‘সর্বস্ব হারানো আস্তাইল গ্রামের মানুষের দিন কাটছে অনাহারে’
কৃষি প্রতিক্ষণ ডেস্ক।।
গ্রামের নাম আস্তাইল। দুই বছর আগেও এখানে ছিল ১১০টি পরিবারের বাস। এখন আর কোনো চিহ্নই নেই। পুরো গ্রাম বিলীন হয়ে গেছে মধুমতির গর্ভে। ভাঙন অব্যাহত থাকায় আতঙ্কে রয়েছে আরো কয়েকটি গ্রামের মানুষ। তথ্যসুত্র- দৈনিক বনিক বার্তা।
আস্তাইল গ্রামটি নড়াইলের লোহাগড়া উপজেলার জয়পুর ইউনিয়নে অবস্থিত। উপজেলা সদর থেকে ১২ কিলোমিটার উত্তরে এ গ্রামের অবস্থান। পার্শ্ববর্তী আলফাডাঙ্গা উপজেলার সীমান্তবর্তী গ্রাম এটি। ধারাবাহিক ভাঙনের মুখে পড়ে সর্বশেষ ৪০টি বসতবাড়ি টিকে ছিল। গত বর্ষায় সবক’টি বাড়ি ও ফসলি জমি নদীগর্ভে চলে গেছে। গ্রামটির স্থলে এখন মধুমতির অথৈ জল।
সম্প্রতি সরেজমিন গিয়ে দেখা যায়, লোহাগড়া, ফরিদপুর ও আলফাডাঙ্গা উপজেলার আটটি গ্রামকে চারপাশ দিয়ে ঘিরে রেখেছে মধুমতি নদী। সর্বপশ্চিমে ছিল আস্তাইল গ্রামটি। এখন আলফাডাঙ্গা উপজেলার শিকারপুর, টিঠাসহ কয়েকটি গ্রামে ভাঙন ছড়িয়ে পড়েছে। ঝুঁকিতে রয়েছে কয়েকশ পরিবার। থেমে থেমে ভাঙছে বসতভিটা, ফসলি জমিসহ বিভিন্ন স্থাপনা। তবে নদীর অন্য তিন পাশে চর জেগে ওঠায় ভাঙন থেকে রক্ষা পেয়েছে সেদিকের গ্রামগুলো।
এদিকে সর্বস্ব হারানো আস্তাইল গ্রামের মানুষের দিন কাটছে অনাহারে অর্ধাহারে। অনেকেই পার্শ্ববর্তী গ্রামে আশ্রয় নিয়েছেন। কেউ চলে গেছেন দূরে আত্মীয়স্বজনের বাড়িতে। কেউ কেউ যাত্রা করেছেন নিরুদ্দেশে।
মধুমতির ভাঙনে সব হারানোদের মধ্যে মকবুল মোল্লা একজন। এর আগে ছয়বার ভাঙনের শিকার হয়েছেন তিনি। এখন আশ্রয় নিয়েছেন আরেকজনের বাড়িতে। ঘরবাড়ি ও ফসলি জমি হারিয়ে খেয়া পারাপার করে ছয় সদস্যের পরিবারের জন্য অন্ন জোগাচ্ছেন তিনি। অন্ধকার ভবিষ্যৎ হাতড়ে বেড়াচ্ছেন তিনি। কথা বলতেই এক বুক হাহাকার নিয়ে বলেন, সব হারিয়ে এখন আমি পথের ফকির!
মকবুল মোল্লার মতোই নিঃস্ব হয়েছেন মেহেরুননেছা, রকিব মোল্লা, রফিকুল সরদার, কামাল শেখ, সরেজান মোল্লা, আশরাফ মুন্সী, মতিয়ার মুন্সী, আরিফ ঠাকুর, নুরু মোল্লা, টুনু ঠাকুর, সালাম ফকির ও তারিফ ঠাকুরসহ অন্তত ৪০টি পরিবার।
এদিকে মধুমতির ভাঙন অব্যাহত থাকায় আলফাডাঙ্গা উপজেলার আরো কয়েকটি গ্রাম মারাত্মক ঝুঁকিতে রয়েছে। আতঙ্কে দিন কাটছে এসব গ্রামের বাসিন্দাদের। তারাও গত কয়েক বছরের মধ্যে একাধিকবার ভাঙনের শিকার হয়েছেন। এবার সব হারানোর আতঙ্কে দিন গুনছেন। এরই মধ্যে অনেকে ঘরবাড়ি ভেঙে অন্যত্র চলে যাচ্ছে। তবে প্রতি বছর ভাঙনে বহু মানুষ বাস্তুচ্যুত হলেও কর্তৃপক্ষ কখনই এগিয়ে আসেনি বলে অভিযোগ করেছেন ভাঙনকবলিত এলাকার বাসিন্দারা।
স্থানীয় ইউপি সদস্য জানান, ইউনিয়ন পরিষদ ক্ষতিগ্রস্তদের তালিকা দিয়েছে। কিন্তু এখনো সরকারি কোনো সাহায্য আসেনি। স্থানীয় জয়পুর ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যান আকতার হোসেন বলেন, দুই বছর আগেও আস্তাইল গ্রামে ১১০টি পরিবার ছিল। মধুমতি এ গ্রামের অস্তিত্ব বিলীন করেছে। এসব পরিবার এখন নিঃস্ব। গত বছর পরিবারপ্রতি ৩০ কেজি করে চাল দেয়া হয়েছিল। এ বছর তালিকা করে দেড় মাস আগে ইউএনও কার্যালয়ে দেয়া হয়েছে। এখনো কোনো বরাদ্দ আসেনি।
এ ব্যাপারে জানতে চাইলে উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা (ইউএনও) মুকুল কুমার মৈত্র বলেন, বরাদ্দ চেয়ে জেলা প্রশাসকের কাছে পাঠানো হয়েছে আগেই। দেখি এখন কথা বলব। আর ভাঙন রোধে ব্যবস্থা নিতে সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষের সঙ্গে কথা বলব।
শিগগিরই কোনো ব্যবস্থা নেয়ার আশ্বাস দিতে না পারলেও বড় প্রকল্প তৈরি করে পাঠানো হয়েছে বলে জানিয়েছেন নড়াইল পানি উন্নয়ন বোর্ডের (পাউবো) নির্বাহী প্রকৌশলী শাহানেওয়াজ তালুকদার।
কৃপ্র/এম ইসলাম