কৃষি প্রতিক্ষণ ডেস্কঃ পিরোজপুর জেলার নাজিরপুরের ‘ভাসমান সবজি চাষ পদ্ধতি’ শুধু জাতীয়ভাবে নয়, এখন আন্তর্জাতিকভাবে স্বীকৃত। এরই মধ্যে এই চাষাবাদ পদ্ধতি জাতিসংঘের খাদ্য ও কৃষি সংস্থা এফএও থেকে ‘কৃষি ঐতিহ্য অঞ্চল’ হিসেবে স্বীকৃতি পেয়েছে।
একসময় এই বিল এলাকা কচুরিপানা, দুলালী বন, শ্যাওলা ও ফ্যানা ঘাসসহ অনেক জলজ উদ্ভিদে ঠাসা থাকত। এসব জলজ উদ্ভিদকেই কাজে লাগালেন এখানকার কৃষকরা। বের করলেন এই নতুন চাষাবাদ পদ্ধতি। আর জলজ সেই স্তূপগুলোকে পচিয়ে তৈরি করা হলো এমন এক ধাপ, যা চাষাবাদের উপযোগী ও পানিতে ভেসে থাকে। এর একেকটি ভাসমান ধাপ ৫০-৬০ মিটার লম্বা ও দেড় মিটার চওড়া হয়।
পিরোজপুরের নাজিরপুর উপজেলার নিচু এলাকা দেউলবাড়ি দোবড়া, মালিখালী ও দীর্ঘা ইউনিয়নের মুগারঝোর, কলারদোয়ানিয়া, দীর্ঘা, বৈঠাকাঠা, খলনি, মেদা, সাচিয়া, পাকুরিয়া, গাঁওখালী, পদ্মডুবি অনেক গ্রামে ভাসমান পদ্ধতিতে চাষাবাদ হচ্ছে ।
এ ধাপ পদ্ধতি চাষের উপযোগী করতে ৭ থেকে ১০ দিন রাখতে হয়। ভাসমান বা ধাপ পদ্ধতিতে সরাসরি বীজ বপন সম্ভব নয় । কৃষকেরা প্রতিটি বীজের জন্য একধরনের পদ্ধতি গ্রহণ করে। যার স্থানীয় নাম দেওয়া হয়েছে ‘দৌলা’।
একমুঠো করে টেপাপানা (ছোট কচুরিপানা) আর দুলালীলতার মধ্যে নারিকেল ছোবড়ার গুঁড়া দিয়ে তৈরি করা হয় ‘দৌলা’। মূলত নারীরাই এই দৌলা তৈরির কাজ করেন। এ দৌলার মধ্যে বিভিন্ন সবজির অঙ্কুরিত বীজ পুঁতে শুকনো জায়গায় রাখা হয়। এর আগে ভেজা জায়গায় বীজ অঙ্কুরিত করা হয়। দৌলাগুলো এভাবে তিন থেকে সাত দিন সারি করে রাখা হয়। ধাপে স্থানান্তরের পাঁচ-ছয় দিন পর গজানো চারার পরিচর্যা শুরু হয়। পাঁচ-ছয় দিন পর পর ভাসমান ধাপের নিচের কচুরিপানার মূল বা শ্যাওলা দৌলার গোড়ায় বিছিয়ে দেওয়া হয়। এভাবেই স্তূপের উপরে তৈরি হয় ভাসমান চাষ পদ্ধতি। লালশাক, পুঁইশাক, লাউ, কুমড়া, পেঁপে, বেগুন, বাঁধাকপি, করলা, ঝিঙা, শিম, বরবটি, টমেটো ও শসার চাষ হচ্ছে এ পদ্ধতিতে।
নাজিরপুর উপজেলার বিলাঞ্চলে প্রায় ১০ হাজার পরিবার প্রত্যক্ষ বা পরোক্ষভাবে জড়িত আছে ভাসমান পদ্ধতির আবাদের সঙ্গে। চলতি মৌসুমে বিল এলাকায় প্রায় ১০০ হেক্টর জমিতে বীজতলায় চারা উৎপাদন চলছে আর ২ হাজার হেক্টর জমিতে ভাসমান পদ্ধতিতে কান্দি (আইল) তৈরি করে প্রস্তুতি চলছে শাকসবজি আবাদের।
পিরোজপুর কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তরের উপপরিচালক মো. আবুল হোসেন তালুকদার জানান, এ পদ্ধতিতে কৃষির উৎপাদনশীলতা কৃষিজমির চেয়ে ১০ গুণ। এ ছাড়া সম্পূর্ণ জৈব পদ্ধতিতে চাষ হয়, রাসায়নিক সার ব্যবহার হয় না। ফলে উৎপাদন খরচও অর্ধেক। দেশের এ প্রযুক্তি নিয়ে জাপান, থাইল্যান্ডসহ বেশ কয়েকটি দেশে গবেষণা চলছে।
তবে এখানকার কৃষকদের দাবি সরকারি সহযোগিতার পরিধি আরো বাড়ালে ফরমালিনমুক্ত ভাসমান সবজি চাষ করে আরো বেশি দেশের মানুষের সবজির চাহিদা পূরণ হতো এবং তারা আর্থিকভাবে আরো সচ্ছল হতে পারত।
সুত্রঃ risingbd.com/ কৃপ্র/ এম ইসলাম