‘দেশে ফল উৎপাদনে সবচেয়ে এগিয়ে আছে কলা’
কৃষি প্রতিক্ষণ ডেস্কঃ পরিসংখ্যান বলছে, বাংলাদেশের ফল আবাদের আওতাধীন জমির ১৯ দশমিক ২৫ শতাংশ আমের দখলে। ২০১৪-১৫ অর্থবছর আমের আবাদ ছিল প্রায় ৬৬ হাজার একর জমিতে। এর বিপরীতে উৎপাদন হয় ১০ লাখ ১৮ হাজার টন আম। জাতিসংঘের কৃষি ও খাদ্য সংস্থার তথ্যানুসারে, আম উৎপাদনে বাংলাদেশের অবস্থান এখন বিশ্বের শীর্ষ দশে। আমের ওপর নির্ভর করে গড়ে উঠেছে দেশের ফ্রুট ড্রিংকস শিল্প। অভ্যন্তরীণ ও রফতানি মিলে বাংলাদেশী ফ্রুট ড্রিংকসের প্রায় ২ হাজার কোটি টাকার বাজার তৈরি হয়েছে।
আমাদের দেশে সারা বছরই বিভিন্ন জাতের ফল উৎপাদন হয়। বর্তমানে দেশে প্রায় ৭০ ধরনের ফল উৎপাদিত হচ্ছে। এর মধ্যে সবচেয়ে এগিয়ে আছে কলা। বাংলাদেশ পরিসংখ্যান ব্যুরোর তথ্য বলছে, সারা দেশে সোয়া তিন লাখ একর জমিতে ফলের আবাদ হলেও এর ৩৫ শতাংশের বেশি কলা। বাণিজ্যিক ভিত্তিতে বর্তমানে চাষ হচ্ছে সাতটি জাতের কলা। জাতগুলোর মধ্যে অন্যতম অমৃতসাগর, সবরি, চম্পা, বারি কলা-১, মেহেরসাগর ও কবরী। কলা চাষে একেক জাতের একেক এলাকায় আধিপত্য থাকলেও সার্বিকভাবে ফলটির সবচেয়ে বেশি আবাদ হয় টাঙ্গাইল জেলায়। এর পর বেশি কলা আবাদ হচ্ছে নরসিংদী, ময়মনসিংহ, বান্দরবান ও খাগড়াছড়ি। ২০০৮-০৯ অর্থবছরে দেশে কলা আবাদ হয়েছিল ৩০ হাজার একর জমিতে। এর বিপরীতে উৎপাদন ছিল ২ লাখ ১৯ হাজার টন। ২০১৪-১৫ অর্থবছরে এসে আবাদের পরিসর বেড়ে দাঁড়ায় ১ লাখ ১৫ হাজার একরে। এ পরিমাণ জমি থেকে অর্থবছরটিতে কলা পাওয়া যায় ৭ লাখ ৭৭ হাজার টন।
ধান আবাদে কৃষকের কাঙ্ক্ষিত মুনাফা না হওয়ায় তারা কলার পাশাপাশি অন্যান্য ফল আবাদে ঝুঁকছেন বলে মনে করেন শেরেবাংলা কৃষি বিশ্ববিদ্যালয়ের সাবেক উপাচার্য ও ইন্টারন্যাশনাল ইউনিভার্সিটি অব বিসনেস এগ্রিকালচার অ্যান্ড টেকনোলজির অধ্যাপক ড. এএম ফারুক। এছাড়া ফল প্রক্রিয়াজাত শিল্প বিকাশের কারণেও উৎপাদনে আগ্রহী হচ্ছেন কৃষক। এজন্য মূলত কয়েকটি ফল আবাদে কৃষক এখনো বেশি মনোযোগ। কলার পরই রয়েছে আম।
আবাদের দিক দিয়ে তৃতীয় শীর্ষ ফল আনারস। তথ্য অনুযায়ী, ২০১৪-১৫ অর্থবছর ফলটির আবাদ হয় প্রায় ৩৪ হাজার একর জমিতে, যা ফল আবাদের আওতায় থাকা মোট জমির ১০ দশমিক ৫৬ শতাংশ। এর বিপরীতে উৎপাদন হয় প্রায় দুই লাখ টন আনারস। সারা দেশে উৎপাদিত আনারসের প্রায় ৭০ শতাংশ আবার আসছে ছয় জেলা থেকে। এর মধ্যে সবচেয়ে বেশি উৎপাদন হচ্ছে রাঙ্গামাটি, খাগড়াছড়ি, ময়মনসিংহ, টাঙ্গাইল ও গাজীপুরে। এছাড়া বান্দরবান ও চট্টগ্রামেও ফলটির আবাদ হচ্ছে। তবে এখন পর্যন্ত আনারস প্রক্রিয়াকরণ কারখানা গড়ে না ওঠায় ফলটির আবাদ সেভাবে সম্প্রসারণ হচ্ছে না।
কলা, আম ও আনারসের পর সবচেয়ে বেশি আবাদ হচ্ছে কাঁঠালের। উঁচু ও লাল মাটি ফলটি চাষে বিশেষভাবে উপযোগী। মাটির এ বৈশিষ্ট্যের কারণেই কাঁঠাল উৎপাদনে এগিয়ে আছে সাভার, গাজীপুর, নরসিংদী ও টাঙ্গাইল। বিবিএসের হিসাবে, ২০১৪-১৫ অর্থবছর কাঁঠাল চাষের আওতায় ছিল ফল উৎপাদনে ব্যবহূত মোট জমির ১০ দশমিক ২৫ শতাংশ। ৩৩ হাজার ১৫১ একর জমি থেকে অর্থবছরটিতে কাঁঠাল পাওয়া যায় ১০ লাখ ৬০ হাজার টন।
কৃপ্র/এম ইসলাম