কৃষি প্রতিক্ষণ ডেস্কঃ পাবনা ও সিরাজগঞ্জের প্রায় ৩০ হাজার খামারির কাছ থেকে দৈনিক ১ লাখ ৩০ হাজার লিটার দুধ কেনে বাঘাবাড়ী মিল্ক ভিটা। কিন্তু আসন্ন ঈদের ছুটিতে টানা তিনদিন তারা দুধ সংগ্রহ করে না। নিশ্চিত ক্রেতা হারানোর ফলে তিনদিন চরম অনিশ্চয়তার মধ্যে পড়েন খামারিরা। লোকসানে দুধ বিক্রি করতে হয় তাদের। প্রতি বছরই খামারিরা এমন অনিশ্চয়তা ও ক্ষতির মুখে পড়লেও মিল্ক ভিটা কর্তৃপক্ষ দুধ সংরক্ষণে কোনো ব্যবস্থা গ্রহণ করছে না।
১৯৭৫ সালে সিরাজগঞ্জের শাহজাদপুর উপজেলার বাঘাবাড়ীতে প্রতিষ্ঠিত হয় মিল্ক ভিটা। বর্তমানে এর আওতাভুক্ত সিরাজগঞ্জ জেলার শাহজাদপুর, উল্লাপাড়া উপজেলা এবং পাবনা জেলার বেড়া, সাথিয়া, চাটমোহর ভাঙ্গুরাসহ ছয়টি উপজেলায় ৩০ হাজার খামারি ও ৬০০ সমিতি রয়েছে। এসব খামারে রয়েছে প্রায় ৭ লাখ দুধেল গরু। উৎপাদিত দুধ সমবায় ভিত্তিতে মিল্ক ভিটায় সরবরাহ করা হয়। ফলে উৎপাদনের একটা নির্দিষ্ট অংশ বিক্রির নিশ্চয়তা পান খামারিরা।
দেশের দুগ্ধভাণ্ডারখ্যাত সিরাজগঞ্জ ও পাবনার প্রায় ৩০ হাজার খামারে দৈনিক পাঁচ লাখ লিটারের মতো দুধ উৎপাদন হয়। এর মধ্যে মিল্ক ভিটা নেয় ১ লাখ ৩০ হাজার, বাকিটা বিভিন্ন শ্রেণীর ক্রেতার কাছে বিক্রি করা হয়। তবে আগে মিল্ক ভিটায় শুধু ঈদের দিন দুধ সংগ্রহ বন্ধ থাকলেও পাঁচ বছর ধরে ঈদের আগের দিন থেকে ঈদের পরের দিন পর্যন্ত টানা তিনদিন সংগ্রহ বন্ধ রাখছে কর্তৃপক্ষ। ফলে প্রতি বছরই তিনদিনে অতিরিক্ত প্রায় চার লাখ লিটার দুধ নিয়ে বিপাকে পড়ছেন খামারিরা।
খামার মালিক রফিকুল ইসলাম জানান, তার খামারে প্রতিদিন প্রায় ১০ হাজার লিটার দুধ উৎপাদন হয়। কিন্তু ঈদে মিল্ক ভিটা তিনদিন বন্ধ থাকায় কয়েক বছর ধরে তাকে সমস্যায় পড়তে হচ্ছে। অতিরিক্ত দুধ বিক্রি করতে সমস্যায় পড়তে হয়। ক্রেতা পাওয়া মুশকিল হয়ে যায়, পাওয়া গেলেও কম দামে বিক্রি করতে হয়। ফলে উৎপাদন খরচ তোলাই কঠিন হয়ে যায়। খামারিরা বলছেন, মিল্ক ভিটা তাদের কাছ থেকে কোটার ভিত্তিতে মানভেদে ৩৭ থেকে ৪০ টাকা দরে দুধ কিনে। আর তারা বাজারে বিক্রি করেন ৪০ থেকে ৪৫ টাকা। কিন্তু ঈদের সময় মিল্ক ভিটা দুধ নেয়া বন্ধ করার ফলে বাজারে দুধের অতিরিক্ত সরবরাহ থাকে। তখন দুধের দাম ৩০ টাকা লিটারে নেমে আসে। এতে তাদের অনেক লোকসান হয়।
এভাবে মিল বন্ধ না রেখে দুধ কিনে সংরক্ষণের ব্যবস্থা করার দাবি জানিয়েছেন খামারিরা। শাহজাদপুরের রেশমবাড়ীর বাদশা বলেন, কারখানা বন্ধ থাকলেও আমাদের উৎপাদন তো বন্ধ থাকে না। ফলে আমাদের বিপাকে পড়তে হয়। কম দামে দুধ বিক্রি করতে বাধ্য হই। তিনি বলেন, ঈদের সময় মিল যদি বন্ধ রাখতেই হয়, তবে বিশেষ ব্যবস্থায় দুধ সংরক্ষণের ব্যবস্থা করতে হবে। পাশাপাশি সারা বছরের জন্য স্থানীয়, জাতীয় ও আন্তর্জাতিক বাজারে দুধ সরবরাহের ব্যবস্থা করলে এ অঞ্চলের প্রায় ৩০ হাজার খামারি দুধ বিক্রির নিশ্চয়তা পাবেন বলে মত দেন তিনি।
তবে মিল্ক ভিটা কর্তৃপক্ষের দাবি, তিনদিন বন্ধ থাকলেও খামারিদের দুধ অবিক্রীত থাকবে না। কারণ ঈদ উপলক্ষে বিভিন্ন শহর থেকে লোকজন গ্রামে আসে। খামারিরা তাদের কাছে নির্ধারিত মূল্যের চেয়েও বেশি দরে দুধ বিক্রি করে লাভবান হন। বাঘাবাড়ী মিল্ক ভিটার পরিচালনা পর্ষদের সহসভাপতি অ্যাডভোকেট আব্দুল হামিদ লাভলু বলেন, বার্ষিক ছুটি ভোগ ও কারখানার যন্ত্রপাতি পরিষ্কার-পরিছন্নতার জন্য এ সময় মিল বন্ধ রাখা হয়। তবে দুধ অবিক্রীত থাকে না। মিল্ক ভিটায় নতুন একটি প্লান্টের অনুমোদন হওয়ায় এটির বাস্তবায়ন হলে আগামীতে আর এ সমস্যা থাকবে না বলেও জানান তিনি।
ঈদের সময় অন্যান্য প্রতিষ্ঠানের মতো মিল্ক ভিটাও কর্মকর্তা-কর্মচারীদের ছুটি দিতে বাধ্য হয়। তাছাড়া এ সময় দুধের চাহিদাও কম থাকে উল্লেখ করে মিল্ক ভিটার পরিচালনা পর্ষদের পরিচালক নবীদুল ইসলাম বলেন, প্রতিদিন গড়ে ১ লাখ ৩০ হাজার লিটার দুধ সংগ্রহ করা হয়ে থাকে। তিনদিনের সংগৃহীত দুধ সংরক্ষণের কোনো ব্যবস্থা আপাতত নেই, যার কারণে ছুটির সময়ে দুধ সংগ্রহ না করার সিদ্ধান্ত নেয়া হয়।
সুত্র, বনিক বার্তা / কৃপ্র/এম ইসলাম