কৃষি প্রতিক্ষণ ডেস্কঃ জমিতে ট্রাক্টর ব্যবহার করে ধান ও গম আবাদ করলে কৃষকের খরচ কম হয় ৬৯-৮৪ শতাংশ। এ সুবিধার পাশাপাশি শ্রমিক সংকট ও সরকারের ভর্তুকি সহায়তার কারণে গত কয়েক বছরে ট্রাক্টরের বাজার সম্প্রসারণ হয়েছে প্রায় ৪০ শতাংশ। কৃষকের ব্যবহূত জনপ্রিয় এ কৃষিযন্ত্রের ওপর এবার ১৯ শতাংশ বাড়তি শুল্ক প্রস্তাব করা হয়েছে বাজেটে।
বাজারে এখন ট্রাক্টর বিক্রি হচ্ছে সাড়ে ৮ লাখ থেকে সাড়ে ১২ লাখ টাকায়। প্রস্তাবিত শুল্ক ও ভ্যাটসহ বাড়তি ১৯ শতাংশ যোগ করলে প্রতিটি ট্রাক্টরের মূল্য প্রায় ২ লাখ টাকা বেড়ে যাবে। বাড়তি এ দামের কারণে কৃষক ট্রাক্টর কেনায় আগ্রহ হারাতে পারেন বলে মনে করছেন বিশেষজ্ঞরা। এতে ব্যাহত হবে কৃষির যান্ত্রিকীকরণ।
জানতে চাইলে কৃষি মন্ত্রণালয় সম্পর্কিত সংসদীয় স্থায়ী কমিটির সভাপতি মো. মকবুল হোসেন বলেন, কয়েক বছর ধরেই কৃষির যান্ত্রিকীকরণে কৃষকদের উদ্বুদ্ধ করছে সরকার। এজন্য কৃষি যন্ত্রপাতির দাম কৃষকের নাগালের মধ্যে রাখতে কার্যকর পদক্ষেপ নেয়া হয়েছে। নগদ প্রণোদনা, দেশীয় শিল্পের মাধ্যমে যন্ত্রপাতি উৎপাদনসহ অর্থায়ন সুবিধা দেয়া হয়েছে। বাজেটে শুল্কারোপ ও ভ্যাট আরোপের বিষয়টি এখনো আমাদের নজরে আসেনি। তবে কৃষকের স্বার্থে এ ধরনের শুল্কারোপ কিংবা দাম বাড়তে পারে এমন সিদ্ধান্ত থেকে সরে আসতে কার্যকর উদ্যোগ নেয়া হবে।
অতিরিক্ত শুল্কের কারণে কৃষিযন্ত্রটি কৃষকের নাগালের বাইরে চলে যাবে বলে মনে করেন ট্রাক্টর আমদানিকারক ও বিপণনকারী প্রতিষ্ঠান দ্য মেটাল প্রাইভেট লিমিটেডের ব্যবস্থাপনা পরিচালক সাদিদ জামিল। তিনি বলেন, শ্রম ও সময় সাশ্রয়ের জন্য কার্যকর ভারী কৃষিযন্ত্র হিসেবে ট্রাক্টরের জনপ্রিয়তা ব্যাপক। এ ধরনের যন্ত্র কৃষকের ক্রয়ক্ষমতার মধ্যে নিয়ে আসতে সরকারের ভর্তুকি সহায়তা কাজে এসেছে। এ অবস্থায় যদি ১৯ শতাংশ বাড়তি ভ্যাট ও শুল্ক আরোপ করা হয়, তাহলে এর দাম অনেক বেড়ে যাবে।
ট্রাক্টরের ব্যবহারে উৎপাদনশীলতা বৃদ্ধির পাশাপাশি ব্যয়ও সাশ্রয় হয়। বাংলাদেশ ধান গবেষণা ইনস্টিটিউটের (ব্রি) তথ্য অনুযায়ী, প্রথাগত আবাদ পদ্ধতির তুলনায় ট্রাক্টর ব্যবহার করে ধান আবাদে ৬৯ ও গম আবাদে ৮৪ শতাংশ খরচ সাশ্রয় হয়। আবার পাওয়ার টিলারের তুলনায় অনেক বেশি কার্যকর ট্রাক্টর। একটি পাওয়ার টিলার পরিচালনায় দিনে খরচ হয় ১ হাজার ৬০০ টাকা। কৃষকের আয় হয় ৩ হাজার টাকা। ফলে তার নিট আয় থাকে ১ হাজার ৪০০ টাকা। অন্যদিকে একজন কৃষক ট্রাক্টর পরিচালনা করলে খরচ হয় ৬ হাজার টাকা। এর বিপরীতে আয় হয় প্রায় ১২ হাজার টাকা। এতে নিট আয় থাকে ৬ হাজার টাকা। আবার মাটির গুণগত মান ধরে রাখার ক্ষেত্রেও পাওয়ার টিলারের চেয়ে বেশি কার্যকর ট্রাক্টর।
কৃষি মন্ত্রণালয়ের সাবেক সচিব আনোয়ার ফারুক এ প্রসঙ্গে বলেন, সার্বিকভাবে কৃষিতে শ্রমিক সংকট মোকাবেলা ও উৎপাদন বাড়াতে যান্ত্রিকীকরণের বিকল্প নেই। এজন্য কৃষি যন্ত্রপাতি ক্রয়ের ক্ষেত্রে সরকার দাম কমিয়ে আনতে নগদ প্রণোদনাসহ নানা উদ্যোগ নিয়েছে। তবে বাজেটে ট্রাক্টরের ওপর নতুন করে শুল্কারোপ হলে যন্ত্রটির দাম বেড়ে এর প্রতি কৃষকের অনাগ্রহ তৈরি হতে পারে। এতে মাটির গুণাগুণ ধরে রাখা ও কৃষি উৎপাদনে নেতিবাচক প্রভাব পড়তে পারে।
কৃপ্র/এম ইসলাম