কৃষি প্রতিক্ষণ ডেস্ক।।
কৃষকের বন্ধু হিসেবে পরিচিত অনেক প্রজাতির ব্যাঙ অচিরেই বিলুপ্ত হওয়ার আশংকা করা হচ্ছে। ২৮ এপ্রিল ছিল বিশ্ব ব্যাঙ দিবস। এ উপলক্ষে শনিবার ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রাণিবিদ্যা বিভাগ ও বাংলাদেশ প্রাণিবিজ্ঞান সমিতির যৌথ উদ্বোগে শোভা যাত্রা, ও প্রাণিবিদ্যা বিভাগ মিলনায়তনে আলোচনা সভা হয়েছে। প্রফেসর ড. গুলশান আরা লতিফার সভাপতিত্বে অনুষ্ঠানে স্বাগত বক্তব্য রাখেন বাংলাদেশ প্রাণিবিজ্ঞান সমিতির সাধারণ সম্পাদক ড. তপন কুমার দে। মূল প্রবন্ধ উপস্থাপন করেন ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় প্রাণিবিদ্যা বিভাগের প্রফেসর ড. মোহাম্মাদ ফিরোজ জামান এবং প্রভাষক মোঃ মোকলেসুর রহমান।
বক্তারা বলেন, পৃথিবীর একতৃতীয়াংশ ব্যাঙ মারা যাচ্ছে। কৃষিকাজে কীটনাশক এবং রাসায়নিক সার ব্যবহারের ফলে জলজ পরিবেশ দূষিত হয়ে। কৃষকের বন্ধু হিসেবে পরিচিত অনেক প্রজাতির ব্যাঙ অচিরেই বিলুপ্ত হওয়ার আশংকা করা হচ্ছে। ইতোমধ্যে সরকার বন্যপ্রাণি আইন ২০১২ প্রণয়ন করেছে। এর মধ্যে উভচর তথা ব্যাঙও অন্তর্ভূক্ত রয়েছে।
ব্যাঙ সংরক্ষনে এ আইনের বাস্তব প্রয়োগ এবং সাধারণ জনগণের মধ্যে সচেতনতা বৃদ্ধি করা জরুরি হয়ে পরেছে। বক্তারা বলেন, ব্যাঙ বিভিন্নভাবে প্রকৃতি তথা মানুষের উপকার করে। জলায় এবং ডাঙায় উভয়ক্ষেত্রেই ব্যাঙের অবাধ বিচরণের কারণে প্রাকৃতিক ভারসাম্য রক্ষায় এদের ভূমিকা অনেক গুরুত্বপূর্ণ।
পরিবেশ দূষণ ও কৃষি জমিতে অতিরিক্ত কীটনাশক ব্যবহার এবং মানুষ নিজেদের খাওয়ার জন্য ব্যাঙ সংগ্রহ করার কারণে পৃথিবীর এক-তৃতীয়াংশ ব্যাঙ সংকটাপূর্ণ অবস্থায়। বক্তারা ব্যাঙ সংরক্ষণে উদ্যোগী হয়ে পরিবেশের ভারসাম্য রক্ষার আহ্বান জানান। ব্যাঙ প্রচুর পোকা খায়, প্রকৃতি থেকে এরকম ব্যাপকহারে ব্যাঙ সংগ্রহের ফলে ধান ক্ষেতসহ অন্যান্য ফসলি ক্ষেতে পোকার সংক্রমণ বেড়ে যায়।
গবেষণায় দেখা গেছে, আমাদের দেশে ফসলি জমি এবং ধানক্ষেতে প্রায় ১০ প্রজাতির ব্যাঙ পাওয়া যায়। এসব ব্যাঙের মধ্যে রয়েছে কোলা ব্যাঙ, কুনোব্যাঙ, ঝি ঝি ব্যাঙ , কটকটি ব্যাঙ। ব্যাঙ সাধারণত ফসলি জমির পোকামাকড় খেয়ে বেঁচে থাকে। ফলে ধানক্ষেতে ব্যাঙ থাকলে বাড়তি করে কীটনাশক ব্যবহারের প্রয়োজন পড়ে না। এছাড়াও ব্যাঙের মলমূত্রে বেশির ভাগই ইউরিয়া জাতীয় পদার্থ যা জমির উর্বরতা বৃদ্ধিতে সহায়তা করে। ব্যাঙের ত্বকের নিঃসরিত মিউকাস থেকে বিভিন্ন ওষুধ তৈরী হয়ে থাকে।
মৎস্য বিভাগের তথ্য মতে ১৯৯১-৯২ সালে বাংলাদেশ ৭৭১ টন ব্যাঙের পা রপ্তানি করে ১১.০৯ কোটি টাকার বৈদেশিক মুদ্রা অর্জন করেছিল। শুধু মাত্র প্রাকৃতিক ভারসাম্য নষ্ট হচ্ছে বিধায় বাংলাদেশ সরকার ১৯৯২ সাল থেকে প্রকৃতির যত্রতত্র থেকে ব্যাঙ ধরা এবং বাজারজাতকরণ নিষিদ্ধ করেছে।
সুত্র, কৃপ্র/এম ইসলাম