কৃষি প্রতিক্ষণ ডেস্ক।।
মাটিতে অতিরিক্ত লবণাক্ততার কারণে দুই যুগেরও বেশি সময় ধরে অনাবাদি ছিল বাগেরহাটের মোরেলগঞ্জ উলজেলার প্রায় ১৬ হাজার হেক্টর জমি। দুই যুগ পর এ বছর সর্ব-প্রথম উর্বরাশক্তি ফিরে পেয়েছে ওই জমি। উপজেলার প্রায় ১৬ হাজার হেক্টর জমি লবণাক্ততার কারণে কোনো ফসল ফলাতে পারেননি অন্তত ৮ হাজার কৃষক। লবণাক্ততা হ্রাস পাওয়ায় এখন ধানসহ সবজি চাষ করছেন কৃষকরা। তথ্যসুত্র-দৈনিক কালেরকণ্ঠ।
বেড়িবাঁধ নির্মাণের পর লবণাক্ত পানি প্রবেশ করতে না পারায় প্রাণ ফিরে পেয়েছে মোরেলগঞ্জ উপজেলার তেলীগাতি, বহুরবুনিয়া, জিউধরা, খাউলিয়া, পুটিখালী, দৈবজ্ঞহাটী ও পঞ্চকরণ ইউনিয়নের সাধারণ কৃষকরা।
জানা গেছে গত ২০-২২ বছর ধরে লবণাক্ততার কারণে মৎস্য ঘের করে আসছেন এখানকার কৃষকরা। বিগত দিনে ফসল ভালো না হওয়ার কারণে মৎস্য ব্যবসা করছে তারা। কিন্তু পরপর কয়েক বছর ভাইরাস আক্রান্তের কারণে চিংড়ি চাষে তারা নিঃস্ব হয়ে পড়েন।
দেবরাজ গ্রামের গিয়ে দেখা যায়, বিস্তীর্ণ মাঠজুড়ে সবুজের সমারোহ। প্রায়ই বাড়ির আঙিনা এমনকি রাস্তার দুই ধার ভরে আছে লাউ, কুমড়া, মুলা, মরিচসহ শীতকালীন নানা সবজিতে, এখন মাঠজুড়ে আমন ধান।
স্থানীয় কৃষক জাকির শেখ বলেন, লবণাক্ততার কারণে ২২-২৩ বছর ধরে ঘরে ধান তুলতে পারিনি। দুই বছর ধরে ধানের পাশাপাশি রবিশস্য, লাউ, কুমড়া, লাল শাক পালন শাক সহ নানা সবজি চাষ করতে পারছি। এ ছাড়াও ঘেরের মধ্যে বোরো ও আমন ধান ব্যাপক ফসল দেখা যাচ্ছে।
এ বিষয়ে ইউনিয়ন উপসহকারী কৃষি কর্মকর্তা দীপংকর সমদ্দার বলেন, এ অঞ্চলের কৃষকদের একসময় দুর্বিসহ জীবন পার করতে হয়েছে। দীর্ঘদিন লবণাক্ততার কারণে চাষাবাদ বন্ধ থাকায় প্রায় ২ যুগ পরে আবার এখানকার কৃষি প্রাণ ফিরে পেয়েছে। এখন বাড়ি ও মাঠের কোনো জায়গা আর ফেলে রাখছেন না এলাকার কৃষকরা।
চাষি রণজিত ঢালী বলেন, তার ২ বিঘা মৎস্য ঘেরের ভেরিতে মুঘ ডাল চাষ করে ৮ মণ ফসল ঘরে তুলেছেন। তিনি আরো বলেন, একটা সময় আমাদের এলাকায় আম হতো না। এখন গাছ লাগালেই হয়। লবণাক্ততার কবল থেকে মুক্তি পেয়ে আমরা খুশি।
কৃষকরা জানান, লবণ পানি প্রবেশ করার কারণে ধানে অর্ধেক ফলনও হতো না। এর মধ্যে প্রভাবশালী চিংড়িচাষিরা বেড়িবাঁধ কেটে লবণ পানি ঢুকিয়ে জমিগুলোকে চাষের অযোগ্য করে তোলে। তার পরও কিছুদিন ফসল ফলানোর চেষ্টা করেছেন তাঁরা। একসময় নানাবিধ সমস্যার কারণে কৃষকরা ধান চাষ বন্ধ করে দেন। বিকল্প পেশা মৎস্য ঘের ব্যবসায় কাঁকড়া ও চিংড়ি চাষে ঝুঁকে পড়েন জীবিকা তাগিদে। চিংড়ি চাষে চাষিরা পর পর কয়েক বছরে ভাইরাসজনিত রোগে মার খাওয়ার পর আবার ধান আবাদে ফিরে এসেছেন।
মৎস্যচাষি কাদের মুন্সী বলেন, চিংড়ি চাষে বিভিন্ন রোগের কারণে মার খেয়েছি। ধান তো হতোই না, বাড়ির গাছপালাও নষ্ট হয়ে গিয়েছিল। তা ছাড়া চিংড়ি চাষ ছিল মুষ্টিমেয় কিছু মানুষের দখলে। ফলে প্রান্তিক কৃষকরা ছিল খুব কষ্টে। বর্তমানে নিজ নিজ জমিতে ফসল ফলিয়ে সংসার চালিয়েও বছর শেষে সঞ্চয় করতে পারছেন তাঁরা।
মোরেলগঞ্জ উপজেলা কৃষি কর্মকর্তা অনুপম রায় বলেন, তিন বছর ধরে ধান ও অন্যান্য ফসল চাষ করছেন কৃষকরা। প্রায় ১৬ হাজার হেক্টর জমি লবণ পানির জন্য এ অঞ্চলের প্রধান ফসল ধান চাষ বন্ধ ছিল। আমরা ওই এলাকার কৃষকদের নতুন প্রযুক্তির সহায়তার পাশাপাশি প্রশিক্ষণের মাধ্যমে কৃষকদের উদ্বুদ্ধ করছি যাতে করে তাঁরা এসব অনাবাদি জমিতে নতুন নতুন ফসলের পাশাপাশি সবজি উৎপাদন করতে পারেন। এ ছাড়াও সংশ্লিষ্ট উপসহকারী কৃষি কর্মকর্তারা কৃষকদের সার্বক্ষণিক পরামর্শ দিয়ে যাচ্ছেন।
কৃপ্র/এম ইসলাম