কৃষি প্রতিক্ষণ ডেস্ক।।
সিরাজগঞ্জ জেলায় গত কয়েক মাসের ব্যবধানের লেয়ার মুরগির একদিন বয়সী বাচ্চা, প্রক্রিয়াজাত খাবার (ফিড) ও ওষুধপত্রের দাম অস্বাভাবিক বেড়েছে। কিন্তু সে তুলনায় বাড়েনি ডিম ও মুরগির দাম। ফলে লোকসান এড়াতে সংকুচিত হয়ে আসছে সিরাজগঞ্জের বড় খামারগুলো। অনেক খামার এরই মধ্যে বন্ধ হয়ে গেছে। সম্ভাবনাময় একটি শিল্প অচিরেই ধ্বংস হয়ে যাওয়ার আশঙ্কা করছেন সংশ্লিষ্টরা। তথ্যসুত্র- দৈনিক বনিক বার্তা।
সিরাজগঞ্জের অন্যতম বৃহৎ পোল্ট্রি খামার সদর উপজেলার ‘প্রত্যাশা খামার’। খামারের স্বত্বাধিকারী নরেশ চন্দ্র ভৌমিক বলেন, বাচ্চা, খাবার এবং ওষুধের দামের কোনো ঠিক নেই। ডিম ও মুরগি লোকসানে বিক্রি করতে হচ্ছে। গত ১০ বছরে প্রায় ২৫ লাখ টাকা লোকসান দিয়েছেন তিনি। এভাবে চলতে থাকলে আগামী দুবছরের মধ্যে ব্যবসা বন্ধ করে দেবেন বলে জানান।
ক্ষুদ্র ও মাঝারি খামারিরাও বাজারের সঙ্গে কুলিয়ে উঠতে পারছেন না। কামারখন্দ উপজেলার নান্দিনামধু গ্রামের খামারি এনামুল হক রিপন বলেন, ২০০০ সালে চার হাজার লেয়ার মুরগি নিয়ে খামার শুরু করেছিলেন। ২০০৬ সালে বার্ড ফ্লুতে প্রায় ২০ লাখ টাকার ক্ষতি হয়। নতুন করে আবার শুরু করেন। এখন দুই হাজার মুরগি রয়েছে। দুমাস আগেও প্রায় সাড়ে ৫ টাকা উৎপাদন খরচের ডিম বেচতে হচ্ছে সাড়ে ৪ টাকায়।
রোজায় চাহিদা কম থাকায় দৈনিক প্রায় ৮ হাজার টাকা লোকসান হয়েছে। এখন ডিমের দাম একটু বেশি হওয়ায় কিছুটা পুষিয়ে যাচ্ছে। তবে কোনোভাবে পুষিয়ে উঠতে না পেরে গত বছর ১ হাজার ২০০ মুরগিসহ খামার বন্ধ করে দিয়েছেন একই গ্রামের আব্দুর রশিদ। এতে প্রায় ৬ লাখ টাকা লোকসান হয়েছে বলে জানান। দুবছর আগে সোনালি মুরগির খামার বন্ধ করে দিয়ে আবার বেকার হয়ে গেছেন উপজেলার জারিলা গ্রামের রাজু আহম্মেদ। এ উপজেলায় গত পাঁচ বছরে প্রায় অর্ধশত খামার বন্ধ হয়ে গেছে বলে জানান খামারিরা।
বাচ্চা, ডিম ও ওষুধের অস্থির বাজারের তথ্য দিতে গিয়ে নরেশ চন্দ্র ভৌমিক জানান, মাত্র দুই মাসের মধ্যে সব ধরনের পোলট্রি ফিডে বস্তাপ্রতি ১৫০ থেকে ২০০ টাকা বেড়েছে। ছয় বছরে দাম হয়েছে দ্বিগুণ। এছাড়া এক বোতল জীবাণুনাশক ছিল ৩ হাজার ২০০ টাকা, সেটি এখন কিনতে হচ্ছে ৪ হাজার টাকায়। সবচেয়ে বেশি বেড়েছে লেয়ার মুরগির বাচ্চার দাম। ছয় বছর আগে একদিন বয়সী বাচ্চার দাম ছিল ৩০ থেকে ৩৫ টাকা। হঠাৎ করে দাম বেড়ে হয়েছে ১৩০ থেকে ১৪০ টাকা।
সিরাজগঞ্জ পোল্ট্রি ইন্ডাস্ট্রিজ মালিক অ্যাসোসিয়েশনের সভাপতি এসএ ফরিদ বলেন, এ শিল্পের বাজার নিয়ন্ত্রণে নেই। খামারিদের উৎপাদিত ডিম ও মুরগির বিপণন কেন্দ্র না থাকায় বাজার নিয়ন্ত্রণ করা যাচ্ছে না। ভারতীয় মুরগি ও ডিম প্রবেশ বন্ধ এবং বাচ্চা ও খাদ্যের দাম কমানোর পাশাপাশি সরকারের নজরদারি বাড়ানো ছাড়া এ শিল্পকে বাঁচানো যাবে না বলে মত দেন তিনি।
সিরাজগঞ্জ প্রাণিসম্পদ বিভাগ ও পোল্ট্রি মালিক সমিতি সূত্রে জানা যায়, জেলায় আশির দশকের শুরুতে পোলট্রি শিল্পের বিকাশ ঘটতে শুরু করে। শিক্ষিত কর্মহীনরা স্বল্প পুঁজি নিয়ে এ ব্যবসায় নামে। গড়ে ওঠে প্রায় আট হাজার খামার। কিন্তু ২০০৭ সালের বন্যা ও ২০১২ সালে বার্ড ফ্লু সংক্রমণ, দফায় দফায় বন্যা এবং ন্যায্য দাম না পাওয়ায় বন্ধ হতে শুরু করেছে খামার। গত ১০ বছরে প্রায় অর্ধেক খামার বন্ধ হয়ে গেছে। বর্তমানে জেলায় ১ হাজার ৭০টি লেয়ার, ২ হাজার ৪৪৯টি ব্রয়লার ও ১ হাজার ২১০টি হাঁসের খামার রয়েছে।
জেলা প্রাণিসম্পদ কর্মকর্তা ডা. মো. আখতারুজ্জামান ভূঁইয়া বলেন, একসময় প্রচুর খামার গড়ে উঠে। কিন্তু নানা সমস্যায় এখন কমে গেছে। এ থেকে উত্তরণে উৎপাদন এবং বিপণনের নেটওয়ার্ক স্থাপন প্রয়োজন বলে মনে করেন তিনি। এছাড়া ক্ষতিগ্রস্ত খামারিদের পুনর্বাসন প্রকল্প চালু করার কথাও ভাবা হচ্ছে বলেও জানান।
কৃপ্র/এম ইসলাম