কৃষি প্রতিক্ষণ ডেস্ক।।
ভেষজ গুণ থাকায় এদেশীয় চিকিৎসায় বাসকের ব্যবহার হয়ে আসছে বহুকাল ধরে। বিশেষ করে আয়ুর্বেদিক চিকিৎসা পদ্ধতিতে বাসকের নানাবিধ ব্যবহার প্রচলিত। সাতক্ষীরা সদর উপজেলার ফিংড়ি গ্রামে প্রাকৃতিকভাবেই প্রচুর বাসক জন্মায়। তবে এর ঔষধি গুণ সম্পর্কে গ্রামের মানুষের তেমন কোনো ধারণা ছিল না, তারা মনে করতেন আগাছা। বর্তমানে এ ধারণা পাল্টেছে। উল্টো এ বাসক পাতা বিক্রি করেই সচ্ছলতার মুখ দেখেছেন এ গ্রামের দেড়শ থেকে দুইশ নারী। তথ্য সুত্র দৈনিক বনিক বার্তা।
সরেজমিন দেখা যায়, ফিংড়ি গ্রামে এখন বাসকগাছের ছড়াছড়ি। রাস্তার পাশে কিংবা বাড়ির সীমানা সবখানেই এ গাছ। এ সময় কথা হয় ফিংড়ি ইউপি চেয়ারম্যান মো. সামছুর রহমানের সঙ্গে। তিনি জানান, তিন বছর ধরে এ গ্রামে স্কয়ারসহ বিভিন্ন ওষুধ কোম্পানির লোক আসছে। তারা স্থানীয় নারীদের বাসক পাতা সংগ্রহে উদ্বুদ্ধ করছে। এসব কোম্পানিই তাদের কাছ থেকে সংগৃহীত পাতা কিনে নিয়ে যায়। প্রতি মণ কাঁচা পাতা ২০০ টাকা ও শুকনো পাতা ১ হাজার ৪০০ টাকায় বিক্রি হচ্ছে।
কথা হলে জোহরা খাতুন নামের এক গৃহবধূ জানান, প্রাকৃতিকভাবে জন্মানো বাসক পাতা সংগ্রহ করে তা স্কয়ার ফার্মাসিউটিক্যালসে বিক্রি করেন। পুরো ফিংড়ি ইউনিয়নে প্রচুর পরিমাণে বাসকগাছ জন্মায়। আগে স্থানীয়রা আগাছা মনে করে এ গাছ নষ্ট করে ফেলত। তবে এখন তাদের ধারণা পাল্টেছে। বহু নারী এখন বাসক পাতা সংগ্রহ করে সচ্ছল ও স্বনির্ভর হয়েছেন। পাতা বিক্রি করে অনেকেই প্রতি মাসে ৭ থেকে ৮ হাজার টাকা পর্যন্ত উপার্জন করছেন।
আনোয়ারা বেগম, রেবেকা সুলতানা, নাসিমা খাতুন, নাজমা বেগম, আমিনা খাতুন, সাবিনা খাতুন, বীনা দাস, অপর্ণা দাস, রোহেলা খাতুনসহ এ গ্রামের আরো বেশ কয়েকজন নারী জানান, সাংসারিক কাজের ফাঁকেই তারা বাসক পাতা সংগ্রহ করেন। বছরে চার-পাঁচ মাস এ পাতা সংগ্রহ করা যায়।
স্কয়ার ফার্মাসিউটিক্যালস লিমিটেডের প্রতিনিধি মো. আনোয়ারুল ইসলাম জানান, তারা মূলত শুকনো বাসক পাতা কিনে নিয়ে পরিশোধন করে কাশির সিরাপ তৈরি করেন। দিন দিন এ পাতার চাহিদা বাড়ছে। সাতক্ষীরার বিভিন্ন গ্রামে এরই মধ্যে বাসকের অর্থকরী বিষয়টি বেশ সাড়া ফেলেছে। রাস্তা ও বাড়ির চারপাশে অনেকেই বাসকগাছ লাগাচ্ছেন। বাসক পাতা বিক্রি করে এখানকার অনেক দরিদ্র নারীর আর্থিক সচ্ছলতা এসেছে।
সাতক্ষীরা সরকারি কলেজের উদ্ভিদবিদ্যা বিভাগের প্রধান অধ্যাপক ড. নাসরিন আক্তার বলেন, বাসকের বৈজ্ঞানিক নাম আঢাটোডা বাসিকা (অফযধঃড়ফধ ঠধংরপধ)। ঔষধি গুণসম্পন্ন উদ্ভিদটির পাতা ও ফলে একধরনের গন্ধ আছে। বাংলাদেশে বাসকের বাণিজ্যিকভাবে চাষ হচ্ছে। ভারতের তামিলনাড়ুতে বাসকের ব্যাপক চাষ হয়। তিনি বলেন, বাসকের জন্ম ও বৃদ্ধিতে সাতক্ষীরার মাটি বেশ অনুকূল। এখানে পরিকল্পিতভাবে বাসকগাছ লাগালে তা দেশের ওষুধ শিল্পে দারুণ অবদান রাখতে পারে। ইতিবাচক পরিবর্তন আনতে পারে এ অঞ্চলের গ্রামীণ অর্থনীতিতেও।
কৃপ্র/এম ইসলাম