‘জিংক ঘাটতির কারণে ৫০ ভাগ শিশুর শারীরিক বৃদ্ধি কম হচ্ছে’
কৃষি প্রতিক্ষণ ডেস্ক।।
মাটিতে জিংক ঘাটতির দেশগুলোর মধ্যে বাংলাদেশ শীর্ষে। বাংলাদেশের প্রায় ৯৩ ভাগ মাটিতে জিংক ঘাটতি আছে। গতকাল রোববার বাংলাদেশ কৃষি গবেষণা ইনস্টিটিউট (বিএআরআই) এর মৃত্তিকা বিজ্ঞান বিভাগের ব্যবস্থাপনায় এবং ইন্টারন্যাশনাল জিংক এসোসিয়েশনের ‘প্রমোশন অব জিংক ফার্টিলাইজার ইউজ ইন বাংলাদেশ ফর ফুড এন্ড নিউট্রিশন সিকিউরিটি’ শীর্ষক কর্মশালায় এ তথ্য জানানো হয়।
বাংলাদেশে উৎপাদিত খাদ্যে এবং পশুর খাদ্যে যে পরিমাণ জিংক থাকার কথা তার চেয়ে কম বিদ্যমান। ফলে এদেশের ৫৫ ভাগ মানুষ জিংক ঘাটতিতে রয়েছে। জিংক ঘাটতির কারণে ৫০ ভাগ (৫ বছরের নিচে) শিশুর শারীরিক বৃদ্ধি কম হচ্ছে। এই ভাবে, জিংকের অভাব বাংলাদেশসহ বিশ্বব্যাপী জনস্বাস্থ্যকে প্রভাবিত করছে। প্রাণী দেহে এই অভাবের তীব্রতার জন্য মৃত্তিকায় এর অভাবই দায়ী। কারণ, জিংক প্রতিদিনের খাদ্যের সাথে প্রয়োজনীয় পরিমাণে গ্রহণ করতে হয়।
কর্মশালার কারিগরি অধিবেশনে সভাপতি হিসেবে উপস্থিত ছিলেন বিএআরআই এর মহাপরিচালক ড. আবুল কালাম আযাদ এবং উদ্বোধনী অনুষ্ঠানে সভাপতি হিসেবে উপস্থিত ছিলেন বিএআরআই এর পরিচালক (গবেষণা) ড. মো লুৎফর রহমান। বিশেষ অতিথি হিসেবে উপস্থিত ছিলেন বিএআরআই এর পরিচালক (পরিকল্পনা ও মূল্যায়ন) মো শোয়েব হাসান, জিংক নিউট্রিন্ট ইনিসিয়েটিভ (জেডএনআই)-এর দক্ষিণ এশিয়ার পরিচালক ড. সৌমিত্র দাস ও আইজেডএ এর পরিচালক ড. এড্রু এস গ্রিন।
অনুষ্ঠানে স্বাগত বক্তব্য রাখেন প্রকল্পের কো-অর্ডিনেটর এবং মৃত্তিকা বিজ্ঞান বিভাগের মুখ্য বৈজ্ঞানিক কর্মকতা ড. মো আশরাফ হোসেন। অনুষ্ঠানে মূল প্রবন্ধ উপস্থাপন করেন মৃত্তিকা বিজ্ঞান বিভাগের প্রধান গবেষক ও প্রধান বৈজ্ঞানিক কর্মকতা ড. সোহেলা আক্তার। এছাড়াও মৃত্তিকা বিজ্ঞান বিভাগের প্রধান বৈজ্ঞানিক কর্মকর্তা ড. নির্মল চন্দ্র শীল বক্তব্য রাখেন।
সম্বেলনে বক্তারা জানান, বিএআরআই-আইজেডএ বাংলাদেশের ১১টি গুরুত্বপূর্ণ স্থানে বিভিন্ন ধান ভিত্তিক ফসল পর্যায়ে জিংক সমৃদ্ধকরণের লক্ষ্যে কাজ করছে। গবেষণা প্রতিপাদ্যে (হাইপোথিসিস) হচ্ছে- জিংক সার (যেমন: জিংক সালফেট মনোহাইড্রেড, জিংক সালফেট হেপ্টাহাইড্রেড, জিংক-কোর ইউরিয়া এবং জিংক-ইউরিয়া ব্রিক্রেট) ব্যবহার করে ফসলের ফলন বৃদ্ধি পায় এবং খাদ্যশস্য জিংক সমৃদ্ধ হয়।
১১টি পরীক্ষণের মাধ্যমে ১৮টি ফসলের ওপর জিংক সার ব্যবহারের প্রভাব এ গবেষণায় দেখা হচ্ছে। জিংক সার প্রয়োগে ফসলের ফলন ও জিংক ঘনত্ব বৃদ্ধি গবেষণার পাশাপাশি, মৃত্তিকা বিজ্ঞান বিভাগ, বিএআরআই অত্র ইনস্টিটিউটের উদ্ভাবিত বিভিন্ন ফসল এবং এদেশের নিজস্ব ও প্রচলিত বিভিন্ন ফল-মূল, শাক-সবজিতে জিংক ঘনত্বের অবস্থা গবেষণাগারে নির্ণয় করছে। এতে করে প্রাকৃতিকভাবে জিংক সমৃদ্ধ খাদ্যের সুপারিশ পাওয়া যাবে।
এছাড়াও বিএআরআই এর মৃত্তিকা বিজ্ঞান বিভাগ জিংক সার ব্যবহার সচেতনতা বৃদ্ধির লক্ষ্যে কাজ করে যাতে ফসলের ফলন বৃদ্ধির পাশাপাশি ফসল জিংক সমৃদ্ধ হয় এবং সকল মানুষ পর্যাপ্ত জিংক খাবারের মাধ্যমে পায়। কারণ জিংক এমন একটি খাদ্য উপাদান যাহা মানবদেহে সংরক্ষণ করে রাখা যায়না, প্রতিদিনের খাবারে সরবরাহ থাকতে হয়। তা নাহলে এর অভাবে শিশু, প্রাপ্তবয়স্ক বৃদ্ধ, নারী, পুরুষ, সন্তানসম্ভাবনা নারী সবাইকে কম বেশি ক্ষতিগ্রস্ত করতে পারে। কর্মশালার ২টি অধিবেশনে বাংলাদেশের গবেষণা প্রতিষ্ঠান, বিশ্ববিদ্যালয়, সরকারি ও বেসরকারি প্রতিষ্ঠান ও এনজিও প্রতিনিধিসহ মোট ২৩টি প্রতিষ্ঠানের প্রায় ১০০ জন বিশেষজ্ঞ বিজ্ঞানী অংশগ্রহণ করেন।
কৃপ্র/এম ইসলাম