কৃষি প্রতিক্ষণ ডেস্ক।।
মৌলভীবাজার জেলার কাউয়াদীঘি হাওড়ের কৃষকরা জলাবদ্ধতার কারণে গত এক দশক ধরে আমন ধান আবাদ করতে পারেননি । কিন্তু এ বছর বিস্তীর্ণ হাওড়জুড়ে সোনালি ধানের হাসি। মূলত মনু নদ প্রকল্পের কাশিমপুর পাম্প হাউজে নতুন পাম্প স্থাপনের কারণেই এটি সম্ভব হয়েছে। এবার প্রায় ৮০০ হেক্টর জমিতে আমনের আবাদ হয়েছে। বহুদিন পর আসছে অগ্রহায়ণে নবান্ন উদযাপন করবেন কাউয়াদীঘির কৃষকরা।তথ্যসুত্র-দৈনিক বনিক বার্তা।
কৃষি বিভাগ সূত্রে জানা গেছে, কাউয়াদীঘি হাওড়টি পড়েছে রাজনগর ও মৌলভীবাজার সদর উপজেলায়। এর মধ্যে রাজনগর উপজেলায় পড়েছে পাঁচ হাজার এবং সদর উপজেলায় ১ হাজার ৪০০ হেক্টর। এ জমিতে আমন ও বোরো চাষ হয়ে থাকে। জলাবদ্ধতার কারণে ১০-১২ বছর ধরে আমন হয়নি। বোরো ধানও শেষ মুহূর্তে এসে প্রায়ই তলিয়ে যায়। এ বছর জেলায় আমনের লক্ষ্যমাত্রা ছিল ৯৬ হাজার ২৪৬ হেক্টর। কাউয়াদীঘিতে আবাদ হওয়ায় অর্জিত হয়েছে ৯৮ হাজার ৪৯০ হেক্টর।
মৌলভীবাজারের রাজনগর উপজেলার পাঁচগাঁও ইউনিয়নের পশ্চিমভাগ, কানিকিয়ারিসহ কাউয়াদীঘি হাওড়াঞ্চলের বিভিন্ন এলাকা ঘুরে দেখা গেছে, হাওড়জুড়ে সবুজ-সোনালি ধানের সমারোহ। কানিকিয়ারি গ্রামের আচকির মিয়া বলেন, নতুন পাম্প বসানোয় এবার পানি সেচ দেয়া হয়েছে। ফলে চাষাবাদ সম্ভব হয়েছে। গত কয়েক বছর চারা তৈরি করেও রোপণ করতে পারিনি। ১০ বছর পর আমন চাষ করলাম। আর কিছুদিনের মধ্যেই ধান কাটা শুরু হবে।
রাজনগর উপজেলা কৃষি কর্মকর্তা শেখ আজিজুর রহমান জানান, এবার হাওড়ের রাজানগর অংশে ৬১৫ হেক্টর জমিতে আমন চাষ হয়েছে। যেখানে গত কয়েক বছর ছিল শূন্যের কোটায়। উপজেলায় এবার আমনের লক্ষ্যমাত্রা ছিল ১১ হাজার ২০০ হেক্টর, চাষ হয়েছে ১২ হাজার ১৮৫ হেক্টর। অন্যদিকে হাওড়ের সদর উপজেলা অংশে ১৫৬ হেক্টর জমিতে আমন চাষ হয়েছে বলে জানিয়েছেন কৃষি কর্মকর্তা সুব্রত কান্তি দত্ত।
আর আবহাওয়া অনুকূলে থাকায় ফসল ভালো হয়েছে বলে জানিয়েছেন মৌলভীবাজার কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তর মৌলভীবাজারের উপপরিচালক মো. শাহজাহান। কাউয়াদীঘিতে পানি নিয়ন্ত্রণে থাকায় ও স্বাভাবিক বৃষ্টি হওয়ায় প্রায় ৮০০ হেক্টর জমিতে আমন আবাদ হয়েছে বলে জানান তিনি।
পানি উন্নয়ন বোর্ড (পাউবো) সূত্রে জানা গেছে, কাউয়াদীঘি হাওড় এলাকায় আমন ও বোরো ফসল চাষের জন্য অতিরিক্ত পানি সেচ দিতে মনু নদ প্রকল্পের আওতায় সত্তরের দশকের শেষ নাগাদ কাশিমপুরে পাম্প হাউজ স্থাপন করা হয়। পাম্প হাউজটি অনেক পুরনো হওয়ায় ভারি বর্ষণ ও পাহাড়ি ঢলের পানি যথাসময়ে সেচ দিয়ে বের করা সম্ভব হতো না। এতে জলাবদ্ধতায় বোরো ফসল পানিতে তলিয়ে যায়। সময়মতো পানি না কমার কারণে আমন ফসলও রোপণ করা যেত না। এ বছর পুরনো আটটি পাম্প সরিয়ে নতুন আটটি পাম্প স্থাপন করা হয়েছে। পাম্প পুনঃস্থাপন ও নিয়ন্ত্রণ কক্ষ স্থাপনে এতে ব্যয় হয়েছে ৮৪ কোটি ১৬ লাখ টাকা।
নতুন পাম্প বসানোর ফলে জলাবদ্ধতা নিরসন করা সম্ভব হয়েছে উল্লেখ করে পাউবো মৌলভীবাজার কার্যালয়ের নির্বাহী প্রকৌশলী (যান্ত্রিক) মো. আনিসুর রহমান বলেন, যখনই হাওড়ে পানি হয়েছে, তখনই সেচ দিয়ে তা বের করে দেয়া হয়েছে। হাওড়ে দুই ফসল নিশ্চিত করতে আরো একটি পাম্প হাউজ স্থাপনের পরিকল্পনা রয়েছে বলেও জানান তিনি।
কৃপ্র/এম ইসলাম