কৃষি প্রতিক্ষণ ডেস্কঃ বাড়ির ছাদটি তৈরি করা হয়েছে গাছ লাগানোর উপযোগী করে। পানিনিষ্কাশন, চারা রোপণ—সবকিছুর জন্য আছে বিশেষ ব্যবস্থা। সেই ছাদে লাগানো ছয় ফুট লম্বা গাছে ঝুলছে প্রমাণ আকারের জাম্বুরা। আছে কয়েক প্রজাতির পেয়ারাসহ নানান ফলদ গাছ। ছাদের বাগানে চাষ করা গাজর, মরিচ, টমেটো নিজেরা খাচ্ছেন, আত্মীয়-প্রতিবেশীদের বাড়িতেও পাঠাচ্ছেন। উত্তরা ১৪ নম্বর সেক্টরের এই বাড়ির ছাদে বাগান করেছেন শাহজাদা সেলিম। তিনি পেশায় চিকিৎসক। জানালেন, তাঁর বাগানে ফলের মধ্যে ডালিম, জলপাই, মাল্টা, লেবু, করমচা, আম ও স্ট্রবেরির গাছ আছে। এ ছাড়া তিনি টবেই বিভিন্ন মৌসুমি সবজির চাষ করেন। আর নানান জাতের ফুলগাছও আছে। সব মিলিয়ে বাগানে মোট গাছ আছে দুই শতাধিক।
আগের দিনের খোলামেলা উঠানের বাড়িগুলোর বদলে এখন গড়ে উঠছে আকাশছোঁয়া বহুতল সব ভবন। ফলে বাড়ির উঠানের পাশ দিয়ে যত্ন করে লাগানো বিশালাকৃতির গাছগুলো এখন আর দেখা যায় না। তাই বলে মানুষের মন থেকে কিন্তু হারিয়ে যায়নি সবুজের হাতছানি পাওয়ার আশা। এ কারণেই আধুনিক ফ্ল্যাট বাড়িগুলোর ছাদে অনেকেই গড়ে তুলছেন চমৎকার বাগান। শাহজাদা সেলিম বলেন, ‘ছোটবেলায় গ্রামের বাড়ির বাগান থেকে ফল খেতাম। এখনকার বাচ্চাদের গাছ থেকে সরাসরি ফল পেড়ে খাওয়ার অভিজ্ঞতা নেই। ছাদে বাগান করায় গাছ থেকে সরাসরি ফল পেড়ে খাওয়া যাচ্ছে। আত্মীয়স্বজনদের বিষমুক্ত সবজি, ফল খাওয়ানো যায়।’
গতকাল শুক্রবার উত্তরা ১৪ নম্বর সেক্টরে শাহজাদা সেলিমের ছাদের বাগান দেখে ফেরার পথে উত্তরা ৫ নম্বর সেক্টরে একটি বাড়িতে চোখ আটকে যায়। বাড়ির ছাদ থেকে সবুজ লতা বাড়ির দেয়াল বেয়ে নেমেছে নিচতলা পর্যন্ত। ছাদেও বোঝা যাচ্ছিল বাগানের অস্তিত্ব। পুরো বাড়িতেই সবুজের আবহ। ওই বাড়ির মালিক চিকিৎসক দেলোয়ার হোসেন ঘুরিয়ে দেখালেন তাঁর ছাদের বাগান। ফল, ফুল, সবজি—কী নেই তাঁর সেই বাগানে। তিনি বলেন, ইট-কংক্রিটের শহরে সবুজের অস্তিত্ব খুঁজে পাওয়া কষ্ট। তাই বাড়ি করার সময় স্থপতিকে বলেছিলাম ছাদটা যেন বাগান করার উপযোগী হয়।
দেলোয়ার হোসেনের সহধর্মিণী রওশন আরা জানালেন, তাঁদের বাগানে ফলের গাছকে প্রাধান্য দেওয়া হয়েছে। এবার তাঁদের গাছে এত আম ধরেছে যে রোজায় তাঁদের বাইরে থেকে আম কিনে খেতে হয়নি। নিজেরা খাওয়ার পাশাপাশি প্রতিবেশীদের মধ্যেও অনেক ফল বিতরণ করেছেন। গাছের কারণে বাড়িটি সবাই চেনে। ইদানীং বাসার ছাদের ওপর গাছ লাগানোর জনপ্রিয়তা বৃদ্ধি পেয়েছে। অনেকেই ফল–ফুলের পাশাপাশি রীতিমতো শাকসবজিও চাষ করছেন। যাঁরা ভাড়া বাসায় থাকেন বা ছাদে বাগান করার সুবিধা নেই, তাঁরা টবে গাছগাছালি রোপণ করেছেন বারান্দায়, চিলেকোঠায়, সিঁড়ির কিনারায়, জানালার পাশে। এতে একচিলতে জায়গাও সবুজে স্নিগ্ধ হয়ে উঠেছে।
এসব নগরবাসী বৃক্ষপ্রেমীদের উৎসাহ জোগাতে এগিয়ে এসেছে ঢাকার নগর কর্তৃপক্ষ। ঢাকা উত্তর ও দক্ষিণ সিটি করপোরেশন থেকে বাড়ির ছাদে বাগান করতে রাজধানীবাসীকে উৎসাহিত করা হচ্ছে। ইতিমধ্যে দক্ষিণের মেয়র সাঈদ খোকন বাড়ির ছাদে, বারান্দায় কিংবা আঙিনায় বাগান গড়ে তোলা হলে বাড়ির মালিকদের হোল্ডিং ট্যাক্স ১০ শতাংশ মওকুফ করার ঘোষণা দিয়েছেন। উত্তরের মেয়র আনিসুল হক সবুজ ঢাকা গড়তে আগামী তিন বছরে পাঁচ লাখ গাছ লাগানোর ঘোষণা দিয়েছেন।
পরিবেশবাদীরা বেশ কিছুদিন ধরেই শহরের তাপমাত্রার ভারসাম্য রক্ষা, স্বাস্থ্য সুরক্ষা এবং বিষমুক্ত সবজি প্রাপ্তিতে নগরে ছাদে বাগান কর্মসূচি বাধ্যতামূলক করে নীতিমালা করার দাবি জানাচ্ছেন। তাঁদের মতে, অপরিকল্পিত নগরায়ণের ফলে ঘনবসতিপূর্ণ ঢাকার পরিবেশ দিন দিন বিষিয়ে উঠছে। বাংলাদেশ পরিবেশ আন্দোলনের (বাপা) যুগ্ম সম্পাদক ইকবাল হাবিব প্রথম আলোকে বলেন, ছাদে বাগান শুধু সবুজ আনে না, ভবনের তাপমাত্রা কমে। ছাদে বাগান শুধু প্রণোদনা দিয়ে হবে না। সিটি করপোরেশন, নার্সারি মালিক, স্বেচ্ছাসেবী সংগঠন, গণমান্য ব্যক্তিদের নিয়ে ছাদে বাগান করাকে একটি সামাজিক আন্দোলনে পরিণত করতে হবে। পরিশ্রমের পরে নিজের বাগানে যখন ফুল-ফল আসে, তখন আনন্দ বেশি হয়। যান্ত্রিক জীবনে সবুজের আনন্দ ছুঁয়ে যায় সবার হৃদয়। এভাবে ধোঁয়া দূষণের শহরের প্রতিটি বাড়ির ছাদ হয়ে উঠবে একটি করে অক্সিজেনের ছোট্ট কারখানা, এমনটাই পরিবেশবাদীদের প্রত্যাশা।
সুত্রঃ প্রথম আলো/কৃপ্র/এম ইসলাম