কৃষি প্রতিক্ষণ ডেস্ক।।
ওল কচু চাষের জন্য পানি দাঁড়ায় না এমন উঁচু জমি নির্বাচন করতে হবে। ওলের জমি অবশ্যই সুনিষ্কাশিত হতে হবে। ছায়া থাকলে ভালো হয় না। সুনিষ্কাশিত এঁটেল দোআঁশ, দোআঁশ ও বেলে দোআঁশ মাটি ওল চাষে উপযোগী। আমাদের দেশে বিভিন্ন জাতের ওলের চাষ করা হয়। এর মধ্যে ‘মাদ্রাজি´ জাত সর্বোৎকৃষ্ট। তবে আমাদের দেশে এখনও ওলকচুর তেমন কোন নির্দিষ্ট জাত আবিষ্কার হয়নি।
চাষের উপযুক্ত জমি তৈরি ও চারা রোপন
মাটির জো থাকা অবস্থায় মাটির প্রকারভেদে ৩-৪টি আড়াআড়ি চাষ ও মই দিয়ে মটি ঝুরঝুরে করে নিয়ে ভালো করে মই দিয়ে মাটি চেপে দিতে হবে। মধ্য-মাঘ থেকে মধ্য-ফাল্গুন মাস বীজ বপনের উপযুক্ত সময়। প্রয়োজনে মধ্য-চৈত্র থেকে মধ্য-বৈশাখ মাসেও লাগানো যায়। তবে এর পরে রোপণ করলে ফলন কমে যায়। মাটি থেকে কন্দ না তুলে রেখে দিলে কয়েক বছরে অনেক বড় ওল পাওয়া যায়। লাভজনকভাবে ওল উৎপাদন করতে হলে বিশ্বস্ত জায়গা বা ব্যক্তির কাছ থেকে ভালো জাতের বিচন ‘চাকি´ সংগ্রহ করতে হবে। ওলের বীজ হিসেবে রোপণ দ্রব্যকে ‘চাকি´ বলে। জমি থেকে সাধারণত কার্তিক-অগ্রহায়ণ মাসে ওল তোলা শুরু হয়। তখন ওলের চারপাশে যে মুখি জন্মে সেগুলো সংগ্রহ করতে হবে। এসব মুখি থেকেই চাকি তৈরি হয়। চাকির আকার যত বড় হবে ওল তত বড় হবে। সাধারণত ওলের জন্য সারি থেকে সারির দূরত্ব এক মিটার দেয়া হয়। তবে চাকির আকার বা ওজন অনুযায়ী চাকি থেকে চাকির দূরত্ব প্রতি সারিতে ভিন্ন হয়।
সার প্রয়োগ ও ব্যবস্থাপনা
চার গজানোর ২০ থেকে ২৫ দিন পর প্রতি শতক জমির জন্য ০.৩ কেজি ইউরিয়া, ০.৫ কেজি গোবর ও ১.২ কেজি টিএসপি সার ভালো করে মাটির সাথে মিশিয়ে ভেলি তৈরি করতে হবে। প্রতি গর্তের মাটিতে কী পরিমাণ সার মেশাতে হবে তা নির্ভর করে একরপ্রতি গর্তের সংখ্যার ওপর। সারের মাত্রা একর প্রতি ৩০ কেজি ইউরিয়া, ১২০ কেজি টিএসপি, ৫০ কেজি এমওপি। সার মেশানো মাটি দিয়ে গর্ত ভরাট করে দিতে হবে। গর্তের মুখ চাপা দিয়ে ঢিবির মত করে দিতে হবে। এর ফলে বৃষ্টির পানি ভিতরে ঢুকে চাকি নষ্ট করতে পারবে না। চারা গজানোর একমাস পর গোড়ার মাটি হালকা করে কুপিয়ে দেয়া যেতে পারে। তবে লক্ষ রাখতে হবে এতে শিকড় যেন ক্ষতিগ্রস্থ না হয়।
সেচ ও পানি নিষ্কাশন
প্রয়োজনীয় সেচের ব্যবস্থাও করতে হবে। বীজ লাগানোর পরে যদি মাটির জো না থাকে এবং বৃষ্টিপাত না হয় তবে সেচ দিতে হবে। দুই সারি বা প্রতি সারির পাশ দিয়ে হালকা নালা তৈরি করে দিতে হবে যাতে সহজেই বৃষ্টির পানি যেতে পারে। ওলের জমিতে পানি জমতে দেয়া যাবে না। এতে ওল পচে যাবে।
আগাছা ও নিড়ানি
ধান, গমের খড় বা কচুরিপানা দ্বারা আচ্ছাদন দিয়ে ফলন অনেক গুণ বৃদ্ধি করা যায় এবং সহজেই আগাছা দমন করা যায়। চারা গজানোর পর আগাছা পরিষ্কার করে দিতে হবে।
পোকামাকড় ও রোগদমন
ওলকচুর ক্ষেত্রে কীটপতঙ্গ ও রোগবালাইয়ের তেমন কোনো সমস্যা নেই। তবে মাঝে মাঝে লিম্ফ ব্লাইট কলার রট ও মোজাইক রোগ দেখা দেয়। এছাড়াও গোঁড়া পচা রোগ ওলের প্রধান ক্ষতিকর রোগ। চাকি লাগানোর আগে ছত্রাকনাশক ব্যাভিস্টিন (Bavistin) দিয়ে তা শোধন করে নিলে এ রোগ কম হয়।
মুখি কার্তিক মাস থেকে অগ্রহায়ণ মাসের দিকে পরিপক্ব হয় চাকিতে পরিণত হয়। লাগানোর পর ওল তুলতে প্রায় ৭ থেকে ১২ মাস লাগে। আগে তুললে ওলের আঁকার ছোট ও ফলন কম হয়। না তুলে একই ক্ষেতে ওল চার বছর পর্যন্ত রেখে দেয়া যায়।
কৃপ্র/এম ইসলাম