ড. কে, এম, খালেকুজ্জামান: তেতুলকে হার্টের টনিক বলা হয়। ভেষজবিদরা ইহাকে ”প্রানদায়িনী ও শক্তিধারিনী” বলে আখ্যায়িত করেছেন। ইহা লিগুমিনোসি গোত্রের অন্তর্ভূক্ত। বৈজ্ঞানিক নাম Tamarindus indica । তেতুলের ফলে এসিডিক পাল্প থাকে। ইহা সরাসরি খাওয়া যায় এবং জ্যাম, জেলী, আচার, সিরাপ ও পানীয় তৈরী করেও খাওয়া যায়। তেতুলে পর্যাপ্ত পরিমান ভিটামিন, আঁশ, পটাসিয়াম, ম্যাগনেসিয়াম এবং অন্যান্য প্রয়োজনীয় উপাদান বিদ্যমান।
প্রতিদিন কমপক্ষে বীজ ছাড়া আঁশসহ ২৫ গ্রাম তেতুল লবণ ও মিষ্টি ছাড়া ভক্ষন করলে ব্লাড প্রেসার ও ডায়াবেটিস নিয়ন্ত্রনে থাকে। গবেষণায় দেখা গেছে যারা নিয়মিত তেতুল খায় তাদের রক্তে কোলেস্টেরলের উপস্থিতি একেবারেই কম এবং শরীরে সহজে মেদ জমে না।
অনেকের ভ্রান্ত ধারণা আছে তেতুল খেলে সেক্স কমে যায়, কিন্তু নিয়মিত তেতুল খেলে শরীর থেকে অতিরিক্ত ফ্যাট বের হয়ে সেক্স আরো বাড়িয়ে দেয়। তেতুল খাওয়ার পরে যদি পাতলা পায়খানা হয় তাহলে বোঝা যাবে তেতুল শরীরে ভাল কাজ করছে। অবশ্য একবারের বেশী পাতলা পায়খানা হবে না। পাতলা পায়খানার সাথে ফ্যাট গলে বের হয়ে যায়। পাতলা পায়খানা না হলেও উপকার হবে। যদি কেউ প্রতিদিন নিয়মিত এক ঘন্টা দ্রুত হাটে ও কমপক্ষে ২৫ গ্রাম করে তেতুল খায়, তাহলে তার হার্টে ব্লক হতে পারবে না। তেতুল ভরাপেটে খাওয়াই ভাল।
প্রতি ১০০ গ্রাম ভক্ষনযোগ্য তেতুলে নিম্নলিখিত ভিটামিন ও মিনারেল বিদ্যামান।
ক্যালরি – ৭০ ক্যালরি
আর্দ্রতা – ৭০.৫ গ্রাম
প্রোটিন – ২.৩ গ্রাম
ফ্যাট – ০.২ গ্রাম
কার্বোহাইড্রেট – ১৪.৭ গ্রাম
সুগার – ১২.০ গ্রাম
আঁশ – ৬.৩ গ্রাম
ম্যাগনেসিয়াম – ৪.০ মিলি গ্রাম
পটাসিয়াম – ২৫.০ মিলি গ্রাম সোডিয়াম – ৫.০ মিলি গ্রাম
ক্যালসিয়াম – ৪২৯.০ মিলি গ্রাম
ফসফরাস – ১৪.০ মিলি গ্রাম
ফেরাস – ৩.০ মিলি গ্রাম
ভিটামিন – ৮৬৭ আই ইউ
ভিটামিন বি১- ০.৩৪ ি মিলি গ্রাম
ভিটামিন বি২ – ০.১৪ মিলি গ্রাম
ভিটামিন সি – ৪৪.০ মিলি গ্রাম
নিকোটিনামাইড – ১.৫ মিলি গ্রাম
প্রতিদিন নিয়মিত তেতুল খেলে অনেক উপকার পাওয়া যায় তার কিছ’ নিম্নে বর্ণনা করা হলঃ
১. হার্ট ভাল রাখে।
২. ডায়াবেটিস কমায়।
৩. শরীরের কোলেস্টেরল ও ফ্যাট কমায় এবং জমতে দেয় না।
৪. ইহা এন্টিঅক্সিডেন্টের একটি ভাল উৎস যা ক্যান্সার প্রতিরোধ করে।
৫. শরীরের ত্বকের তাপমাত্রা নিয়ন্ত্রন করে ও ত্বক ভাল রাখে।
৬. শরীরের তাপমাত্রা কমিয়ে জ্বর সারায়।
৭. ঠান্ডা লাগা রোগে উপকারী।
৮. শরীরের পরিপাক ক্রিয়া সক্রিয় রাখে।
৯. হজমে সাহায্য করে।
১০. ক্ষুধা বাড়ায়।
১১. কোষ্ঠকাঠিন্য দুর করে।
১২. শরীর থেকে বিষাক্ত পদার্থ বের করে দেয়।
১৩. জন্ডিস রোগে উপকারী।
১৪. তেতুলের রস দ্বারা গড়গড়া করলে গলা ব্যথা রোগ ভাল হয়।
১৫. তেতুলের পাল্প ও দুধ একত্রে জ্বাল দিয়ে খেলে আমাশয় রোগ ভাল হয়।
১৬. ইহাতে ভিটামিন সি পর্যাপ্ত পরিমান থাকে, যাহা স্কার্ভি রোগের প্রতিরোধক ও প্রতিশোধক হিসেবে কাজ করে এবং ইহা রক্তনালী নমনীয় করে রক্ত চলাচল সহজ করে ।
ড. কে, এম, খালেকুজ্জামান
উর্ধ্বতন বৈজ্ঞানিক কর্মকর্তা (উদ্ভিদ রোগতত্ত্ব)
মসলা গবেষণা কেন্দ্র, বিএআরআই
শিবগঞ্জ, বগুড়া।