত। তবে ফরিদপুরের কৃষকরা এ পদ্ধতি আঁশ ছাড়াতে আগ্রহী নয়।
এ ব্যাপারে ফরিদপুর কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তরের উপপরিচালক জিএম আব্দুর রউফ জানান, ফরিদপুর অঞ্চল পাট আবাদের জন্য উপযোগী। ন্যায্যমূল্যের নিশ্চয়তা পেলে কৃষকরা আরো বেশি পাট আবাদে আগ্রহী হবেন। রিবন রেটিং পদ্ধতিতে আঁশ সংগ্রহের পরামর্শ দেয়া হলেও কৃষকরা বিষয়টিকে নানা ঝামেলার মনে করে আগ্রহ দেখাচ্ছেন না।বোয়ালমারী উপজেলার চতুল গ্রামের কৃষক রশিদ মোল্লা, মিটুল মোল্লা জানান, রিবন রেটিং পদ্ধতিতে আঁশ সংগ্রহে নানা ঝামেলা পোহাতে হয়। পর্যাপ্ত জায়গা পাওয়া যায় না, আবার নিয়মিত পানি সরবরাহ করা কঠিন। এ কারণে তারা রিবন রেটিং পদ্ধতিতে আঁশ সংগ্রহে আগ্রহী নন। নতুন কোনো পদ্ধতি উদ্ভাবন করা হলে বরং ভালো হয়।
সুত্র, বাসস/ কৃপ্র/এম ইসলাম