‘ভূতাত্ত্বিক জরিপ ছাড়া পার্বত্য অঞ্চলে কোনো অবকাঠামো তৈরি না করার আহ্বান’
কৃষি প্রতিক্ষণ ডেস্কঃ পার্বত্য অঞ্চলে সাম্প্রতিক পাহাড়ধসের ঘটনা একাধারে মানবিক, রাষ্ট্রীয় ও প্রশাসনিক বিপর্যয়। পার্বত্য অঞ্চলের প্রতি রাষ্ট্রের নীতি ও রাজনৈতিক দৃষ্টিভঙ্গি এই দুর্যোগের ক্ষেত্র তৈরি করেছে। অথচ সরকার দুর্যোগ মোকাবিলা কিংবা পরবর্তী পরিস্থিতি সামাল দিতে ব্যর্থ হয়েছে। পাহাড়ধস: কেন, কী করণীয়’ শীর্ষক এক গোলটেবিল আলোচনায় ভূতত্ত্ববিদ, নৃবিজ্ঞানী ও দুর্যোগ ব্যবস্থাপনা বিশেষজ্ঞরা এ অভিমত দেন।
গতকাল রোববার সকালে রাজধানীর কারওয়ান বাজারে প্রথম আলো নিজ কার্যালয়ে এই গোলটেবিল আলোচনার আয়োজন করে। বক্তারা পাহাড়ধসের মতো বিপর্যয়কর দুর্যোগ থেকে রক্ষা পেতে পাহাড়ের প্রাকৃতিক বন সংরক্ষণ এবং ভূতাত্ত্বিক জরিপ ছাড়া পার্বত্য অঞ্চলে কোনো অবকাঠামো তৈরি না করার আহ্বান জানান। প্রথম আলোর সম্পাদক মতিউর রহমান গোলটেবিল বৈঠক সঞ্চালনা করেন।
আলোচনায় অংশ নিয়ে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের ভূতত্ত্ব বিভাগের অধ্যাপক হুমায়ুন আখতার বলেন, পাহাড়ধস একটি প্রাকৃতিক ঘটনা। তার ওপর এ দেশের পাহাড়গুলো পাললিক শিলা দিয়ে গঠিত। তবে মানুষের অপরিণামদর্শী ও অজ্ঞতাপ্রসূত কর্মকাণ্ড এখানে পাহাড়ধস ত্বরান্বিত করেছে। একটি সাধারণ প্রাকৃতিক ঘটনাকে মানবিক বিপর্যয়কর দুর্যোগে পরিণত হওয়ার ক্ষেত্র তৈরি করেছে।
পাহাড়ের কোন স্থানে ধসের আশঙ্কা বেশি এবং কেন বেশি, তার ভূতাত্ত্বিক কারণ ব্যাখ্যা করেন হুমায়ুন আখতার। তিনি বলেন, পার্বত্য অঞ্চলে উন্নয়ন যেমন অব্যাহত রাখতে হবে, তেমনি সেখানে যেকোনো অবকাঠামো তৈরির জন্য ভূতাত্ত্বিক বৈশিষ্ট্যগুলো বিবেচনায় রাখা জরুরি। এটা করা হলে প্রাকৃতিক নিয়মে পাহাড়ধস হলেও তা প্রাণহানি ঘটাবে না, মানবিক বিপর্যয় ডেকে আনবে না।
সাবেক প্রধান বন সংরক্ষক ইউনুস আলী বলেন, ১৯৭৬ সাল থেকে পার্বত্য অঞ্চলের উন্নয়নে যে মডেল অনুসরণ করা হয়েছে, তাতে সেখানকার ভূতাত্ত্বিক ও প্রতিবেশগত (জিওলজিক্যাল অ্যান্ড ইকোলজিক্যাল) বিষয়গুলো উপেক্ষা করা হয়েছে।
ইউনুস আলী বলেন, পাহাড় ও বনের সঙ্গে রাজনৈতিক অর্থনীতি যুক্ত হয়েছে। বাণিজ্য ও দুর্নীতি যুক্ত হয়েছে। সমতল এলাকার সঙ্গে পার্বত্য অঞ্চলের পার্থক্য ভুলে শস্য উৎপাদন বাড়ানোর জন্য প্রথাগত কৃষিব্যবস্থায় পরিবর্তন আনা হয়েছে। এর পাশাপাশি দেশের বিভিন্ন এলাকা থেকে অনেক মানুষকে পার্বত্য অঞ্চলে নিয়ে বসবাসের সুযোগ করে দেওয়া হয়েছে। অথচ তাদের পার্বত্য এলাকায় বসবাস ও জীবনযাপনের অভিজ্ঞতা ছিল না। তারা সমতলের জীবনধারার সঙ্গে সামঞ্জস্যপূর্ণ বসবাসের ব্যবস্থা গড়ে তুলতে চেয়েছে। এর সঙ্গে সঙ্গে সরকারের পক্ষ থেকে শুরু করা হয়েছে অবকাঠামো তৈরির ব্যাপক কার্যক্রম। এসব মিলে পাহাড়ে বিপর্যয়কর দুর্যোগের ক্ষেত্র তৈরি হয়েছে। ফলে যে অবস্থা দাঁড়িয়েছে, তাতে এখন পার্বত্য অঞ্চলের পুরো উন্নয়ন প্রক্রিয়া ঢেলে সাজাতে হবে।
কৃপ্র/এম ইসলাম