কৃষি প্রতিক্ষণ ডেস্কঃ রংপুর জেলার মিঠাপুকুর বালুয়া মাসিমপুর ইউনিয়নের তরনী দাসপাড়া গ্রামের সুমিতা রানীর সারাটা দিন কাটে বাঁশ-বেত নিয়ে। তৈরি করেন কুলা, ডালা, চালা, পাটি, ফুল ঝুড়িসহ বাঁশ ও বেতের নানা উপকরণ। একাই কুলিয়ে উঠতে না পেরে স্বামী ও ৪ সন্তানকে লাগিয়ে দেন কাজে। কঠোর পরিশ্রমের ফলেও সংসার ঠিকমতে চলে না সুমিতা রানীর। শুধু সুমিতা রানী নয়- মিঠাপুকুরের ১০ গ্রামের প্রায় সাড়ে ৭ হাজার মানুষ আর্থিক সংকট ও নানা প্রতিকূলতার মাঝেও ধরে রেখেছেন বাপ-দাদার এই পেশা। খবর ইত্তেফাক অনলাইনের।
উপজেলার ১৭ ইউনিয়নের মধ্যে ১০ গ্রামের প্রায় সাড়ে ৭ হাজার মানুষ বাঁশ-বেত শিল্পের উপর নির্ভর। তারা দীর্ঘদিন ধরে বাঁশ ও বেতের নানা উপকরণ তৈরি করে আসছেন। এক যুগ আগেও ভালো কদর ছিল তাদের। কিন্তু, বর্তমানে বাজারে চাহিদা কম হওয়ায় ও প্লাস্টিকের ব্যবহার বেড়ে যাওয়ায় কদর কমেছে এই শিল্পের সঙ্গে জড়িত মানুষগুলোর। তারপরও, তারা ধরে রেখেছেন এই পেশা।
সরেজমিনে বালুয়া মাসিমপুর ইউনিয়নের যমুনেশ্বরী নদীর ধারে তরনী দাসপাড়া গ্রামের গিয়ে দেখা যায়, মণ্ডপে চলছে দুর্গাপূজা। আনন্দ ফুর্তিতে ব্যস্ত থাকার কথা থাকলেও তেমনটি দেখা যায়নি সেখানে। অনেকে কাজ করছেন বাঁশ ও বেত নিয়ে। তারা তৈরি করছেন কুলা, ডালা, চালা, পাটি, ফুল ঝুড়িসহ নানা উপকরণ। এ সময় কথা হয় সুরুজ বালা ও দীপালী বালার সাথে। তারা জানায়, পৈতৃক সূত্রে দীর্ঘদিন ধরে এই কাজ করে আসছেন। ৮/১০ বছর আগেও বেশ দাম পাওয়া যেত। সংসার চলতো ভালোমতই। কিন্তু, এখন বাঁশ-বেত শিল্পের কদর অনেকাংশেই কমে গেছে। তারপরও, বাধ্য হয়ে ধরে রাখতে হচ্ছে এই পেশা। তারা আরও জানান, দীর্ঘদিন ধরে এই কাজে থাকায় হঠাত্ করে পেশা বদল করা সম্ভব হচ্ছে না। তাছাড়াও, অন্য কোনো কাজ জানা না থাকায় এটির উপরই নির্ভর করতে হচ্ছে নিজের তাগিদে।
তরনী দাসপাড়া গ্রামের অনেকে জানায়, উত্পাদন মূল্যের চেয়েও কম দামে বাজারে বিক্রি করতে হচ্ছে দ্রব্যাদি। একজন শিল্পী দিনে ২/৩ টি কুলা তৈরি করতে পারেন। একটি কুলা তৈরিতে মজুরিসহ ৫০/৬০ টাকা খরচ হয়। কিন্তু, বাজারে বিক্রি হচ্ছে ৩০ টাকার মত। তারা আরও জানান, দিনে ৫/৭ জন মিলে ২টি বাঁশ দিয়ে ১৫টি পণ্য তৈরি করতে সব মিলে খরচ হচ্ছে ১ হাজার ২শ’ টাকা। কিন্তু বাজারে ওই পণ্যগুলো বিক্রি হয় মাত্র ৬শ’ টাকায়।
বালুয়া মাসিমপুর ইউনিয়ন আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক সেলিম চৌধুরী বলেন, তরনী দাসপাড়া গ্রামের শতাধিক পরিবার বাঁশ-বেত শিল্পের উপর নির্ভর। তারা নানা প্রতিকূলতার মাঝেও ওই পেশাটি ধরে রেখেছেন। সরকারিভাবে নানা সুযোগ-সুবিধা তাদের দেওয়া হচ্ছে। সাবেক ইউপি সদস্য আনোয়ারুল হক বলেন, তাদেরকে অগ্রাধিকারের ভিত্তিতে ভিজিএফ, ভিজিডি, বয়স্ক ও বিধবা ভাতাসহ সরকারের নানা সুযোগ-সুবিধা দেওয়া হতো।
উপজেলা মহিলা বিষয়ক কর্মকর্তা মল্লিকা পারভীন বলেন, বাঁশ-বেত শিল্পের উন্নয়নের জন্য সরকার নানা কর্মসূচি গ্রহণ করেছে। উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা মামুন-অর-রশীদ বলেন, বাঁশ-বেত শিল্পীদের জীবনমান উন্নয়নের আরও কর্মসূচি ও প্রকল্প গ্রহণ করা হবে।
কৃপ্র/ এম ইসলাম