কৃষি প্রতিক্ষণ ডেস্ক।।
পানের বরজ, পার্টিকেল বোর্ড ও চারকোল কারখানাগুলো বেশ ভালো দামে পাটকাঠি কিনছে। সোনালি আঁশের হারিয়ে যাওয়া গৌরব পুনরুদ্ধারে নানা উদ্যোগ কৃষকদের মধ্যে সারা ফেলেছে। অর্থকরী পণ্য হয়ে উঠেছে হেলাফেলার পাটকাঠি। মূলত এক দশক ধরেই এই জ্বালানি বস্তুটির বাজার বাড়ছে। কৃষকরা বলছেন, বাজারে পাট বিক্রি করে কোনো রকম উৎপাদন খরচ ওঠে। কিন্তু পাটকাঠি বিক্রির পুরো টাকাটাই লাভজনক হয়ে উঠেছে।
ফরিদপুর জেলা কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তর সূত্রে জানা যায়, চলতি মৌসুমে জেলায় ৮২ হাজার ৭১০ হেক্টর জমিতে পাটের আবাদ হয়েছে। যা গত বছরের চেয়ে বেশি। এ থেকে বিপুল পরিমাণ পাটকাঠি পাওয়া যাবে। একসময় রান্নার জ্বালানি, বেড়া দেয়াসহ কম গুরুত্বপূর্ণ কাজে পাটকাঠির ব্যবহার ছিল। আর এখন এই পণ্যের বেশ বড় বাজার তৈরি হয়েছে। অনেকে পাটকাঠি কেনাবেচাকে ব্যবসা হিসেবে নিয়েছেন, সৃষ্টি হয়েছে নতুন কর্মসংস্থান।
পাটচাষীরা জানান, এ বছর জেলার পাটের দাম ভালো থাকলেও মৌসুমের শুরুতে অতিবৃষ্টির কারণে উৎপাদন আশানুরূপ হয়নি। তাছাড়া জলাশয়ের অভাবে পাট পচাতেও বেশ বেগ পেতে হয়েছে তাদের। ফলে অনেকের পাটেই ভালো রঙ আসেনি। তাই লাভের অংক হিসাব করতে গিয়ে পাটকাঠিতেই ভরসা করছেন তারা।
ফরিদপুর জেলায় সর্বত্র চলছে পাট পচানো, আঁশ ছাড়ানো ও শুকানোর কাজ। কৃষকরা এখন পাটকাঠিও বেশ যত্নের সঙ্গে শুকাচ্ছেন। জেলার সদর, বোয়ালমারী, মধুখালী, সালথা, নগরকান্দাসহ বিভিন্ন উপজেলার কৃষক পরিবারগুলো পাট ও পাটকাঠি শুকিয়ে ঘরে তোলার কাজে ব্যস্ত।
একসময় রান্নার জ্বালানি, ঘরের বেড়া, পানের বরজের ছাউনি ছাড়া আর অন্য কোনো কাজে লাগত না পাটকাঠি। কিন্তু এখন পাটকাঠির ছাই (চারকোল) বিদেশে রফতানি হচ্ছে। সদর উপজেলার আলিয়াবাদ এলাকার পাটচাষীরা জানান, দূর-দূরান্ত থেকে ব্যবসায়ীরা এসে পাটকাঠি কিনে নিয়ে যাচ্ছেন, দামও দিচ্ছেন ভালো। একশ মোটা পাটকাঠি বিক্রি হচ্ছে ৪০০ থেকে ৫০০ টাকায়, যা এক সময় ১০০ থেকে ১২০ টাকায় বিক্রি হতো। তারা জানান, পাট আবাদের খরচ পাট বিক্রি করে উঠে আসে। আর পাটকাঠি তাদের লাভের মুখ দেখিয়েছে।
এ বিষয়ে একমত পোষণ করেন ফরিদপুর কৃষি সম্পসারণ অধিদপ্তরের উপপরিচালক কার্তিক চন্দ্র চক্রবর্তী। তিনি বলেন, এখন ফরিদপুর থেকে বরিশাল, দাউদকান্দি, ভোলাসহ বিভিন্ন পারটেক্স বোর্ড কারখানা ও আকিজ গ্রুপের মতো বড় বড় কোম্পানিতে এ পাটকাঠি ব্যবহূত হচ্ছে।
সোনালি আঁশ ও পাটকাঠিতে নতুন সম্ভাবনা দেখা দিয়েছে উল্লেখ করে ফরিদপুরের জেলা প্রশাসক উম্মে সালমা তানজিয়া বলেন, পাটের রুপালি কাঠি এখন কৃষককে আশার আলো দেখাচ্ছে। পাটকাঠির ব্যবসায় অনেকের কর্মসংস্থানের সুযোগ সৃষ্টি হচ্ছে বলেও উল্লেখ করেন তিনি।
পাটকাঠির বাণিজ্যের প্রসার সম্পর্কে ফরিদপুরের চেম্বার অব কমার্সের সিনিয়র সহসভাপতি মো. সিদ্দিকুর রহমান বলেন, পাট ও পাটকাঠিকে কেন্দ্র করে দেশের বিভিন্ন অঞ্চলে বেশকিছু শিল্প-কারখানা গড়ে উঠেছে। চীনসহ বিভিন্ন দেশে পাটকাঠির ছাই কার্বন পেপার, ফটোকপিয়ারের কালি, আতশবাজি ও ফেসওয়াশের উপকরণ, ব্যাটারি, প্রসাধনী, এয়ারকুলার, পানির ফিল্টারে ব্যবহূত সক্রিয় কার্বন, বিষ ধ্বংসকারী ওষুধ, দাঁত পরিষ্কারক ও সার উৎপাদনের কাঁচামাল হিসেবে ব্যবহূত হচ্ছে। ফলে পাটকাঠির চাহিদা দিন দিন বাড়ছে।
কৃপ্র/এম ইসলাম