কৃষি প্রতিক্ষণ ডেস্কঃ দাম নির্ধারণে বিলম্ব এবং মান নিয়ন্ত্রণে কড়াকড়ির কারণে এবার লোকসানের মুখে পড়তে বসেছেন রাজশাহী অঞ্চলে রফতানিযোগ্য আম উৎপাদনকারীরা। এতে চাষীদের অন্তত ৪০ কোটি টাকা ক্ষতি হতে পারে বলে আশঙ্কা করা হচ্ছে। আম রফতানির মান নিয়ন্ত্রণ (কোয়ালিটি কন্ট্রোল) করছে কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তরের উদ্ভিদ সংগনিরোধ শাখা। রফতানিকারকদের অভিযোগ, এ শাখার অযৌক্তিক কড়াকড়িতে ক্ষতিগ্রস্ত হতে চলেছেন চাষীরা। খবর দৈনিক বনিক বার্তা।
রাজশাহী আঞ্চলিক কৃষি দপ্তরের হিসাবে, ২০১৫-১৬ অর্থবছরে রাজশাহী ও চাঁপাইনবাবগঞ্জ অঞ্চলের ৫৮ হাজার ৯২৪ হেক্টর আমবাগানে ৬ লাখ ৩৮ হাজার ৮৮৮ টন আম উৎপাদন হয়েছে। এ বছর বাগানের সংখ্যা কিছুটা বেড়েছে। ফলে উৎপাদনও বাড়বে বলে ধরে নিচ্ছে কৃষি দপ্তর।
জেলা কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তর জানিয়েছে, এ বছর রাজশাহীর ১০০ চাষী ১০ লাখ আম ফ্রুটব্যাগিং করেছেন। আর চাঁপাইনবাবগঞ্জের ১৯১ চাষী ফ্রুটব্যাগিং করেছেন ৩ কোটি আম। ব্যাগিং করা হয়েছে ক্ষীরসাপাত, ফজলি ও আশ্বিনা আম। এ থেকে রফতানিযোগ্য আম পাওয়া যাবে প্রায় ১৫ হাজার টন। যেখানে গত বছর ইংল্যান্ড, ইতালি, জার্মানি ও সুইডেনে রাজশাহী থেকে ৩০ এবং চাঁপাইনবাবগঞ্জ থেকে ২০০ টন আম রফতানি হয়েছে।
রফতানির উদ্দেশে আম উৎপাদনকারী চাষীরা গড়ে তুলেছেন রাজশাহী অ্যাগ্রো ফুড প্রডিউসার সোসাইটি। এ সংগঠনের পাশাপাশি আলামিন হোলসেলসহ কয়েকটি প্রতিষ্ঠান চাষীদের কাছ থেকে আম কিনে রফতানি করে। গত সপ্তাহে আমের দাম নির্ধারণ নিয়ে চাষী, রফতানিকারক ও কৃষি কর্মকর্তারা বৈঠক করেছেন। এবার উৎপাদন বেশি হওয়ায় ব্যাপক দরকষাকষির পর রফতানিকারকরা গত বছরের চেয়ে ৫ টাকা কমে ৮০ টাকা কেজিতে চাষীদের কাছ থেকে আম কিনতে রাজি হন। এ নিয়ে অনেক চাষীই ক্ষোভ প্রকাশ করেছেন।
চাষীদের ভাষ্য, এ বছর ক্ষীরসাপাত আম রফতানির কথা ছিল ২৮ মে থেকে। কিন্তু দাম নির্ধারণসহ নানা জটিলতায় শুরু হয়েছে ১৩ দিন পর। এর আগেই অধিকাংশ আম পেকে ব্যাগের মধ্যে পড়ে গেছে। অবশিষ্ট যেটুকু আছে, সেটি মান নিয়ন্ত্রণের সময় ৬০ থেকে ৭০ শতাংশ রফতানি অযোগ্য ঘোষণা করছে উদ্ভিদ সংগনিরোধ উইং। আবার রঙের কারণে দেশের বাজারে এ আমের চাহিদা কম। ফলে স্থানীয় বাজারেও ন্যায্য দাম পাওয়া যাচ্ছে না। চাঁপাইনবাবগঞ্জে আম রফতানি এখনো শুরু না হওয়ায় সেখানকার চাষীদের অবস্থা আরো ভয়াবহ।
মান নিয়ন্ত্রণের সময় বেশির ভাগ আম অযোগ্য ঘোষণা করাকে অযৌক্তিক বলেছেন রাজশাহী অ্যাগ্রো ফুড প্রডিউসার সোসাইটি সভাপতি আনোয়ারুল হক। তিনি বলেন, ফ্রুটব্যাগের আমে পোকামাকড় প্রবেশের সুযোগ নেই। আঘাতও থাকে না। পুরোপুরি বিষমুক্ত ও স্বাস্থ্যসম্মত এ আমের রঙ হয় আকর্ষণীয়।তিনি আরো বলেন, আম রফতানি ব্যাহত হলে রাজশাহীতে ১০ কোটি ও চাঁপাইনবাবগঞ্জে ৩০ কোটি টাকার আর্থিক ক্ষতির মুখে পড়বেন চাষীরা। অস্তিত্ব রক্ষায় প্রয়োজনে রাস্তায় নামার কথাও বলেন আনোয়ারুল হক।
অভিযোগের বিষয়ে জানতে চাইলে কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তরের উদ্ভিদ সংগনিরোধ শাখার উপপরিচালক (রফতানি) কৃষিবিদ মুহাম্মদ আনোয়ার হোসেন খান বলেন, তারা কেবল আন্তর্জাতিক মান নিশ্চিত করছেন। আন্তর্জাতিক বাজার ধরে রাখতেই এ কড়াকড়ি। আমের দাম নির্ধারণ নিয়ে তিনি বলেন, কৃষি দপ্তর নয়, ফ্রুটব্যাগ বিক্রেতারাই চাষীদের রফতানিযোগ্য আম উৎপাদনে উদ্বুদ্ধ করেছে। এ নিয়ে চাষীদের সঙ্গে কৃষি বিভাগের কোনো চুক্তিও নেই। আমের দাম নির্ধারণেও কৃষি দপ্তরের সম্পৃক্ততা নেই। এটি করেন চাষী ও রফতানিকারকরা।
এই কর্মকর্তা জানান, এ বছর এক হাজার টন আম রফতানির লক্ষ্যমাত্রা ধরা হয়েছে। দেরিতে শুরু হলেও লক্ষ্যমাত্রা অর্জন নিয়ে তিনি আশাবাদী। এছাড়া এবার রফতানি ব্যাহত হলেও আগামীতে উৎপাদন বাড়বে বলে দাবি তার। এদিকে আম রফতানি দেরিতে শুরু হওয়ার জন্য রফতানিকারকদের দায়ী করে চাঁপাইনবাবগঞ্জ কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তরের উপপরিচালক মঞ্জুর হুদা বলেন, চাঁপাইনবাবগঞ্জে আম রফতানি এখনো শুরু হয়নি। অথচ ২৮ মে থেকে ক্ষীরসাপাত রফতানির কথা ছিল। এছাড়া ৭ থেকে ১০ জুনের মধ্যে ল্যাংড়া ও ২০ জুন থেকে ফজলি আম রফতানির কথা। কিন্তু এখন পর্যন্ত রফতানিকারকদের কোনো সাড়া পাওয়া যাচ্ছে না।
কৃপ্র/এম ইসলাম