জাত পরিচিতিঃ ব্রি ধান-৬৪ জিংক সমৃদ্ধ বোরো ধানের জাত। এ জাতটি বাংলাদেশ ধান গবেষণা ইনস্টিটিউট IR75382-32-2-3-3 এবং BR7166-4-5-3-2-5 -5B1-92 এর মধ্যে সন্করাণের পর বংশানুক্রম সিলেকশান Pendigree Selection এর মাধ্যমে উদ্ভাবন করেছে। এর কৌলিক সারি নং-BR7840-54-1-2-5। এ জাতটি ২০১৪ সালে জাতীয় বীজ বোর্ড কর্তৃক বোরো মৌসুমে কৃষক পর্যায়ে চাষাবাদের জন্য অনৃমোদন লাভ করে।
জাতের বৈশিষ্ট্য
- অধিক ফলনশীল।
- গাছের উচ্চতা ১১০ সেমি.।
- চালের মাঝারি মোটা এবং রঙ সাদা।
- ১০০০টি পুষ্ট ধানের ওজন প্রায় ২৪.৬গ্রাম।
- চালে প্রোটিনের পরিমাণ ৭.২%।
- চালে জিংক এর পরিমাণ ২৪ মিলিগ্রাম/কেজি।
জাতের বিশেষ প্রয়োজনীয়তা
ব্রি ধান ৬৪ এর চালে উচ্চ মাত্রায় অত্যাবশ্যকীয় খাদ্যোপাদান জিন্ক রয়েছে। মানুষের রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা, বৃদ্ধিমত্তাসহ নানাবিধ শারীরবৃত্ত্বীক প্রক্রিয়ার জন্য জিন্ক অতি প্রয়োজনীয়। এর অভাবে শিশুদের স্বাভাবিক বৃদ্ধি ও মানসিক বিকাশ ব্যহত হয়; বিভিন্ন সংক্রামক ব্যাধি যেমন, ডায়রিয়া,নিউমোনিয়া,ম্যালেরিয়াতে আক্রান্ত হওয়ার ঝুকিঁ বেড়ে যায়। আমাদের দেশের শতকরা ৪০ ভাগের বেশী মানুষ বিশেষ করে শিশু ও নারীদের জিন্কের ঘাটতি রয়েছে। প্রচলিত উচ্চ ফলনশীল ধানের জাতগুলোতে জিন্কের গড় পরতা পরিমান ১৫-১৬ মিলিগ্রাম। ব্রি ধান ৬৪ তে জিন্কের ঘাটতি রয়েছে। প্রচলিত জাতের চেয়ে কমপক্ষে ৮ মিলিগ্রাম বেশি। এ জাতের ভাত নিয়মিত খেলে আমাদের মত দেশগুলোর দারিদ্র মানুষের দৈনিক জিন্ক চাহিদার কমপক্ষে শতকরা ৪০ ভাগ পূরন করা সম্ভব হবে। এ ধানের জাত দরিদ্র জনগোষ্ঠীর জিংকের অভাব জনিত অপুষ্টি লাঘবে টেকসই ভূমিকা করতে সক্ষম হবে।
জীবনকালঃ এ জাতের গড় জীবনকাল ১৫০-১৫২দিন।
ফলনঃ হেক্টর প্রতি গড় ৬.০-৬.৫ টন ফলন দিতে সক্ষম। তবে উপযুক্ত পরিচর্যা পেলে ৭.০ টন পর্যন্ত ফলন দিতে পারে।
চাষাবাদ পদ্ধতি
এ ধানের চাষাবাদ পদ্ধতি অন্যান্য উফশী বোরো ধানের জাতের মতই।
১। বীজ তলায় বীজ বপনঃ অগ্রহায়ণের ১ তারিখে থেকে ১৫ তারিখ(১৫নভেম্বর থেকে ৩০ নভেম্বর)।
২। চারার বয়সঃ ৩৫-৪০দিন।
৩। চারার সংখ্যাঃ প্রতি গুছিতে ২/৩টি।
৪। রোপণ দুরত্বঃ ২০ সেমি. -১৫ সেমি.।
৫। সার ব্যবস্থাপনা(কেজি/বিঘা)ঃ
৫.১
ইউরিয়া | টিএসপি | এমওপি | জিমসাম | জিংকসালফেট |
৩৫ | ১৩ | ১৬ | ১৩ | ১.৫ |
৫.২ সর্বশেষ জমি চাষের সময় সবটুকু টিএসপি, জিংক সালফেট, জিপসাম এবং অর্ধেক এমওপি সার প্রয়োগ করা উচিত। ইউরিয়া সার সমান তিন কিস্তিতে যথা রোপণের ১৫দিন পর ১ম কিস্তি, ২৫-৩০ দিন পর ২য় কিস্তি এবং ৪০-৪৫ দিন পর ৩য় কিস্তি প্রয়োগ করতে হবে।
৬। আগাছা দমনঃ রোপণের পর অন্তত ২৫-৩০ দিন পর্যন্ত জমি আগাছা মুক্ত রাখতে হবে।
৭। সেচ ব্যবস্থাপনাঃ চাল শক্ত হওয়া পর্যন্ত প্রয়োজনে সম্পূরক সেচ দিতে হবে।
৮। রোগবালাই দমনঃ ব্রি ধান ৬৪ তে রোগবালাই ও পোকামাকড়ের আক্রমণ প্রচলিত জাতের চেয়ে অনেক কম হয়। তবে রোগবালাই ও পোকা মাকড়ের আক্রমণ দেখা দিলে সমন্বিত বালাই দমন ব্যবস্থা প্রয়োগ করা উচিৎ।
৯। ফসল পাকা ও কাটাঃ বৈশাখ মা(১৪এপ্রিল থেকে ১৪ মে) ধান কাটার উপযুক্ত সময়। শীষের শতকরা ৮০ ভাগ ধান পেকে গেলে দেরি না করে ধান কেটে নেয়া উচিত।
সূত্রঃ ব্রি বাংলাদেশ ধান গবেষণা ইনস্টিটিউট
সুত্রঃ কৃপ্র/ এম ইসলাম