কৃষি প্রতিক্ষণ ডেস্কঃ কৃষকদের আবাদ পদ্ধতি সম্পর্কে প্রশিক্ষিত করা গেলে উৎপাদনশীলতা প্রায় ২০-৩০ শতাংশ পর্যন্ত বৃদ্ধি পায়। এতে উৎপাদন ব্যয় কমার পাশাপাশি কমে উৎপাদন সময়ও। এ প্রক্রিয়ায় এখন পর্যন্ত কৃষকের আর্থসামাজিক বিভিন্ন সূচকেও উন্নতি করা সম্ভব হয়েছে। গতকাল রাজধানীতে আয়োজিত এক অনুষ্ঠানে এ তথ্য জানিয়েছে বেসরকারি উন্নয়ন সংস্থা সলিডারিডাডের।
সলিডারিডাডের ‘সাসটেইনেবল এগ্রিকালচার, ফুড সিকিউরিটি অ্যান্ড লিংকেজেস (সফল)’ শীর্ষক প্রকল্পের দ্বিতীয় পর্যায় উদ্বোধন করা হয়। এ উপলক্ষে গতকাল রাজধানীর কৃষিবিদ ইনস্টিটিউটে ‘সফল: লার্নিং শেয়ারিং অ্যান্ড লঞ্চিং অব সেকেন্ড ফেজ’ শীর্ষক অনুষ্ঠানের আয়োজন করা হয়। সলিডারিডাড সাউথ অ্যান্ড সাউথইস্টের ব্যবস্থাপনা পরিচালক ড. শতদ্রু চট্টোপাধ্যায়ের সভাপতিত্বে অনুষ্ঠানে কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তরের প্লান্ট প্রটেকশন উইংয়ের পরিচালক কৃষিবিদ অমিতাভ দাস উপস্থিত ছিলেন। অনুষ্ঠানে সফলের দ্বিতীয় পর্যায়ের উদ্বোধন করেন বাংলাদেশে নিযুক্ত নেদারল্যান্ডস দূতাবাসের ফার্স্ট সেক্রেটারি লরেন্ট উমান্স। অনুষ্ঠানে প্রধান অতিথি ছিলেন কৃষি মন্ত্রণালয়ের অতিরিক্ত সচিব মো. মোশাররফ হোসেন।
অনুষ্ঠানে জানানো হয়, প্রকল্পের আওতায় দক্ষিণাঞ্চলের প্রায় ৯৩ শতাংশ মত্স্য খামারির উৎপাদন বেড়েছে ৩০-৪০ শতাংশ। আর সঠিক প্রশিক্ষণ ও সংগঠিত করার কারণে সবজির উৎপাদন বেড়েছে প্রায় ২০-২৫ শতাংশ। এছাড়া আবাদ পদ্ধতির সঠিক প্রয়োগের কারণে মাটির গুণাগুণ ৭০ শতাংশ পর্যন্ত বৃদ্ধি করা সম্ভব হয়েছে। সফলের এসব কার্যক্রমের কারণে আওতাধীন এলাকায় পাঁচ বছরের কম বয়সী শিশুদের মধ্যে খর্বাকৃতির হার ২৫ শতাংশ, যা জাতীয় হারের তুলনায় ১১ শতাংশ কম।
এতে আরো জানানো হয়, দক্ষিণ-পশ্চিমাঞ্চলের প্রায় ৫৮ হাজার কৃষকের মধ্যে এ কার্যক্রম পরিচালনা করা হয়। নেদারল্যান্ডস দূতাবাসের সহায়তায় বাস্তবায়িত এ প্রকল্পের প্রথম পর্বে কৃষি, দুগ্ধ ও সবজি খাতে ১ হাজার ২০টি উৎপাদনকারী প্লাটফর্ম তৈরি করা সম্ভব হয়েছে। পাশাপাশি লিড ফার্মার, কমিউনিটি পুষ্টি স্বেচ্ছাসেবক ও কমিউনিটি প্রাণিসম্পদ সেবাদাতাসহ স্থানীয় পর্যায়ে উল্লেখযোগ্য সংখ্যক সেবাদাতা তৈরি হয়েছে। টেকসই পদ্ধতিতে উৎপাদনশীলতা বৃদ্ধিতে জাতীয় কর্মপরিকল্পনা প্রণয়নের লক্ষ্যে নীতিমালা প্রণয়ন করা হয়েছে। এর আওতায় উত্তম কৃষি উদ্যোগ গ্রহণ, সেবা-বাজার ব্যবস্থা ও আর্থিক সুবিধায় অংশগ্রহণসহ শক্তিশালী কৃষি ও ব্যবসা সহায়তা কাঠামো তৈরিতে অবদান রেখেছে এ প্রকল্প।
খুলনার ডুমুরিয়া থেকে আগত সফল লিড ফার্মার এস এম আব্দুস সাত্তার বলেন, সফলের কারণে খুলনা অঞ্চলে প্রাণিসম্পদ উন্নয়ন ও দুগ্ধ উৎপাদনে বিপ্লব এসেছে। পশুর জাত উন্নয়ন, উচ্চফলনশীল ঘাস চাষ, স্বাস্থ্যসম্মত গোশালা নির্মাণসহ সার্বিক কার্যক্রমে কৃষকদের সংগঠিত করায় উৎপাদন বাড়ার পাশাপাশি কমেছে উৎপাদন ব্যয় ও সময়।
সলিডারিডাড বাংলাদেশের কান্ট্রি ম্যানেজার সেলিম রেজা হাসান বলেন, প্রকল্পের দ্বিতীয় পর্বটি ২০১৭-২০ মেয়াদে বাস্তবায়ন হবে। নতুন এ পর্বে মত্স্য, দুগ্ধ ও সবজি এবং ফলের পাশাপাশি নতুন পণ্য হিসেবে যুক্ত হয়েছে সয়াবিন। সয়াবিন চাষে নোয়াখালী ও লক্ষ্মীপুর জেলার ২৫ হাজার পরিবারকে অন্তর্ভুক্ত করা হবে। বাংলাদেশের বদ্বীপ অঞ্চলের জন্য একটি সাসটেইনেবিলিটি কাঠামো তৈরি করা হবে। এর মাধ্যমে এ অঞ্চলের কৃষিকে আরো বেশি দুর্যোগসহনক্ষম করা হবে। এতে এক লাখের বেশি গ্রামীণ পরিবার উপকৃত হবে। উৎপাদক থেকে ভোক্তা পর্যায়ে ভ্যালু চেইন ও সাপ্লাই চেইনে কর্মরত ব্যক্তিদের মধ্যে আন্তঃসহযোগিতার মাধ্যমে কৃষি খাতের টেকসই উন্নয়নে পদ্ধতিগত নানা কৌশল গ্রহণ করছেন কৃষকরা।
কৃপ্র/এম ইসলাম