কৃষি প্রতিক্ষণ ডেস্কঃ গত কয়েক বছর ধরে বাংলাদেশ ইনস্টিটিউট অব নিউক্লিয়ার এগ্রিকালচার (বিনা) উদ্ভাবিত বিনাধান-৭ রাজশাহীর বরেন্দ্র এলাকাসহ এ অঞ্চলের কৃষক ও ভোক্তাদের মধ্যে জনপ্রিয় হয়ে উঠেছে। নতুন উদ্ভাবিত এ জাতের ধান দারিদ্র মানুষের কর্মহীন সময়ে সমস্যা দূর করা ও খাদ্য নিরাপত্তার ক্ষেত্রে সম্ভাবনার দ্বার খুলে দিয়েছে।
সরকারি সূত্র জানায়, চলতি মৌসুমে এ অঞ্চলে ৮৫ হাজার হেক্টরেরও বেশি জমিতে বিনাধান-৭ আবাদ করা হয়েছে। যা ধান চাষের ক্ষেত্রে এক নতুন গতির সৃষ্টি হয়েছে। আগামী ৫ বছরের মধ্যে বিনা কর্তৃপক্ষ প্রায় তিন লাখ হেক্টর জমিতে এ জাতের ধান আবাদের জন্য কাজ করে যাচ্ছে।
বিনা’র মুখ্য বৈজ্ঞানিক কর্মকর্তা ড. আবুল কালাম আজাদ বলেন, বিনা-৭ জাতের ধান এ অঞ্চলে কৃষি ও অর্থনৈতিক ক্ষেত্রে বৈপ্লবিক পরিবর্তন নিয়ে আসবে। দেশে খাদ্যে স্বয়সম্পূর্ণতার জন্যও এটি সাহায্য করতে পারে।
তিনি বলেন, এটি স্বল্প সময়ের ও উচ্চ ফলনশীল জাতের ধান। ১১০ থেকে ১১৫ দিনের মধ্যে এ ধানের ফলন পাওয়া যায়। ফলে বিনাধান-৭ চাষের পরেও বোরো চাষের আগে কৃষক আলু, সরিষা, মটরশুটি, ডাল ও আগাম জাতের কিছু রবিশস্যের আবাদ করা যায়। এছাড়া স্বাদ ও গন্ধের দিক দিয়েও এ জাতের দান ভাল। তুলনামূলকভাবে অন্যান্য জাতের ধানের চেয়ে এ জাতের ধানের বাজারমূল্যও বেশি।
জানা গেছে, ২০০৭ সালের নভেম্বর মাসে বিনা ধান-৭ চাষের উদ্যোগ নেয়া হয়। গত বেশ কয়েক বছর ধরে এ অঞ্চলের কৃষকেরা এ ধান চাষ করছেন। চলতি বছর এখানে ৮৫ হাজার হেক্টর জমিতে চাষ করা হয়েছে। রাজশাহী, চাঁপাইনবাবগঞ্জ ও নওগাঁ জেলার শুষ্ক অঞ্চলে এ জাতের ধান চাষ করা হচ্ছে।
ড. আবুল কালাম আজাদ জানান, এ অঞ্চলে আগামী মৌসুম থেকে এ জাতের ধান চাষ সম্প্রসারণে ৫ বছর মেয়াদী মেগা পরিকল্পনা গ্রহণ করা হয়েছে। এ পরিকল্পনা সফলভাবে বাস্তবায়ন হরে এ অঞ্চলের অর্থনৈতিক অবস্থার ব্যাপক পরিবর্তন হবে।
তিনি জানান, বরেন্দ্র এলাকার কৃষি উৎপাদন বৃদ্ধি এবং প্রান্তিক ও দুস্থ পরিবারের আয় বৃদ্ধির লক্ষ্যে এ উদ্যোগ নেয়া হয়েছে। জলবায়ু পরিবর্তন মোকাবেলায় টেকসই প্রযুক্তি ব্যবহার, বহুমুখী আয়বর্ধক কার্যক্রম ও দক্ষতা উন্নয়নের মাধ্যমে এ উদ্যোগ সফল করা হবে।
বরেন্দ্র বহুমুখী উন্নয়ন কর্তৃপক্ষের উপ-প্রকল্প ব্যবস্থাপক এটিএম রফিকুল ইসলাম বলেন, জলবায়ু পরিবর্তন ও বিভিন্ন প্রাকৃতিক দুর্যোগ খাদ্য নিরাপত্তার জন্য গুরুতর হুমকি হয়ে দাঁড়িয়েছে। তাই দুর্যোগ-মুক্ত সময়ে বহুমুখী ও অধিক ফলনের কোন বিকল্প নেই।
এছাড়া দেশের ক্রমবর্ধমান জনসংখ্যা বৃদ্ধি ও জলবায়ু পরিবর্তনজনিত সমস্যায় খাদ্য নিরাপত্তা নিশ্চিত করার জন্য চাহিদা ভিত্তিক জাতের ধান উৎপাদনে টেকসই প্রযুক্তির ব্যবহার জরুরি বলেও তিনি উল্লেখ করেন।
তিনি বলেন, স্বল্প সময়ের ধান চাষাবাদে কৃষি-শ্রমিকদের জন্য কর্মসংস্থান সৃষ্টি হচ্ছে এবং একই জমিতে আলুসহ অন্যান্য আগাম সবজি চাষের মাধ্যমে আয়ের পথ সুগম হচ্ছে।
সুত্রঃ বাসস / কৃপ্র/ এম ইসলাম